দীর্ঘ ১১ মাস পর আবারও আমাদের দরজায় পৌছাইছে পবিত্র মাহে রমজান। রহমত, মাগফেরাত, নাজাত নিয়ে মুসলিম বান্দাদের আত্মা পূণ্যতায় পরিপূর্ণ করতে রমজান হাতছানি দিচ্ছে। বিশ্বের এই করোনা মহামারি থেকে রমজানের সময় মহান প্রভুর বিশেষ রহমত, দয়া, করুণা, ক্ষমার মাধ্যমে হতে পারে করোনার বিদায়।
১২ মাসের মধ্যে নিঃসন্দেহে রমজান মাস হলো অন্যতম পবিত্র মাস।তাকওয়া অর্জনের মাস হলো রমজান মাস। তাকওয়া অর্জনের নিমিত্তে যুগ যুগ ধরে প্রতিটি সম্প্রদায়ের উপর রোজা ফরজ ছিল।সিয়াম সাধনার মধ্যে অন্যায়, অত্যাচার, গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকবে।
তাকওয়া অর্জনের নিমিত্তে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সেহরী খেয়ে সারাদিন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য রোজা থেকে ইবাদত বন্দেগিতে মজগুল, কুরআন তেলোয়াত ও ভালো কাজের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় দিন। মাগরিবের আজানের সময় হলেই ইফতারের মাধ্যমে একটি রোজা পূর্ণ হয়।
বান্দার এই বিশাল ত্যাগের জন্য মহান প্রভু খুশি হয়ে রোজাদারের জন্য সুসংবাদ উল্লেখ করেছেন – “আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই; কিন্তু রোজা সতন্ত্র,তা আমার জন্য আমিই তার প্রতিদান দিব” (বুখারী শরীফ -১৯০৪)
মূলত সিয়াম শব্দটি এসেছে ‘সাওম’ থেকে যার অর্থ বিরত থাকা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় যেহেতু একজন মুসলিম রোজা অবস্থায় সকল মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে মহান প্রভুর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য তাই তাকে সাওম বলে।
এই মাসে যেহেতু সকল মন্দ কাজ, পাপাচার, অন্যায়, অত্যাচার, অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে তাই এই মাসকে প্রশিক্ষণ মাস বলা যায়।আত্মশুদ্ধি, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি গুন অর্জনের প্রত্যক্ষ প্রশিক্ষণ লাভ করা যায় রমজান পালনের মাধ্যমে।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন –
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকেদের প্রতি ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। ( সূরা আল বাক্বারাহ আয়াত (১৮৩)
সিয়াম সাধনা এমন একটি ইবাদত যা পূর্ববর্তী সকল নবী ও রাসূলের আমলে ফরজ ছিল। আল্লাহ তায়ালা যুগ যুগ ধরে রোজার বিধান আবশ্যক ছিল। সকল যুগে আল্লাহ তায়ালা সিয়াম সাধনার মধ্যে দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন পূর্ববর্তী জাতিদের।
এই সিয়াম সাধনার মধ্যে দিয়ে আমরা যে সংযম,উত্তম আচারণ,ইবাদতে মশগুল,মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকি এবং ভালো কাজের প্রতিযোগিতা ও মন মানসিকতা রাখি। এই ধারা অব্যাহত রেখে আগামীতে যত বছর জীবিত থাকি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য উক্ত কাজগুলো চলমান রাখাই পবিত্র মাহে রমজানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে।
প্রকৃত ব্যাক্তি এই কাজের মধ্যে দিয়ে আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম, আত্মসমর্পণ, আত্মসংশোধনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে।
সত্যিকার সিয়াম সাধনার মধ্যে দিয়ে সমাজ থেকে সকল অন্যায়,অত্যাচার, বৈশম্য,সন্ত্রাস দূরীভূত হয়।গোটা মানবজীবনে সামগ্রিক মুক্তির নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।
এই মাসে নাজিল মহাগন্থ পবিত্র আল কুরআন। যা সমস্ত মানবজাতির জন্য পথ প্রদর্শক।একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মানে আল কুরআনের দিক নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে কুরআন নাজিলের মাসে এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
পাশাপাশি কুরআনের আলোকে করনীয় নির্ধারন ও বর্জনীয় নির্ধারণ করে আমাদের উত্তমভাবে আগামীর পথচলা এগিয়ে যাওয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সিয়াম সাধনা করার তৌফিক দান করুন।