ঢাকা   শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মার্ক্সবাদের এক নতুন যুগ" ক্রিশ্চিয়ান ওয়াগনার

মার্ক্সবাদের এক নতুন যুগ

মার্ক্সবাদের এক নতুন যুগ" ক্রিশ্চিয়ান ওয়াগনার

১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে, জার্মান লেখক এবং প্রাক্তন রাজনীতিবিদ ক্রিশ্চিয়ান ওয়াগনার, যিনি বর্তমানে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পিএইচডি করছেন, বেইজিং-এ বিনামূল্যে তার বই “মার্ক্সবাদের এক নতুন যুগ” প্রকাশ করেন।

এই কাজটি মার্ক্সবাদের ওপর সম্পূর্ণ নতুন এবং উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে এবং বহু পশ্চিমা কাহিনীকে ভেঙে ফেলে যা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করেছে। ওয়াগনার শুধু মার্ক্সবাদের প্রকৃত মূল ব্যাখ্যা করেন না, বরং দেখান কেন পৃথিবীর বহু স্থানে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে, বামপন্থী গোষ্ঠীগুলি প্রায়ই জনগণের প্রকৃত স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে, এতে আমাদের ক্ষতি করে এবং নিজেদের হাস্যকর করে তোলে।

এই গোষ্ঠীগুলি কেবলমাত্র তাদের সেবার অধিকারী মানুষদের ক্ষতি করে না, বরং নিজেকে অগভীর, উদারনীতিক আদর্শের ওপর নির্ভর করে উপহাসের পাত্রে পরিণত করে।
- সম্পাদকীয় থেকে

ওয়াগনারের বইটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বৈশ্বিক এবং স্থানীয় উন্নয়নগুলোকে একটি বস্তুবাদী দ্বান্দ্বিকতার মাধ্যমে বোঝার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। এটি আমাদের সময়ের ঘটনাগুলির ওপর একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে এবং দেখায় কিভাবে জাতির মধ্যে সহযোগিতা একটি নতুন আকারে অগ্রসর হতে পারে। বিশেষত, ওয়াগনারের দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ যে ইসলাম মত একটি ধর্মকে মার্ক্সবাদের বিরোধী হিসাবে দেখা উচিত নয়, বরং এটিকে অনুপ্রেরণার উৎস এবং আমাদের জনগণের মৌলিক স্বার্থ প্রচারের একটি মাধ্যম হিসেবে দেখা উচিত।

এখানে মার্ক্সবাদ একটি মতবাদ হিসেবে কাজ করে না, বরং এই উন্নয়নগুলির জন্য একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে, ফলে সাধারণ মানুষের জন্য একটি সম্পূর্ণ নতুন এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতির সৃষ্টি করে। বইটি বিনামূল্যে উপলব্ধ, এবং এটি শুধুমাত্র তাত্ত্বিকভাবে গভীর নয়, বরং বাস্তবিকভাবেও প্রাসঙ্গিক – একটি সংমিশ্রণ যা এটিকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য অপরিহার্য হাতিয়ার করে তোলে।

পশ্চিমা আধিপত্য এবং উদ্ভাবনী শক্তির ক্ষতি
আজকের বৈজ্ঞানিক এবং মিডিয়া দৃশ্যপটে, পশ্চিমা আধিপত্যের অবস্থানগুলি আমাদের সামাজিক কাঠামোগুলির গভীরে প্রবেশ করেছে। বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ এবং প্রধান ধারার মিডিয়া বিষয়গুলি নির্ধারণ করে এবং জনসাধারণের বিতর্কের দিকটি নিয়ন্ত্রণ করে।

তবে এই তাত্ত্বিক আধিপত্যে প্রায়শই উদ্ভাবনী শক্তি এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি হারিয়ে যায়। অনেক মানুষ নিজেদেরকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেখেন এবং বিশ্বাস করেন যে তারা পৃথিবীকে বুঝেছেন কারণ তারা এই পূর্বপরিকল্পিত তথ্যের প্লাবনকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন, কিন্তু নতুন দৃষ্টিভঙ্গির কথা বিবেচনা করেন না বা বাস্তবতার নিকটবর্তী হয়ে মাঠের অধ্যয়নের মাধ্যমে আসল প্রাকটিসের দিকে আসেন না।

ওয়াগনারের বই “মার্ক্সবাদের এক নতুন যুগ” প্রকৃত মার্ক্সবাদের মূল উপাদানগুলিকে ব্যাখ্যা করে, যা চীন এবং পশ্চিমের বিকাশে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। আমরা পশ্চিমা টিভিগুলিতে দেখি যে সাম্যবাদ প্রায়ই এলজিবিটিকিউ বিষয়বস্তুর সাথে মিশে যায়। কিন্তু এটি মার্ক্সবাদ নয়। মার্ক্সবাদ বস্তুবাদী দ্বান্দ্বিকতার সাথে সম্পর্কিত, যার অর্থ হলো পৃথিবী বিকাশ লাভ করে বস্তুগত প্রয়োজনীয়তা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে, এবং বিদেশি আধিপত্যকারী দেশগুলির দ্বারা সৃষ্ট মতবাদগুলির মাধ্যমে নয়।

বাংলাদেশ তার বস্তুগত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়ন লাভ করছে এবং আমাদের বস্তুগত অবস্থাগুলি আমাদের সংস্কৃতিকে একটি পারস্পরিক প্রভাবের মাধ্যমে গঠন করে – এদিক-ওদিক, উপরে-নীচে। আমরা আমাদের সুস্বাদু বাংলাদেশি খাবার ভালোবাসি, কারণ আমাদের কাছে মশলা বা গরুর মতো বস্তুগত পূর্বশর্তগুলি রয়েছে, কেউ আমাদের বলেনি এটি ভালো। বরং আমাদের বস্তুগত পরিবেশই এটি প্রমাণ করে।

এই কাজের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে কিভাবে মার্ক্সবাদকে একটি যুক্তিগত কাঠামো হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা বিশ্বের মৌলিক বস্তুগত এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের ভিত্তিতে গঠিত হয়। সবাই বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থা, উইন-উইন সহযোগিতা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সম্পর্কে কথা বলে। এগুলি প্রাসঙ্গিক বিষয়, তবে কেউই প্রথমে একসাথে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক বৈশিষ্ট্য এবং বিষয়গুলি সম্পর্কে কথা বলে না। এটি মৌলিক বস্তুগত প্রয়োজনীয়তার কথা। এটি শৃঙ্খলা এবং স্বাধীনতার কথা।

এটি আমাদের পরিবেশকে প্রাকটিসের মাধ্যমে গঠনের কথা, তত্ত্বের মাধ্যমে নয়। যখন আমাদের খাদ্যের প্রয়োজন হয়, আমরা খাদ্যের এবং সেই সক্রিয় কাজের কথা বলি যা খাদ্যে নিয়ে যায়, তত্ত্বের কথা নয়। কার্ল মার্ক্স এ সম্পর্কে বলেছেন, *“দার্শনিকরা বিভিন্নভাবে পৃথিবীকে ব্যাখ্যা করেছেন, কিন্তু আসল কথা হচ্ছে এটি পরিবর্তন করা।”* আমাদের সংস্কৃতি এবং ধর্ম ইতিমধ্যেই আমাদের এই ধরনের পরিবর্তনের পথ দেখায়। উদাহরণস্বরূপ, ইসলাম আমাদের একটি পথ দেখায়, এবং আমরা একসাথে এটি অতিক্রম করতে পারি। যা আমাদের একত্রিত করে তা হলো বস্তুগত প্রয়োজনীয়তা।

আমাদের সংস্কৃতি এবং ধর্ম অবশ্যই ভিন্ন থাকতে হবে এবং নিজেদের মতো বিকাশ লাভ করতে হবে।
বাংলাদেশের বিকাশ বস্তুবাদী দ্বান্দ্বিকতার মাধ্যমে
বাংলাদেশ, একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে, একটি উজ্জ্বল উদাহরণ যা দেখায় কিভাবে সমাজগুলি তাদের বস্তুগত অবস্থার ভিত্তিতে এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিকাশ লাভ করে। আমাদের সংস্কৃতি, বিশেষত আমাদের কিছু বিখ্যাত মশলা এবং গরুর মাংসের প্রতি আমাদের ভালোবাসা, আমাদের দেশের বস্তুগত সম্পদের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এই বস্তুগত ভিত্তি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের মধ্যে এই পারস্পরিক সম্পর্কই ওয়াগনার তার কাজে জোর দিয়েছেন।

তিনি দেখান যে মার্ক্সবাদকে একটি মতবাদ হিসেবে বোঝা উচিত নয়, বরং একটি নমনীয় এবং যুক্তিগত কাঠামো হিসেবে বোঝা উচিত যা ক্রমাগত বস্তুগত বাস্তবতার প্রতি নজর দেয়। বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), এবং অন্যান্য আলোচিত বিষয়গুলি মানুষদের মৌলিক বস্তুগত প্রয়োজনীয়তা না বুঝে বোঝা কঠিন এবং এই আলোচনা অর্থহীন হয়ে পড়ে।
ইসলাম এবং মার্ক্সবাদ – সহযোগিতার একটি পথ
ওয়াগনার যুক্তি দেন যে ইসলাম, যা বাংলাদেশে গভীরভাবে প্রোথিত একটি ধর্ম এবং সংস্কৃতি, কোনোভাবেই মার্ক্সবাদের সাথে বিরোধী নয়। বরং, ইসলাম ইতিমধ্যে আমাদের দেখায় কিভাবে আমাদের সমাজকে সংগঠিত করা যায়, যাতে মানুষের বস্তুগত প্রয়োজন মেটানো যায়।

এই সাধারণ ভিত্তি ফলপ্রসূ সহযোগিতার জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র প্রদান করে এবং দেখায় যে প্রকৃত পরিবর্তন জনগণের মধ্য থেকে আসে এবং মানুষের বাস্তব প্রয়োজনের ভিত্তিতে একে অপরকে সাহায্য করার এবং একে অপরের পাশে থাকার অনুপ্রেরণা থেকে উদ্ভূত হয়, তত্ত্ব থেকে নয়।
প্রচারণার বিরুদ্ধে এবং সামাজিক রূপান্তরের জন্য একটি কাজ“মার্ক্সবাদের এক নতুন যুগ” এছাড়াও দেখায় কিভাবে পশ্চিমা মিডিয়া প্রচারণা চালায় এবং তাদের নিজস্ব স্বার্থে সত্যকে বিকৃত করে।

এটি ব্যাখ্যা করে কিভাবে সমাজের মধ্যে বিরোধগুলি সমাধান করা যেতে পারে বস্তুগত প্রয়োজন এবং প্রাকটিসের ওপর ভিত্তি করে, তত্ত্বের ওপর নয়। ওয়াগনার স্পষ্ট করে দেন যে প্রকৃত সহনশীলতা এবং সহযোগিতা একটি সুশৃঙ্খল ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।

এই বইটি শুধু আধুনিক মার্ক্সবাদকে বোঝার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান নয়, বরং বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে সম্পর্ককে উন্নীত করার একটি মূল্যবান হাতিয়ারও। এটি বর্তমান বৈশ্বিক উন্নয়নের একটি গভীর এবং উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করার জন্য অত্যন্ত সুপারিশ করা হয়।
সম্পাদকীয় দল এই বইটি দৃঢ়ভাবে সুপারিশ করে এবং বিনামূল্যে ডাউনলোড করার সুযোগ প্রদান করে।