ঢাকা   বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নয়াচীনের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও প্রসঙ্গকথা

প্রবাস

বিডিটোন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:০২, ১ অক্টোবর ২০২৪

নয়াচীনের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও প্রসঙ্গকথা

নয়াচীনের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও প্রসঙ্গকথা

নয়াচীনের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও প্রসঙ্গকথা
বেইজিং থেকে আলিমুল হক চীনের ইতিহাস ৫ হাজার বছরের। তবে, নয়াচীন তথা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ইতিহাস সে তুলনায় খুবই হ্রস। চলতি বছরের পয়লা অক্টোবর হচ্ছে নয়াচীন প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী।

শুধু প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বা উন্নয়নের প্রশ্ন উঠলেই সাধারণত ‘নয়াচীন’ শব্দটা ব্যবহার করা হয় বা করতে হয়। তা না-হলে, চীন তো চীনই! পয়লা অক্টোবর চীনের জাতীয় দিবস।

১৯৪৯ সালের পয়লা অক্টোবর, বেইজিংয়ের থিয়ানআনমেন মহাচত্বর থেকে (বলা হয়, এটি বিশ্বের বৃহত্তম চত্বর), গণপ্রজাতন্ত্রী চীন তথা নয়াচীন প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান মাও সে তুং। আগেই বলেছি, চীনের ইতিহাস ৫ হাজার বছরের। তবে, মাও সে তুং এক নতুন চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেদিন পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন রূপে, নতুন গৌরবে চীন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল; অবসান ঘটেছিল হাজার হাজার বছরের প্রাচীন চীনে, শত বছরের বিদেশি আগ্রাসন ও অপশাসনের।

বলাবাহুল্য, জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং পরবর্তীকালের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়েছিল চীন। তাই, নয়াচীনকে পুনরায় গোড়া থেকে যাত্রা শুরু করতে হয়েছিল। এই যাত্রাপথ ছিল খুবই কঠিন। নানান চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে, নয়াচীনকে আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে হয়েছে।
শুরুতে নয়াচীনের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কোটি কোটি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা; তাদের অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, ও শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যেই চীন সামনে এগিয়েছে; মাত্র সাত দশকে অর্জন করেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। চীনের এই সাত দশকের (সুনির্দিষ্টভাবে বললে, সাড়ে সাত দশকের) অর্জন সত্যিই বিস্ময়কর। ভাবলে, এখনও অবাক হতে হয়।

বিগত সাত দশকে চীনে বিশাল ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে চীন অর্জন করেছে অভূতপূর্ব উন্নয়ন। এ কথা সত্য যে, প্রাচীন চীনও সমৃদ্ধ ছিল। তবে, ১৯৪৯ সালের নয়াচীনের জন্য সে কথা প্রযোজ্য ছিল না। তখন দেশটি ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত, দুর্বল, গরীব, ও পশ্চাৎপদ কৃষিপ্রধান দেশ। সেই অবস্থা থেকে দেশটির বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়াকে ‘অলৌকিক ঘটনা’ বলা বোধ করি অতিরঞ্জন নয়। এই বিশাল অর্জন সম্ভব হয়েছে সঠিক নেতৃত্ব ও চীনা জনগণের কঠোর পরিশ্রমের ফলে।

১৯৪৯ সালের পর চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন-প্রক্রিয়াকে মোটাদাগে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্যায়টি ছিল ১৯৪৯ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। আর, দ্বিতীয় পর্যায়টি শুরু হয় ১৯৭৮ সালের শেষের দিকে, যা এখনও চলছে। প্রথম পর্যায়ে, মানে ১৯৪৯ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত, চীন পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে উন্নত হবার চেষ্টা করে। তখন চীনের লক্ষ্য ছিল শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা।

কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, সে-পথে চীনের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি। এমনি এক প্রেক্ষাপটে, ১৯৭৮ সালের শেষ দিকে, চীনের তত্কালীন শীর্ষনেতা তেং সিয়াও পিং, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য, ‘সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি’ গ্রহণের ঘোষণা দেন। তখন থেকেই চীন ‘সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি’ অনুসরণ করতে শুরু করে এবং বিশ্বের সামনে ধীরে ধীরে নিজেকে, নিজের অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করতে থাকে।

একটি সমাজতান্ত্রিক দেশে ‘বাজার অর্থনীতি’ কীভাবে কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে? এমন প্রশ্ন তখন উঠেছিল। অনেকেই ছিলেন সন্দিহান। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ তো স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, এই নতুন ‘এক্সপেরিমেন্ট’ ব্যর্থ হবে এবং চীন মহাসঙ্কটে পড়ে যাবে। বাস্তবে কিন্তু ঘটে উল্টোটাই! সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি চীনকে বদলে দেয় আমূল। চীন নতুন এক্সপেরিমেন্টে, নতুন ব্যবস্থায় যে অগ্রগতি অর্জন করে, তা ইতিহাসে বিরল।

১৯৭৮ সালের পর, পরবর্তী প্রায় তিন দশক ধরে, চীনের অর্থনীতি বছরে গড়ে ১০ শতাংশ করে বৃদ্ধি পায়। যার ফলেই চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। শুধু দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে শীর্ষে পৌঁছে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি চীনের সরকার; ১৪০ কোটি চীনাকে দারিদ্র্যের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে বাস্তবায়ন করে বিশাল পরিকল্পনা। ফলে সাত দশকে, আরও নির্দিষ্টভাবে বললে ২০২০ সাল শেষ হওয়ার আগেই, চীনের প্রায় ৮০ কোটি মানুষ হতদরিদ্রমুক্ত হয়। এটা যে কতো বড় অর্জন, তা বুঝতে দারিদ্র্যবিমোচন খাতে জাতিসংঘের লক্ষ্যমাত্রার দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে।

জাতিসংঘের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে মোটাদাগে হতদরিদ্রমুক্ত করা। অথচ চীন, তখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের দেশ (বর্তমানে ভারত জনসংখ্যার দিক দিয়ে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে), নিজেকে হতদরিদ্রমুক্ত করতে ১০ বছর কম সময় নেয়! আবার, ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের লক্ষ্যমাত্রা আদৌ অর্জিত হবে কি না, সেটাও কিন্তু একটা প্রশ্ন।

বস্তুত, শুধু দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রেই চীন বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে, তা নয়; জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতেও এখন চীন অনেক অনেকদূর এগিয়েছে; এগিয়েছে সামাজিক উন্নয়নের পথেও। চীনের শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসাব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা-ব্যবস্থা পৌঁছে গেছে বিশ্বমানে। সমাজের প্রায় শতভাগ মানুষ এসেছে চিকিত্সা-বীমার আওতায়। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৩৫ বছর, যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮.৬ বছরে। গোটা চীনজুড়ে যোগাযোগ-ব্যবস্থার ঘটেছে অভূতপূর্ব উন্নয়ন। দ্রুতগতির রেলের মতো কোনো কোনো ক্ষেত্রে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও চীনের কাছাকাছি পর্যায়ে নেই!

এতোসব অর্জনের পরও চীন, চীনের সরকার বসে নেই। বর্তমানে দেশটি নতুন এক পর্যায় (অন্যভাবে বললে, দ্বিতীয় পর্যায়ের নতুন একটি উপ-পর্যায়) অতিক্রম করছে। এখন দেশটি দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরিবর্তে, উচ্চমানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে সামনে এগুচ্ছে। চীনের সরকার এখন আর আগের মতো স্রেফ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। ২০২০ সালে, মহামারির প্রেক্ষাপটে, প্রথমবারের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য স্থির না-করে সেটা প্রমাণ করে সরকার। চীন এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন নতুন চালিকাশক্তির সন্ধানেও আছে।

নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর, শুরুতে এই দেশে স্বাভাবিকভাবেই পরিকল্পিত অর্থনীতি ছিল। সে-পর্যায়ে চীন মূলত উন্নয়নের সোভিয়েত মডেল অনুসরণ করে। তখন চীনের লক্ষ্য ছিল ভারী শিল্প গড়ে তোলা এবং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা। সেই মডেল একটি উন্নয়নশীল দেশকে দ্রুত আধুনিক শিল্প-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে সক্ষম হলেও, এর অনেক সীমাবদ্ধতাও আছে। চীনও এই মডেল অনুসরণ করে তুলনামূলকভাবে সম্পূর্ণ আধুনিক শিল্প-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পেরেছিল।

কিন্তু, সে-ব্যবস্থা চীনের তুলনামূলকভাবে নিম্ন মাথাপিছু আয়ের সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। ১৯৪৯ সালে নয়াচীন প্রতিষ্ঠার সময়, শহর ও গ্রামের দ্বৈত সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে, গ্রামাঞ্চলের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিল। এর কয়েক বছর পর, ১৯৫২ সালে, চীনের মাথাপিছু জিডিপি ছিল মাত্র ১১৯ ইউয়ান (বর্তমান বিনিময় হার ধরলেও মাত্র ১৬ মার্কিন ডলার)। অর্থনীতির সোভিয়েত মডেল জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়াতে পারেনি। ফলে, তাদের জীবনমান অনুন্নতই থেকে যায়।

এ কারণেই, ১৯৭৮ সালের শেষের দিকে, বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে, পরিকল্পিত অর্থনীতি থেকে ‘বাজার অর্থনীতি’র দেশে রূপান্তরিত হবার পথে পা রাখে চীন। সে-সময় বিশ্বে ‘নিওলিবারেল ডেভেলপমেন্ট থিওরি’ প্রচলিত ছিল। কিন্তু চীনের নেতৃবৃন্দ সেই থিওরি গ্রহণ করেননি। তাঁরা দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি গ্রহণ করেন। এই নীতির আওতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয় এবং সেসব অঞ্চলের প্রাধান্য কাজে লাগানো শুরু হয়। পাশাপাশি, ব্যবসা-পরিবেশ উন্নয়নের দিকেও নজর দেয় সরকার।

বিংশ শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকেও বিশ্বে নিওলিবারেলিজম বহাল তবিয়তে ছিল। নিওলিবারেল অর্থনীতিবিদরা তথাকথিত ‘শক থেরাপি’-র পক্ষে ছিলেন। তাদের মতে, একমাত্র এই থেরাপির মাধ্যমেই একটি পরিকল্পিত অর্থনীতিকে ‘বাজার-অর্থনীতি’-তে রূপান্তরিত করা সম্ভব। তাদের কেউ কেউ এও বলতে থাকেন যে, চীনের গৃহীত বিশেষ অর্থনৈতিক-পদ্ধতি, যাতে সরকার ও বাজার—উভয়ের ভূমিকা আছে, দেশের জন্য আরও বেশি সমস্যা ডেকে আনবে। কিন্তু, বাস্তবে তাদের সে-ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়।

চীন চার দশক ধরে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতান্ত্রিক ‘বাজার অর্থনীতি’ অনুসরণ করে, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়। এক্ষেত্রে চীন যা অর্জন করেছে, তা অর্জন করতে উন্নত দেশগুলোর লেগেছে শত শত বছর। চীনের এই অর্জন ছিল অভূতপূর্ব, বিশ্ব-কাঁপানো। গোটা সময়কালটা ধরে চীন সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ গভীর থেকে গভীরতর করার নীতিও অনুসরণ করে গেছে।

এরই ধারাবাহিকতায়, ২০১৩ সালে অষ্টাদশ সিপিসি (চীনা কমিউনিস্ট পার্টি) কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে, সংস্কার-প্রক্রিয়া সার্বিকভাবে গভীরতর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সম্পদের বণ্টনের ক্ষেত্রে বাজারের ভূমিকা বাড়ানো এবং সরকারের ভূমিকা উন্নত করার কথা বলা হয়। পরে, ঊনবিংশ সিপিসি জাতীয় কংগ্রেসের রিপোর্টেও জোর দিয়ে বলা হয় যে, সম্পদের বণ্টনের ক্ষেত্রে বাজারকে নিষ্পত্তিমূলক ভূমিকা পালন করতে দিতে হবে এবং সরকারের ভূমিকাও আরও উন্নত করতে হবে।

বর্তমানে চীন তথা বিশ্ব ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চীনের সামনে উন্নয়নের সুযোগ যেমন এন্তার, তেমনি চ্যালেঞ্জও অনেক। চীনের অর্থনীতি বর্তমানে ‘নিউ নর্মাল’ বা ‘নতুন স্বাভাবিক’ অবস্থায় প্রবেশ করেছে। এই অবস্থায় ‘কার্যকর বাজার’ ও ‘দায়িত্বশীল সরকার’-কে পূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এই কথা সত্য যে, কোভিড মহামারি, ইউক্রেন সংকট, ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে, অন্যান্য দেশের মতো চীনের অর্থনীতিও বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। কিন্তু এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই দেশটি এগিয়ে চলেছে। ২০২০ সালের মধ্যে মধ্যমমানের সচ্ছল সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাস্তবায়নে সক্ষম হয়েছে চীন। এখন ‘সমাজতান্ত্রিক আধুনিক সচ্ছল সমাজ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে দেশটির সরকার ও জনগণ। এই লক্ষ্যও শেষ পর্যন্ত অর্জিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন। এমন বিশ্লেষকের মধ্যে যেমন চীনারা আছেন, তেমনি আছেন বিদেশিরাও।

নয়াচীনের অভূতপূর্ব উন্নতির প্রেক্ষাপটে, কেউ কেউ আজকাল একটি প্রশ্ন তুলছেন। প্রশ্নটি হচ্ছে: উন্নয়নশীল দেশগুলো কি উন্নয়নের ‘চীনা মডেল’ অনুসরণ করতে পারে? বর্তমানে উন্নয়নের যেসব তত্ত্ব ও মডেল প্রচলিত আছে, সেগুলো সবই উন্নত দেশগুলোয় সৃষ্ট। কোনো কোনো উন্নয়নশীল দেশ সেসবের ভিত্তিতে নিজস্ব উন্নয়ন ও সংস্কার নীতিমালা গ্রহণ করেছে। কিন্তু, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকাংশই উন্নত বিশ্বের মডেল অনুসরণ করে, নিজেদের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। উল্টো কোনো কোনো দেশের সমস্যা বেড়েছে।

দৃশ্যত, তাদের সকল নীতি উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিকেই বেশি পুষ্টি যুগিয়েছে। এ অবস্থায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ‘চীনা মডেল’ হতে পারে পরীক্ষিত বিকল্প।

আগেই বলেছি, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, ৩০ বছর ধরে নয়াচীন অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশ কর্তৃক গৃহীত উন্নয়নের পথই মূলত অনুসরণ করে আসছিল। কিন্তু সেই পথ চীনের সমস্যা সমাধানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। অথচ, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি তথা ‘সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি’ গ্রহণের পর, মাত্র চল্লিশ বছরে, চীন অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করে। ইতিহাসে এতো অল্প সময়ে এতো বেশি উন্নয়নের উদাহরণ আর নেই। এই উন্নয়নকে আধুনিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না; চীনের অর্জনকে ব্যাখ্যা করতে এখন নতুন তত্ত্ব প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলেই মনে হচ্ছে।

চীন ১৪০ কোটি জনসংখ্যার বড় দেশ, যেটি এখনও উন্নয়নশীলই রয়ে গেছে। ফলে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে চীনের অনেক মিল আছে। এ অবস্থায়, উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নয়নের ‘চীনা মডেল’ বা ‘চীনা তত্ত্ব’ ব্যবহার করতেই পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উন্নয়নের ‘চীনা মডেল’, উন্নত বিশ্বে সৃষ্ট মডেল বা তত্ত্বের চেয়ে অধিক কার্যকর প্রমাণিত হবে—এমনটা বিশ্বাস করেন অনেকেই।