পানীয় দ্রব্যের মধ্যে কফি পৃথিবীখ্যাত এবং জনপ্রিয়। পৃথিবীতে নানা পদের কফি পাওয়া যায়। স্বাদে-গন্ধে সেগুলো যেমন একটি অন্যটি থেকে আলাদা, তেমনি দামের দিক দিয়েও পার্থক্য বিস্তর। আবার সব কফির উৎপাদন প্রক্রিয়া একই রকম নয়। কিছু কফির উৎপাদন প্রক্রিয়া ও দাম এতটাই অদ্ভুত যে বিস্মিত হতে হয়! লুয়াক এমনই এক কফি।
লুয়াক কফির বীজ চাষ হয় ইন্দোনেশিয়ায়। তবে চাষের পরেই অন্য কফির মতো এই বীজ থেকে কফি বিন পাওয়া যায় না। কারণ এই কফির বীজ ফার্মেন্টেশনের জন্য যে রাসায়নিক উপাদন প্রয়োজন তা কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সম্ভব নয়। পাম সিভেট নামক এক ধরনের প্রাণীর পাকস্থলিতে এই রাসায়নিক পাওয়া যায়।
লুয়াক পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কফি। উৎপাদন প্রক্রিয়া, স্বাদে-গন্ধে এবং দামে এটি পৃথিবীর অন্য কফির চেয়ে একেবারে আলাদা। এর উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সাধারণ কফির তুলনায় অনেক বেশি। এক কাপ লুয়াক কফির দাম বাংলাদেশি টাকায় ৩ হাজার থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যেখানে বিশ্ববাজারে এক কাপ ভালো মানের কফির দাম দুই থেকে পাঁচ ডলারের মধ্যে।
লুয়াক ফলের বীজ গন্ধগোকুল হজম করতে পারে না। ফলে এই বীজগুলো তাদের খাওয়ানো হয়। এরপর বীজগুলো গন্ধগোকুলের পাকস্থলিতে গিয়ে একপ্রকার এনজাইমের (প্রাণীর দেহকোষে উৎপন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থ বিশেষ) সঙ্গে মিশে যায়। ৮-১২ ঘণ্টা বীজগুলো গন্ধগোকুলের পেটের মধ্যে থাকে। এর ফলে বীজে যোগ হয় ক্যারামেলের ফ্লেভার। এটি এক প্রকার সুগন্ধী। তাছাড়া পরিপাকের ফলে বীজে বিদ্যমান এসিডের মাত্রাও কমে যায়। আর এভাবেই লুয়াক-এর স্বাদ এবং ঘ্রাণ বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
পাম সিভেট আমাদের দেশে গন্ধগকুল বা খাটাশ নামে পরিচিত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং সাহারা মরুভূমি এলাকায় এদের দেখা যায়। তবে লুয়াক উৎপাদনের জন্য ইন্দোনেশিয়ায় এখন প্রচুর গন্ধগোকুল পালন করা হচ্ছে।
গন্ধগোকুলের মলের সঙ্গে সেগুলো বেরিয়ে আসে। মল থেকে বীজগুলো আলাদা করা হয়। এরপর বাছাই করা বীজ থেকেই তৈরি হয় লুয়াক কফি।
বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর লুয়াক কফি উৎপাদন হয় ৩০০ কেজি থেকে ৫০০ কেজি। যেখানে সাধারণ কফি প্রতিবছর উৎপাদন হয় প্রায় ৯০০ মিলিয়ন টনেরও বেশি! ফলে বরাবরই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থেকে যায় এই কফি। সাধারণত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অভিজাত হোটেলগুলোতে চড়া দামে এই কফি বিক্রি হয়।