ঢাকা   বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উচ্চ ফলনশীল ধান: বদলে দিচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি

কৃষিবার্তা

বিডিটোন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৫৫, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৮:৫৬, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

উচ্চ ফলনশীল ধান: বদলে দিচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি

উচ্চ ফলনশীল ধান: বদলে দিচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি

ধান চাষ বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবিকা ও জীবনমান সরাসরি ধান উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষাবাদ কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। আধুনিক জাতের এই ধান শুধু কৃষকদের আয়ের উৎস বাড়িয়েছে তা নয়, বরং গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে।

উন্নত প্রযুক্তি এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের চাষে কৃষি উৎপাদন বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ, যা কৃষকের জীবনে সুখ ও স্বচ্ছলতার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। উচ্চ ফলনশীল ধানের কারণে রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।

কৃষকরা জানান, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) -এর প্রদর্শনী থেকে তারা নতুন জাতের ধান চাষের কৌশল সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছেন, যা তাদের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কৃষকরা আরও বলেন, ইরি-এর মতো প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে এবং কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া  উপজেলার দক্ষিণ পানাপুকুর  গ্রামে, দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর  উপজেলার দুর্গাপুর  গ্রামে  ও বিরল  উপজেলার বিষ্ণুপুর  গ্রামে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) এর তত্ত্বাবধানে কম সময়ে অধিক ফলন ও রোগ- বালাইমুক্ত ইরি-এগ্রো প্রকল্পের প্রদর্শনী চাষের নমুনা শস্য কর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার  (১৯ নভেম্বর) দিনের শুরুতে গঙ্গাচড়া  উপজেলার দক্ষিণ পানাপুকুর  গ্রামে  স্থানীয় কৃষক  মশিউর রহমানের জমিতে নমুনা শস্য কর্তন সম্পন্ন করা হয়।

বুধবার (২০ নভেম্বর)  দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর  উপজেলার দুর্গাপুর  গ্রামে  স্থানীয় কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক ও বিরল  উপজেলার বিষ্ণুপুর  গ্রামে হামিদুর রহমানের   জমিতে নমুনা শস্য কর্তন সম্পন্ন করা হয়। কৃষক গণ  ব্রি ধান ৩৪, ব্রি ধান ৮০,  ব্রি ধান ৭০ , ব্রি ধান ৯০ ধানের জাত পছন্দ করেন এবং আগামী মৌসুমে অধিক জমিতে চাষাবাদ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

চিরিরবন্দর  উপজেলার দুর্গাপুর  গ্রামের স্থানীয় কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, "উন্নত জাতের ধানের চাষ দিনাজপুরের কৃষকদের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিচ্ছে। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে জেলার কৃষি উৎপাদন আরও বাড়বে।" তবে, কিছু চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে। পানি সংকট এবং সারের মূল্যবৃদ্ধি কৃষকদের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) এর অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও এগ্রিবিজনেস এডুকেশন এন্ড রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল https://www.agribusinessedu.com এর সহযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে জলবায়ু উপযোগী আধুনিক উচ্চ ফলনশীল (উফসি) জাতের কম সময়ে অধিক ফলন, রোগবালাই মুক্ত পাঁচ (০৫) ধরনের ধান জাতের হেড টু হেড প্রদর্শনী করা হয়। এসব ধানের জীবনকাল ১২৫ থেকে ১৪০ দিন। 

আন্তজার্তিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) এর বাস্তবায়নাধীন নমুনা শস্য কর্তন অনুষ্ঠানে উপজেলার সংশ্লিষ্ট ব্লকের স্থানীয় কৃষক, এগ্রিবিজনেস এডুকেশন এন্ড রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল এর প্রজেক্ট অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসেন , প্রদর্শনী জমির কৃষকগণ সহ সংশ্লিষ্ট উপজেলার বিভিন্ন এলাকার এলাকার বিপুল সংখ্যক কৃষকগণ উপস্থিত ছিলেন ।

উপস্থিত কৃষকরা আন্তজার্তিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এই উদ্যোগ তাদের চাষাবাদে নতুন ধারা নিয়ে এসেছে। এটি শুধু ফসল উৎপাদন বাড়াচ্ছে না, বরং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে। তবে এই সাফল্য ধরে রাখতে কৃষি খাতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা জরুরি।