এই বছরের ৫ দফা ভয়াবহ বন্যায় রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলার কৃষি খাত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কৃষকরা কখনো ভাবতেও পারেননি বন্যা এত দীর্ঘমেয়াদী হবে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন আমন চাষিরা। মাঠ ভরা সবুজের সমাহার দেখে দুমাস পরেই গোলায় নতুন ধান তোলার স্বপ্ন দেখছিলেন তারা। তাদের এই সুখের স্বপ্ন নিমিষেই ভেঙে দিয়েছে টানা বর্ষণ ও বন্যার পানি। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের মালেক উদ্দিন জানান, বন্যায় তার ৩ বিঘা জমির আমন ধান পঁচে গেছে।
একই উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের ফারুক হোসেন জানান, এ বছর বন্যায় তার ৭ বিঘা জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে। এই ধানের আবাদ পঁচে যাওয়ার কারণে আগামীতে গোখাদ্য সংকট দেখা যাবে বলে শংকা করছেন তিনি। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বন্যার পানিতে গাইবান্ধা জেলার ৭ উপজেলায় প্রায় ৭১ হাজার কৃষকের ৫,৩৫০ হেক্টর জমির রোপা আমনসহ ৬৫০ হেক্টর শাকসবজি ও মাস কালাই বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় সম্পুর্ন নষ্ট হয়েছে। ফসলের ক্ষতির অর্থিক পরিমাণ ধারণা করা হয়েছে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা।
বন্যার ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো অনেক কষ্টকর। তবু চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন চাষিরা। পানি নেমে যাবার সাথে সাথেই জমিতে চাষ দিয়ে লাগানো হচ্ছে মিষ্টি আলুর চারা। জেলায় এবার প্রথমবারের মত কাঁদা মাটিতে মিষ্টি আলুর চারা লাগানো হচ্ছে। সকলেই জীবন-জীবিকার তাগিদে জমি গুলোতে নতুনভাবে আবাদ করার জন্য ছুটে আসছেন কৃষি জমিতে।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর গাইবান্ধার করতোয়া, কাটাখালি, বাঙ্গালী আলাই নদী বেষ্টিত গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী, সাঘাটা উপজেলার হাজার হাজার বিঘা জমির আমনের ক্ষেত পচে গেছে। অনেক কৃষক পড়ে থাকা ধানের গাছ পরিষ্কার করছেন আবার অনেকে পারিষ্কার করা জমিতে চাষ দিচ্ছেন। কিছু কিছু কৃষক ঘুরে দাঁড়াতে জমিগুলো পরিত্যাক্ত না রেখে মিষ্টি আলুর ডাল রোপণ করছেন।
এই ডাল থেকে চারা উৎপাদন করে জেলার চরাঞ্চলে লাগানো হবে। সাঘাটা উপজেলার মনিকগঞ্জ গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা মিষ্টি আলুর চারা লাগাচ্ছেন। আগামী ৪০-৫০ দিন পর এই চারাগুলো বিক্রি করা হবে। এভাবে বন্যার ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন তারা।
সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাদেকুজ্জামান জানান, সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের নদীবেষ্টিত এলাকা মিষ্টি আলুর চাষের জন্য উপযোগী। কাদায় মিষ্টি আলুর ডাল রোপণ করার পর কাদা ও পানি শুকিয়ে গেলে মিষ্টি আলুর গাছ বেড়ে উঠবে। তিনি আরও জানান, পর পর ৫ দফা বন্যায় সাঘাটায় আনুমানিক ৮,৫০০ কৃষকের মোট ১,৯৯৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির অর্থিক পরিমাণ ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা বা তার কিছু বেশি হতে পারে বলে ধারনা করেন তিনি।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বন্যার পানিতে গাইবান্ধা জেলার প্রায় ১৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৫৫৫ হেক্টর শাকসবজি ও ১৮০ হেক্টর জমির মাস কালাই নিমজ্জিত হয়ে বিনষ্ট হয়েছে। ফসলের ক্ষতির অর্থিক পরিমাণ ৬৮ কোটি টাকা। ৭ উপজেলায় ৭১ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারি সহায়তার জন্য তাদের তালিকা দফতরে পাঠানো হয়েছে।