সরকার পরিবহনের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা তুলে দিয়েছে। যার ফলে এখন থেকে বীমা ছাড়াই মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন চালানো যাবে। এই ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা তুলে দেয়ার কারণে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর আয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো যে প্রিমিয়াম আয় করে তার ১০ শতাংশই আসে মোটর বীমা থেকে। এর মধ্যে বড় অংশই আসে মোটরসাইকেল থেকে। এর প্রায় সম্পূর্ণ অংশ তৃতীয় পক্ষের হওয়ায় এসব বীমার পক্ষে কোম্পানিগুলোর দাবি পরিশোধনের পরিমাণও বেশ কম। ফলে মোটর বীমার প্রায় সম্পূর্ণ অংশই কোম্পানিগুলোর আয় হয়। এখন তৃতীয় পক্ষের বীমা তুলে দেয়ায় কোম্পানিগুলো এই প্রিমিয়াম আয় হারাবে।
জানা গেছে, মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ধারা ১০৯ অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা বাধ্যতামূলক ছিল এবং এর অধীনে ১৫৫ ধারায় দণ্ডের বিধানও ছিল। তবে নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-তে তৃতীয় পক্ষের বীমা তুলে দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানিয়েছে, তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা না থাকলে সংশ্লিষ্ট মোটরযান বা মোটরযানের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করার কোনো সুযোগ নেই।
বীমা কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, মোটরযানের বীমা করতে হলে নিবন্ধিত হওয়া বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ যে মোটরযানগুলোর বীমা করা হয় তার সবই নিবন্ধিত। ২০১৮ সালে মোটরযান বীমা করে দেশে ব্যবসা করা সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো ৩৮২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রিমিয়াম আয় করে, যা কোম্পানিগুলোর মোট প্রিমিয়াম আয়ের ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। বছরটিতে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো মোট প্রিমিয়াম আয় করে চার হাজার ১৭৯ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত মোটরযান আছে ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৬০০টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৫৫৯টি। চলতি বছরে (আগস্ট পর্যন্ত) এক লাখ ৭৯ হাজার ১৪০টি মোটরসাইকেলসহ নতুন মোটরযান নিবন্ধিত হয়েছে মোট দুই লাখ ২১ হাজার ৯৯০টি। বিআরটিএ’র নতুন নির্দেশনার আগে এসব নিবন্ধিত মোটরযানের জন্য তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা বাধ্যতামূলক ছিল। এখন এসব মোটরযানের জন্য কোনো বীমাই বাধ্যতামূলক নয়।
বিআরটিএ’র পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো. লোকমান হোসেন মোল্লা জানান, আইনে তৃতীয় পক্ষের বীমা তুলে দেয়া হয়েছে। এখন শুধু প্রথম পক্ষের বীমা আছে। প্রথম পক্ষের বীমা সব দেশেই অপশনাল (ঐচ্ছিক)। অর্থাৎ এটি বাধ্যতামূলক নয়। সুতরাং মালিক চাইলে তার পরিবহনের বীমা করতে পারেন, না করলেও সমস্যা নেই।
মোটরযানের বীমার বিষয়ে নতুন আইনের ধারা ৬০ এর উপধারা (১) (২) ও (৩)-এ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এই তিন উপধারায় বলা হয়েছে-
১। যে কোনো মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে তার মালিকানাধীন যে কোনো মোটরযানের জন্য যে সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট করা, তাদের জীবন ও সম্পদের বীমা করতে পারবে।
২। মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠানের অধীন পরিচালিত মোটরযানের জন্য যথানিয়মে বীমা করবেন এবং মোটরযানের ক্ষতি বা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বীমার আওতাভুক্ত থাকবে। বীমাকারী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হবেন।
৩। মোটরযান দুর্ঘটনায় পতিত হলে বা নষ্ট হলে ওই মোটরযানের জন্য ধারা ৫৩ এর অধীন গঠিত আর্থিক সহায়তা তহবিল হতে কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করা যাবে না।