বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপের ফাইনালে সুমন খান ও লিটন কুমারের নৈপুণ্যে শান্ত’র দলকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দাপুটে জয় চ্যাম্পিয়ন মাহমুদুল্লাহ একাদশের ।
পুরো টূর্ণামেন্টের সফলতম দল শান্ত একাদশ পাত্তাই পেল না ফাইনালে। ৭ উইকেটের জয়ে বিশেষ এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন মাহমুদউল্লাহর দল। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার শান্ত একাদশকে ১৭৩ রানে আটকে রেখে মাহমুদউল্লাহরা ম্যাচ শেষ করে ১২২ বল বাকি রেখে। ফাইনালে আগুনে বোলিংয়ে মাহমুদউল্লাহদের জয়ের নায়ক সুমন। ২০ বছর বয়সী এই পেসারের শিকার ৩৮ রানে ৫ উইকেট।
রান তাড়ায় দৃষ্টিনন্দন সব শটের পসরায় লিটন করেন ৬৯ বলে ৬৮। অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংসে দলের জয় নিয়ে ফেরেন ইমরুল কায়েস। প্রতিপক্ষের এমন সাফল্যেও অবশ্য ম্লান হয়ে যাচ্ছে না ইরফান শুক্কুরের কীর্তি। টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত ব্যাট করা শান্ত একাদশের বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ফাইনালেও দলের চরম বিপর্যয়ে খেলেন ৭৫ রানের অসাধারণ ইনিংস। তবে সতীর্থদের ব্যর্থতায় দলটি পারেনি বড় স্কোর গড়তে। উইকেট এই টুর্নামেন্টে যেমন দেখা গেছে, এ দিনও ছিল তেমন। কিছুটা মন্থর, তবে ভয়ঙ্কর কিছু নয়। শান্ত একাদশের ব্যাটসম্যানরাই শুরুতে ডেকে আনেন নিজেদের পতন।
একাদশে ফেরা সাইফ হাসান টিকতে পারেননি ম্যাচের প্রথম ওভারও। রুবেল হোসেনের বলে ব্যাটের কানায় লেগে একটি চার পান তিনি। পরের বলেই আবার ব্যাটের কানায় লেগে হন বোল্ড। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার কিছুক্ষণ উইকেটে থাকার পর মাঠ ছাড়েন চোখের সমস্যায়। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম এরপর চেষ্টা করেন ধীরে ধীরে জুটি গড়ে তোলার। সেই চেষ্টা থামিয়ে দেন সুমন। ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ করে দেন মুশফিককে। ১২ রান করতে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান খেলেন ৩৭ বল।
মুশফিকের বিদায়ের পর ক্রিজে ফেরেন সৌম্য। আবার ড্রেসিং রুমে ফিরতেও তার সময় লাগেনি। সুমনের ছোবলে এক ওভারেই সৌম্য ও আফিফ হোসেনকে হারায় শান্ত একাদশ। দুজনেরই বিদায় প্রায় একইভাবে, অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা।
অধিনায়ক শান্ত একটা প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন বেশ কিছুক্ষণ। তিনিও উইকেট বিলিয়ে আসেন ধৈর্য্য হারিয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজকে একবার বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মেরে ধরা পড়েননি অল্পের জন্য। পরের বলে আবার একই চেষ্টায় বল তুলে দেন আকাশে, ক্যাচ নেন মাহমুদুল হাসান। ৫৭ বলে শান্ত করেন ৩২।
২২তম ওভারে শান্তদের রান তখন ৫ উইকেটে ৬৪। এরপর ইরফান আর তৌহিদ হৃদয়ের লড়াই। দল প্রবল চাপে থাকার কোনো ছাপ পড়েনি ইরফানের ব্যাটিংয়ে। শুরু থেকেই দারুণ আত্মবিশ্বাসী সব শট খেলেন তিনি। মিরাজকে দুবার বেরিয়ে এসে ওড়ান লং অন দিয়ে। প্রান্ত বদলান নিয়মিত। আলগা বল পেলে কাজে লাগিয়েছেন যেমন, তেমনি ভালো বলেও আদায় করেছেন রান।
আরেক পাশে হৃদয় স্রেফ সঙ্গ দিয়ে গেছেন। তাতে গড়ে ওঠে জুটি। হৃদয়কে ২৫ রানে রেখে ইরফান ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন ৪৬ বলে। ৭০ রানের জুটি ভাঙে হৃদয়ের আলগা শটে। মাহমুদউল্লাহর শর্ট বল মিড উইকেটে তুলে দেন হৃদয় (৫৩ বলে ২৬)।
এরপর লোয়ার অর্ডারে আর কেউ সেভাবে সঙ্গ দিতে পারেননি ইরফানকে। তিনি একাই যতটা পারেন, টানেন দলকে। রান বাড়ানোর চেষ্টায় রুবেলকে স্কুপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে থামে তার ইনিংস। ৭৭ বলে ৭৫ রানের ইনিংসে চার ৮টি, ছক্কা ২টি। নিজের শেষ ওভারে নাসুম খানকে ফিরিয়ে সুমন পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। আগের ম্যাচগুলির মতোই ভালো বোলিং করেছেন রুবেল ও ইবাদত। স্পিনে মিরাজ ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব খুব প্রভাব ফেলতে পারেননি।
এই টুর্নামেন্টের যে ধারা, ১৭৪ রানের লক্ষ্যও খুব সহজ হওয়ার কথা ছিল না। শুরুতে মুমিনুল হকের বিদায়ে ইঙ্গিত ছিল তেমন কিছুরই। কিন্তু লিটনের দারুণ সব শটে এলোমেলো হয়ে যায় শান্ত একাদশের বোলিং আক্রমণ।উইকেটের চারপাশে খেলেন লিটন। ৬৮ রানের ইনিংসে চার মারেন ১০টি। তিনে নামা মাহমুদুল হাসান ও লিটনকে ফেরান নাসুম। তবে মাহমুদউল্লাহদের জয় নিয়ে সংশয় জাগেনি। আলগা বল পেলেই ইমরুল ওড়ান ছক্কায়। মাহমুদউল্লাহ নেমেও করেন পাল্টা আক্রমণ। তাতেই জয় ধরা দেয় ৩০ ওভারের আগে। টানা দুই ছক্কায় ফিফটি স্পর্শ করার পাশাপাশি ম্যাচ শেষ করে দেন ইমরুল। তার ৫৫ বলে অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংসে ছক্কা ৬টি। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ২৩ করেন ১১ বলে। শান্ত একাদশের নাসুম ছাড়া কোনো বোলারই ভালো করতে পারেননি। ফাইনালের আগ পর্যন্ত দারুণ বোলিং করলেও এ দিন খুব বেশি চেষ্টা করতে গিয়ে লাইন-লেংথ এলোমেলো হয়ে পড়ে তাসকিনের। ভীষণ বিবর্ণ ছিলেন অফ স্পিনার নাঈম হাসান।
মাঠের লড়াই ছাপিয়ে বিসিবির বড় তৃপ্তির জায়গা করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও টুর্নামেন্ট ভালোভাবে শেষ করতে পারায়। এরপর বিসিবি তাকিয়ে প্রস্তাবিত টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের দিকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শান্ত একাদশ: ৪৭.১ ওভারে ১৭৩ ( সাইফ ৪, সৌম্য ৫, শান্ত ৩২, মুশফিক ১২, আফিফ ০, তৌহিদ ২৬, ইরফান ৭৫, নাঈম ৭, নাসুম ৩, তাসকিন ১, আল আমিন ২*; রুবেল ৮-২-২৭-২, সুমন ১০-০-৩৮-৫, ইবাদত ৮.১-১-১৮-১, মিরাজ ৯-০-৩৯-১, বিপ্লব ৫-০-২১-০, মাহমুদউল্লাহ ৭-০-২৮-১)।
মাহমুদউল্লাহ একাদশ: ২৯.৪ ওভারে ১৭৭/৩ (লিটন ৬৮, মুমিনুল ৪, মাহমুদুল ১৮, ইমরুল ৫৩*, মাহমুদউল্লাহ ২৩*; তাসকিন ৭-০-৪৫-০, আল আমিন ৬-১-৩২-১, নাসুম ১০-০-৪৮-২, আবু জায়েদ ২-০-৭-০, নাঈম ৪.৪-০-৪৪-০)।
ফল: মাহমুদউল্লাহ একাদশ ৭ উইকেটে জয়ী ।
ম্যান অব দা ফাইনাল: সুমন খান
ব্যাটসম্যান অব দা ফাইনাল: ইরফান শুক্কুর
বোলার অব দা ফাইনাল: সুমন খান
ফিল্ডার অব দা ফাইনাল: নুরুল হাসান
ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: মুশফিকুর রহিম
ব্যাটসম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: ইরফান শুক্কুর
বোলার অব দা টুর্নামেন্ট: রুবেল হোসেন
ফিল্ডার অব দা টুর্নামেন্ট: নুরুল হাসান সোহান
কামব্যাক প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট: তাসকিন আহমেদ
প্রমিজিং প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট: রিশাদ হোসেন