দ্বিতীয় দফায় পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ পেল ইংল্যান্ড। কিন্তু স্পট কিকে এবার আর পারলেন না হ্যারি কেইন। মারলেন উড়িয়ে। ইংলিশদের সব স্বপ্নও হাওয়ায় মিশে গেল। শিরোপা ধরে রাখার পথে একটু একটু করে এগিয়ে চলা ফ্রান্স উঠল কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে।
আল বাইত স্টেডিয়ামে শনিবার রাতে শেষ কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়েছে দিদিয়ে দেশমের দল।
অহেলিয়া চুয়ামেনির দুর্দান্ত গোলে ম্যাচের শুরুর দিকেই এগিয়ে যায় ফ্রান্স। প্রথমার্ধে দ্বিতীয় সেরা দল হয়ে থাকা ইংল্যান্ড বিরতির পর দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে সমতা টানে। প্রতিপক্ষের চাপের মুখেই অলিভিয়ে জিরুদের গোলে ফের এগিয়ে যায় ফরাসিরা। আবারও সমতায় ফেরার সুযোগ অবশ্য পেয়েছিল ইংল্যান্ড; কিন্তু কেইনের ব্যর্থতায় তা আর হয়নি।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফ্রান্সের সামনে এবার আসরের বিস্ময় মরক্কো। একের পর এক চমক জাগানো দলটি এ দিনই পর্তুগালকে হারিয়ে ওঠে সেমি-ফাইনালে।
ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে ইংল্যান্ডের একটি আক্রমণ এবং ফিল ফোডেনের জোরাল শট রক্ষণে প্রতিহত হয়। এরপরই শুরু হয় ফ্রান্সের একের পর এক আক্রমণ। কখনও বাঁ দিক থেকে আবার কখনও ডান দিক দিয়ে।
সপ্তদশ মিনিটে তেমনই এক আক্রমণে বাঁ দিক থেকে একজনকে কাটিয়ে ডান দিকে বল বাড়ান এমবাপে। সতীর্থের পা ঘুরে বল পান অহেলিয়া চুয়ামেনি; তবে কেউ হয়তো ভাবতে পারেননি অতদূর থেকে শট নেবেন তিনি। কিন্তু এক পলকে সামনে ফাঁকা জায়গা থেকে রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার নিলেন জোরাল শট, গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড ঝাঁপিয়েও নাগাল পেলেন না।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে চুয়ামেনির এটি দ্বিতীয় গোল।
গোল খেয়েই আক্রমণে জোর দেয় ইংল্যান্ড। ২৬তম মিনিটে ডান দিক থেকে বক্সে ঢোকার মুখে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জে হ্যারি কেইন পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন করে তারা, তবে রেফারির সাড়া মেলেনি, ভিএআরেও তেমন কিছু ধরা পড়েনি। তিন মিনিট পর কেইনের জোরাল শট একজনের গায়ে লেগে লক্ষ্যেই ছিল, ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন উগো লরিস।
বিরতির পর প্রথম মিনিটেই আক্রমণে ওঠা ইংল্যান্ডের জুড বেলিংহ্যামকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন দেম্বেলে। পরের দুই মিনিটে পরপর দুটি কর্নার পায় ইংল্যান্ড। প্রথম কর্নারে সতীর্থের পাস বক্সের বাইরে পেয়ে জোরাল শট নেন বেলিংহ্যাম, ক্রসবারের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠান লরিস।
এই অর্ধে প্রথম ১০ মিনিটে চাপ ধরে রেখে গোলও আদায় করে নেয় ইংল্যান্ড। ডি-বক্সে বুকায়ো সাকার পায়ে বল থাকলেও খুব বেশি হুমকি তখনও ছিল না, কিন্তু তাকে ফাউল করে বসেন চুয়ামেনি। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
স্পট কিক নিতে গিয়ে শুরুতে হয়তো একটু মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে কেইনের। একটু সময় নিয়ে নতুন করে নিজেকে প্রস্তুত করে নিখুঁত শট নেন তিনি। দলকে সমতায় ফেরানোর পাশাপাশি বসেন দেশের ইতিহাসের রেকর্ড গোলদাতা ওয়েইন রুনির পাশে; দুজনেরই গোল এখন ৫৩টি।
পরের মিনিটেই আবার এগিয়ে যেতে পারত ফ্রান্স। তবে পাল্টা আক্রমণে আদ্রিওঁ রাবিওর শট ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড। সেট পিসে সবসময় ভয়ঙ্কর ইংল্যান্ড ৭০তম মিনিটের ফ্রি কিকে এগিয়ে যেতে পারত; কিন্তু হ্যারি ম্যাগুইয়ারের দারুণ হেড পোস্টের বাইরের দিকে লাগে।
ইংলিশদের প্রবল চাপের মধ্যেই ৭৭তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে এগিয়ে যেতে পারত ফ্রান্স। ডান দিক থেকে দেম্বেলের ক্রস ছয় গজ বক্সের মুখে পেয়ে বাঁ পায়ে ভলি করেন জিরুদ, তবে প্রস্তুত পিকফোর্ড কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন।
অবশ্য ওই কর্নারেই গোল পায় তারা। বাঁ দিক থেকে গ্রিজমানের বাড়ানো ক্রসে সঙ্গে লেগে থাকা ম্যাগুইয়ারের চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে হেডে গোলটি করেন অভিজ্ঞ জিরুদ।
দেশের হয়ে ১১৮ ম্যাচ খেলে জিরুদের গোল হলো ৫৩টি। আগের ম্যাচেই তিনি ছাড়িয়ে যান ফ্রান্সের পূর্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা থিয়েরি অঁরিকে (৫১ গোল)।
দুই মিনিট বাদেই ডি-বক্সে ম্যাসন মাউন্টকে ডিফেন্ডার থিও এরনঁদেজ ফাউল করলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। কিন্তু ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন কেইন।
তারপরও চেষ্টা করে গেছে ইংল্যান্ড। আট মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি-কিক পায় তারা। মার্কাস র্যাশফোর্ডের শট ক্রসবারের একটু ওপর দিয়ে গেলে হাফ ছাড়ে ফ্রান্স। হতাশায় ভেঙে পড়ে ইংল্যান্ড।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবশেষ ব্রাজিল টানা দুইবার জিতেছে ট্রফি, ১৯৫৮ ও ১৯৬২ আসরে। ৬০ বছর পর সেই কীর্তি গড়ার চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ এখন ফ্রান্সের সামনে।
সেই লক্ষ্যে আপাত তাদের পেরোতে হবে মরক্কো বাধা। আগামী বুধবার উত্তর আফ্রিকার দেশটির মুখোমুখি হবে দেশমের দল।