লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার আবু ইউনুছ সহিদুন্নবী জুয়েলের গায়েবানা জানাজা রংপুরের জিলা স্কুল মাঠে সম্পন্ন হয়েছে গতকাল শনিবার (৩১ অক্টোবর) যোহরের নামাজের পর। জানাজা শেষে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও জিলা স্কুলের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ তার আত্মীয়-স্বজনরা অংশ নেন।
দ্রষ্টব্য, গত বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে মো. সহিদুন্নবী ওরফে জুয়েলকে (৫১) নৃশংসভাবে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তার মৃত দেহে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়া হয়। নৃশংস এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
নিহত জুয়েল রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজের লাইব্রেরিয়ান ছিলেন। জানাজা শুরুর পূর্বে নিহত সহিদুন্নবী জুয়েলের ভাই, সহকর্মী ও বন্ধুরা নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
এ সময় তারা বলেন, সদিদুন্নবী জুয়েল ছিলেন ধর্মভীরু ও সহজ সরল। সারা জীবন সে মানুষের সেবা করে গেছে। কিন্তু তাকে এমনভাবে হত্যা করা হলো, যা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো না। তার মতো মানুষিক ভারসাম্যহীন মানুষের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা অবাক করার বিষয়। ওখানে ধর্মকে পুঁজিকে করে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে মানুষকে উত্তেজিত করা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
সেদিন সকালে এক প্রতিবাদী মানববন্ধন থেকে জুয়েল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত, জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে রংপুরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষেরা অংশগ্রহণ করে প্রতিবাদ জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মানুষ এভাবে কাউকে পিটিয়ে হত্যার করার পর পুড়িয়ে ফেলতে পারে তা মর্মান্তিক। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোন কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। অতিদ্রুত এই নারকীয়, নিন্দনীয় ও ন্যক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, বেরোবি শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ, সমাজ উন্নয়নকর্মী তানবীর হোসেন আশরাফী, বাসদ নেতা আব্দুল কুদ্দুছ সহ আরও অনেকেই।