ঢাকা ওয়াসা এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণের কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান । এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত এলাকার মানুষ তাদের ক্রয় ক্ষমতা অনুযায়ী পানি কিনতে পারবেন। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মানুষ তুলনামূলক সুবিধা পাবে।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঢাকা ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ের বুড়িগঙ্গা হলে স্বল্প আয়ের এলাকার গ্রাহকদের জন্য ‘আদর্শ গ্রাহক সম্মাননা স্মারক- ২০২০’ বিতরণী অনুষ্ঠানে এই পরিকল্পনার কথা জানান সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান।
ঢাকা ওয়াসা, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এবং দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) যৌথভাবে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। ধনী ও গরিবদের জন্য আলাদা আলাদা পানির বিল নির্ধারণকে সমর্থন করে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় দুই কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। তাদের একটা বিরাট অংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদেরও পানি দরকার। এসব মানুষের কাছে নদীর পানিকে পরিশোধন করে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এবং তারা সেটার বিল নিয়মিত প্রদান করেন। যার প্রমাণ আজকের এই আদর্শ গ্রাহক সম্মাননা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠান। কিন্তু অনেক বিত্তবান মানুষেরও পানির বিল বাকি থাকে। আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেইসব বিল ফাঁকি দেওয়া মানুষদের একটু হলেও লজ্জা বোধ হতে পারে।’
নিম্ন আয়ের এলাকায় (বিশেষ করে বস্তিতে) ৭ হাজার ৪৮৩ বৈধ গ্রাহকের মধ্যে ২৫ গ্রাহককে সম্মাননা দেয়া হয়। তারা নিয়মিত পানির বিল পরিশোধ করেছেন। নিম্ন আয়ের এলাকার ‘আদর্শ গ্রাহক’দের সম্মাননা জানাতে ঢাকা ওয়াসার বুড়িগঙ্গা হলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, মূলত ২০১১ সাল থেকে ঢাকার বস্তিতে এলাকায় বৃহৎ পরিসরে বৈধ পানির সংযোগ দেয়া শুরু হয়। এখন শহরের বিভিন্ন বস্তিতে ৭ হাজার ৪৮৩টি বৈধ সংযোগ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বস্তিতে বৈধভাবে পানির সংযোগ দেয়া হবে। বস্তি এলাকায় বৈধ পানির সংযোগ দেয়ার জন্য ঢাকা ওয়াসার একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পে ওয়াসার সঙ্গে কাজ করছে ডিএসকে ও ওয়াটারএইড বাংলাদেশ নামের দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
তাকসিম এ খান বলেন, ”টাকার অভাব নেই, এমন অনেক গ্রাহকের কাছে ৭০ লাখ টাকার পানির বিল বাকি আছে। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বকেয়া নেই।”
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নগরীর সকল নাগরিককে বৈধ পানির আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আগে যেখানে ঢাকায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাসিন্দা বৈধ পানির সংযোগের বাইরে ছিল, এখন সেখানে প্রায় শতভাগ মানুষ বৈধ পানি পায় বলে ওয়াসা জানিয়েছে।
”আমরা আশা করছি, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা শহরের বস্তিগুলোকে বৈধ পানির আওতায় নিয়ে আসতে পারবো,” বলেন মি. খান।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী উত্তম কুমার রায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের (পানি সরবরাহ অনুবিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, ডিএসকের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মাহমুদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
সর্বশেষ ২৮শে ফেব্রুয়ারি পানির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা, যা পহেলা এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে।
সেই সময় আবাসিক গ্রাহকদের পানির দাম ১১.৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪.৪৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ব্যবহার্য পানির দামের সঙ্গে একই হারে সেই পরিমাণ পানির পয়োঃনিষ্কাশনের খরচও যোগ হয়ে থাকে।