দেশে হোক কিংবা প্রবাসে হোক শীতকাল এলেই শুরু হয়ে যায় চড়ুইভাতির তোড়জোড় ।করোনার কোয়ারেন্টাইন এর প্রবাস জীবনের একঘেঁয়েমি কাটাতে এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধির লক্ষ্যে চীনের চিয়াংশি প্রদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের সহযোগীতায় বার্ষিক বনভোজন – ২০২১ আয়োজন করা হয়। দূর পরবাসে কর্মব্যস্ত জীবনে একটু অবসরের স্বাদ নিতে সকলের অংশগ্রহণে বনভোজন হয়ে উঠে অনেক প্রাণবন্ত। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন বাংলাদেশি খাবারের ব্যাপক আয়োজন।
চীনের স্থানীয় সময় রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে চিয়াংশি প্রদেশের রাজধানী নানচাং শহরে অবস্থিত ইয়াওহু বারবিকিউ ইকোলজিকাল গার্ডেনে “বাংলাদেশি কমিউনিটি ইন চিয়াংশি প্রভিন্স” এর উদ্যেগে বার্ষিক এই বনভোজনটি অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় ছিল খেলাধুলা, প্রীতিভোজ, আলোচনা সভা, লাকী কূপন ড্র, চা নাস্তা, পুরস্কার বিতরণী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
দিনের শুরুতেই ইয়াওহু লেকের প্রকৃতির সৌন্দর্যে মোড়া বনভোজনের স্পটটি বাংলাদেশি অভিবাসীদের পদচারণায় মূখরিত ছিল। বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, কর্মজীবী ও ব্যবসায়ীরা কেউ একা আবার কেউ দল বেঁধে উপস্থিত হতে থাকেন। প্রবাসীদের উপস্থিতিতে ইয়াওহু লেকের একটি অংশে সৃষ্টি হয় যেন এক টুকরো বাংলাদেশ।
বনভোজন অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন, ইমতিয়াজ আহমেদ রুমী ও মো: মাহামুদুর রহমান রোকন এবং সহযোগিতায় ছিলেন আকরাম, শাকিল, তানভীর। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করনে মুহা: ওলিউদ্দিন ও সৈয়দ মোহাম্মদ ফাহিম।
চীনের বুকে প্রবাসে খুশিতে একদিন অনুষ্ঠানে মধুর অনুভূতি তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন, আলি সারোয়ার খান, শাওন আহমেদ খান, তমাল বর্মন, ওবায়দুল হক, নাজমুল হাসান, জালাল আহমেদ সহ আরো অনেকে। অনেকেই তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ থেকে চীনে এসে করোনা ভয়াল চিত্র খুব কাছ থেকে অবলোকন করেছি। সকল দেশীয় রান্না খাবার এর স্বাদে চীনের বুকে ক্ষুদ্র এক লাল সবুজ বাংলাদেশ এর ছোঁয়া পেলাম।বাংলাদেশী কমিনিউটি ইন চিয়াংশি প্রোভিন্সকে ধন্যবাদ দিয়ে অংশগ্রহণকারীরা আরও বলেন প্রবাস জীবনে আমরা আমাদের পরিবার ও দেশ কে অনেক মিস করি।
গতবছর থেকে করোনা শুরু হওয়ার পর আমরা অনেকেই দেশে ফিরে যেতে পারছিনা কারন ফিরতে পারব কিনা সেটা নিশ্চিত না। এমন পরিস্থিতি তে এরকম একটা আয়জন আমাদের কে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ভুলিয়ে দিয়েছিল আমরা বিদেশে নেই। মনে হল এ যেন চায়নার বুকে এক ছোট্ট বাংলাদেশ। এ যেন একটি পরিবার। অনেকেই সং্যুক্তি দিয়ে বলেন পরিবারের বাইরে আমরা আজকে ২য় একটা পরিবার কে পেয়েছি এবং সবাই মিলে বিভিন্ন ধরনের বাঙ্গালী খাওয়া, খেলাধুলা, লটারি, গান ইত্যাদি করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
বনভোজনের শেষ পর্ব ছিল পরিচিতি পর্ব ও অনুভূতি প্রকাশ, র্যাফেল ড্র, পুরস্কার বিতরণী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশীয় গান পরিবেশন করেন চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্র মো:আবির হোসেন ও মো: রকিনুল ইসলাম নিশান।
অস্তমান সূর্যের রক্তিম আভায় প্রবাসীদের এই মিলনমেলা শুধু মনের খোরাক-ই জোগায় না, দেয় অনাবিল শান্তি আর শক্ত করে বিদেশের মাটিতে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। এই ধারা বজায় থাকুক, এমন প্রত্যাশা নিয়েই এবারের পিকনিক সফলভাবে শেষ হয়।