প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “অভ্যন্তরীণ সম্পদসহ নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিপন্ন মানবতার ডাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি। মিয়ানমার থেকে ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি।”
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) ২০২০-২০২১ কোর্সের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,”আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল মন্ত্র হচ্ছে- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। এ নীতিমালা জাতির পিতা আমাদের দিয়ে গেছেন। আর এ নীতিমালা অনুসরণ করেই আমরা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছি। কেউই বলতে পারবে না যে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো দেশের সঙ্গে কোনো বৈরি সম্পর্ক আছে। আমরা মোটামুটি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে চলছি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ কারও সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায়নি, আলোচনার মাধ্যমেই মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফেরত নেবে, এটাই সরকার চায়। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আলোচনার মাধ্যমে তারা যেন তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। একটা বন্ধুত্বসুলভ মনোভাব নিয়েই আমরা এ কাজ করে যাচ্ছি। তবে যারা অন্যায় করছে নিশ্চয়ই সেটা আমরা বলবো। আমরা চাই, তারা তাদের নাগরিকদের ফেরত নিয়ে যাক।”
শেখ হাসিনা বলেন, “এতোজন বাস্তুচ্যুত মানুষ, যারা নির্যাতিত হয়েছিল, তাদের আশ্রয় দেওয়ায় সারা বিশ্ব আমাদের প্রশংসা করেছে, সাধুবাদ জানাচ্ছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন করেছি। এটিকে উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিলেন। আমাদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল হলো, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য আরও অনেক দূর যাওয়া।” দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, “২০২১-২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। ২০৪১-এ বাংলাদেশ কেমন হবে। আমরা ২০২১-এ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবো, সঙ্গে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। কিন্তু ২০৪১-এর বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, “আজ আপনাদের জীবনের একটি বিশেষ দিন। এ দিনটির জন্য দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস আপনাদের কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় করতে হয়েছে। আপনারা সমরবিজ্ঞান এবং সাম্প্রতিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের ওপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছেন।”
তিনি বলেন, “মনে রাখতে হবে, পৃথিবীটা এখন গ্লোবাল ভিলেজ। কোনো দেশ এককভাবে চলতে পারে না। সবাইকে নিয়েই চলতে হয়। এ জন্য জ্ঞানের পরিধিটাও অনেক বিস্তৃত করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের কারণে সাম্প্রতিক কালের বৈশ্বিক স্থবিরতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “নানা প্রতিকূলতা ও ঝুঁকিসহ কোভিড-১৯ মহামারির মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বছর ২০২১-এ পদার্পণ করেছি। করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব যখন স্তিমিত, তখন দেশের মানুষের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমরা দেশের অর্থনীতিসহ সকল উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছি।”
নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জনগণের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনসহ সব ক্ষেত্রে তাঁর সরকার ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় রেখে চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের এ যুগে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছি। এ কারণেই করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে ঘরে আটকা থাকলেও তিনি এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরেছেন।”
তাঁর সরকারের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের পাশাপাশি আগামী বছরের ২৬ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন শুরুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মুজিব বর্ষে আমাদের অঙ্গীকার বাংলাদেশের একটি মানুষও আর গৃহহারা, ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষেরই একটা ঠিকানা হবে এবং প্রতিটি ঘরেই বিদ্যুতের আলো জ্বলবে।”
তিনি বলেন, “প্রতিটি গ্রামই একেকটি শহরে রূপান্তরিত হবে। সেভাবেই বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, এটা কোনো কঠিন কাজ নয়। এটা করা সম্ভব। হয়তো চিরদিন থাকব না, কিন্তু পরিকল্পনাটা দিয়ে যাচ্ছি।”
মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স প্রান্তে এ সময় ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি)-এর কমান্ডেন্ট মেজর জেনারেল মো. জুবায়ের সালেহীনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের কমান্ড্যান্ট প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সনদ প্রদান করেন। এ কোর্সে ১৬টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ৪৩ জন বিদেশি কর্মকর্তা এবং ১০ নারী কর্মকর্তাসহ ২২৫ জন সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ শেষ করে এ দিন পিএসসি অর্জন করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৩টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ১ হাজার ২০৮ জন কর্মকর্তা এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন।