আজ ১২ই ফেব্রুয়ারী ২০২১। সমগ্র চীন জুড়ে চলছে আনন্দোৎসব। বসন্তকালীন ছুটির এই সময়ে সাধারণত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মচারীসহ সকল পেশার মানুষেরা নিজ নিজ স্থানে ফিরে যায়। এ যেন আমাদের দেশের ঈদের আনন্দের মতোই এক অনাবিল আনন্দমুখর পরিবেশের সৃষ্টি করে সবার মনে। নানান রকম আলোক সাজসজ্জ্বা, আতশবাজি জ্বালানো, পারিবারিক যৌথ ভোজনসহ ঐতিহ্যবাহী সব আয়োজন করে থাকেন তারা। চীন সরকারের পক্ষ হতেও বিভিন্ন আয়োজন ও বাজেটের ব্যবস্থা থাকে।
চীনা নববর্ষ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী চীনা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী নতুন বছরের শুরুতে উদযাপন করা একটি চীনা উৎসব। এই উৎসবটি সাধারণত চীন মূল-ভূখণ্ডে বসন্তকালীন উৎসব হিসাবে পরিচিত এবং এশিয়ার কতিপয় চন্দ্র নববর্ষের মধ্যে একটি। চীনা নববর্ষের প্রথম দিনটি শুরু হয় ২১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন চাঁদ দেখতে পাওয়ার মধ্য দিয়ে। ২০২১সালে, ১১ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার রাত হতে চন্দ্র নববর্ষের প্রথম দিন বর্ষ হিসেবে শুরু হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে দিবসটি উদযাপন প্রথম দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে প্রদীপ উৎসব পর্যন্ত পালিত হয়, যা বছরের ১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়।
চীনা নববর্ষ বৃহত্তর চীনের একটি প্রধান ছুটির দিন এবং কোরীয় নববর্ষ (সিওল), ভিয়েতনামের টেট এবং তিব্বতের লোসার সহ চীনের প্রতিবেশী সংস্কৃতির চন্দ্র নববর্ষ উদযাপনকে জোরালোভাবে প্রভাবিত করেছে। এটি সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, এবং মরিশাসসহ উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চীনা অভিবাসী বাস করে, সেখানে উদযাপিত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে এই উৎসবটি এক সময় দেবতা ও পূর্বপুরুষদের সম্মানার্থে পালন করা হত। চীনা নববর্ষ কতিপয় পৌরাণিক কাহিনী ও রীতিনীতির সাথে সম্পৃক্ত। চীন ভূখণ্ডে, আঞ্চলিক রীতি এবং ঐতিহ্যের কারণে নববর্ষ উদযাপনে ভিন্নতা দেখা যায়, চীনা নববর্ষের আগমনী সন্ধ্যাকে চীনা পরিবার সমূহের বার্ষিক একত্রে সান্ধ্যভোজন মিলনী হিসেবে গণ্য করা হয়।
গত বুধবার Chongqing University of Science and Technology, China তে এক আনন্দমুখর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুপুর ২.০০ টার দিকে হেইইউয়ান ক্যান্টিনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ডীন, এডভায়জর ও ইন্টারন্যাশনাল স্টডেন্ট অ্যাফেয়ার্শ অফিস কর্মচারীগণ। এছাড়া বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ, কাজাখাস্তান, ইয়েমেন, আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও চাইনিজরা। তবে বিদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখানে বাংলাদেশী কমিউনিটির শিক্ষার্থীরাই বেশি।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিকে সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ আমাদের স্বাগত জানান এবং বিভিন্ন খাবারে সাজানো টেবিলে বসার জন্য আহবান করেন। আনন্দঘন এই পরিবেশ ছিল সত্যিই নজর কারার মতো। অনুষ্ঠানে কয়েকজন শিক্ষক তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। সেইসাথে আমাদেরকেও আমাদের অনুভূতি ব্যক্ত করার সুযোগ দেয়া হয়। সমস্বর আওয়াজে ক্যান্টিনের কোলাহল সৃষ্টি হয় “শিন নিয়ান খুয়াই লা” যার অর্থ শুভ নববর্ষ। সবশেষে সবার জন্য ৪ প্যাকেট করে নানান খাবার উপহার দেয়া হয়।
ভাইরাসের এই কঠিন সময়ে এবং আমরা অনেকে ২/৩ বছর ধরে দেশে না যাওয়ায় এক ধরনের শুণ্যতা অনুভব করছি। তবে চাইনিজরা তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাদের আমন্ত্রণ করায় আমাদের আনন্দটা কিছুটা বাড়ে। বাংলাদেশ কমিউনিটির যারা দেশ থেকে আসতে পারছেন না আমরা তাদের খুব মিস করছি। প্রত্যাশা রইল খুব শীঘ্রই সৃষ্টিকর্তা এই আতংক বিরাজমান পরিস্থিতির অবসান ঘটাবেন আর আমরা আবার সবাই একত্রিত হব।