সরকার অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে প্রথমে চাল আমদানির শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে । পরে তা আরও কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দিলেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের ছাড়ের পর চালের দাম তো কমেইনি, উল্টো বেড়েছে।
সরকার যখন চাল আমদানির শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়, সে সময় রাজধানীর বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের কেজি বিক্রি হচ্ছিল ৬০ থেকে ৬৪ টাকা। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের কেজি ছিল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা। মোটা চাল ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।
বাসমতি ও অটোমেটিক চাল বাদে সব ধরনের চাল আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে গত ১৭ জানুয়ারি সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে সই করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
সরকার আমদানি শুল্ক কমানোর পর এক মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি বাজারে। উল্টো গত এক সপ্তাহে চালের দাম নতুন করে আরও বেড়েছে।
এখন খুচরা পর্যায়ে নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। গরিবের মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার ওপর।
সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, কম দামে চাল আমদানি করতে না পারলে কীভাবে কম দামে বিক্রি হবে। ভারত থেকে চাল আমদানি করতে প্রতি কেজি ৪৪ টাকা পড়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের দেশের চাল নেই। বেশিরভাগই আমদানি করা চাল।
তিনি বলেন, চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে অনেককে। আমার জানা মতে, তাদের অর্ধেকই চাল আমদানি করেনি। সরকার চাল আনার ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দিলে লাভ কি হবে? কেউ যদি আমদানি না করে, তার বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আমদানি করবে কীভাবে, দাম তো বেশি। এখানে এনে যদি বিক্রি করতে না পারে, তাহলে কেন আমদানি করবে? আমদানির ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে- তা না হলে কেন আমদানি হচ্ছে না?
তিনি আরও বলেন, সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে গেছে। সরিষার তেলের দাম বাড়তি। অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লে চালের দাম তো বাড়বেই। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সরকারের। এ বিষয়টা এখন সরকারকেই চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
এদিকে বেসরকারিভাবে আমদানির জন্য বরাদ্দ দেয়া সব চাল আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে আনতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আমদানিকারকদের এই সময় বেঁধে দিয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এর আগে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন শর্তে বেসরকারি পর্যায়ে মোট ৩২০ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়। চাল আমদানির শর্তে বলা হয়, বরাদ্দপত্র ইস্যুর সাত দিনের মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হবে। এ সংক্রান্ত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিকভাবে ই-মেইলে জানাতে হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা এক থেকে পাঁচ হাজার টন বরাদ্দ পেয়েছেন, তাদের এলসি খোলার ১০ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং ২০ দিনের মধ্যে বাকি চাল বাজারজাত করতে হবে।
এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান পাঁচ হাজার টনের চেয়ে বেশি চাল আমদানির বরাদ্দ পেয়েছে তাদের এলসি খোলার ১৫ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং ৩০ দিনের মধ্যে বাকি ৫০ শতাংশ চাল এনে বাজারজাত করতে হবে বলে শর্ত দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়।