রংপুরের সর্বপ্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হিসেবে পরিচিত মেডিকেল কলেজ হলো নর্দান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। জনপ্রিয়তার দিক থেকেও বেশ নাম ডাক ছিল এই মেডিকেল কলেজটির।
কিন্তু গতকাল সোমবার (১লা মার্চ) সকাল থেকে তারা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে। এর আগেও প্রায় ১ মাস ব্যাপি তারা বিভিন্ন মানববন্ধন ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করে। এতে আশানুরূপ কোনো ফলাফল না পাওয়ায় আজ তারা রাস্তায় নেমেছে বলে জানা গেছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, “আমরা নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ,রংপুর এর শিক্ষার্থী। ফাইনাল ইয়ার থেকে ফার্স্ট ইয়ার পর্যন্ত এখানে শিক্ষারত প্রায় ২৫০ জন দেশী ও বিদেশী (নেপালী) শিক্ষার্থী আজ চরমভাবে প্রতারণার শিকার।বর্তমানে আমরা মাইগ্রেশানের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি।”
তাদের আন্দোলনের দাবীঃ
১. ফাইনাল ইয়ার থেকে ফার্স্ট ইয়ারের শিক্ষার্থীর সম্পূর্ণ সরকারী হস্তক্ষেপে অনতিবিলম্বে অন্যান্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশানের ব্যবস্থা করা।
২. যে কাগজপত্রগুলো কলেজে দেওয়া আছে সেগুলো বিনাশর্তে তাদের হাতে তুলে দেওয়া।
২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি রংপুরের প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কিন্তু শুরুর প্রায় ৪ বছরের মাথায় নানাবিধ অনিয়মের জন্য ২০০৪ সালে কলেজটি বন্ধ হয়ে যায়।তারপর পুনরায় ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু তাদের অনিয়ম,দূর্নীতি কিছুই থেমে থাকেনি বরং দিন কে দিন বেড়েছে।
উক্ত মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীভেদে প্রায় ২৫-৩০ লাখ অর্থ ডেভলপমেন্ট ফি দিয়ে এখানে ভর্তি হতে হয়। এমনকি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের থেকেও তারা হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ যা নিয়ম বিরুদ্ধ। কোনো সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় না তাদের।
২০১৪-১৫ সেশন থেকে এই মেডিকেল কলেজের কোন বিএমডিসি অনুমোদন নেই। তবুও তারা ভুয়া কাগজ দেখিয়ে একের পর এক সেশনে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে আসছে। বর্তমানে ২০১৯-২০ সেশন পর্যন্ত তারা ছাত্র ভর্তি করেছে।
একে একে ২০১৪-১৫ সেশন থেকে বিএমডিসি অনুমোদন এবং পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন হারায় কিন্তু তারপরও হাইকোর্টে সরকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট করে সেই রিট এর উপর ভিত্তি করে এবং বিএমডিসির ভুয়া অনুমোদন সাথে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য দেখিয়ে নিষ্পাপ শিক্ষার্থীদেরকে এখানে ভর্তি করায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের থেকে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানটি চলছে ভাড়া করা রোগী এবং ভাড়া করা শিক্ষক দিয়ে এবং একটি মেডিকেল কলেজের প্রাণ যেখানে হাসপাতাল সেই হাসপাতালটি এখানে প্রায় ১ বছর থেকে বন্ধ।যখন হাসপাতাল চলমান ছিলো তখনও প্রায় সব বেড ছিল রোগীশূন্য। কলেজ ভিজিটের সময় ভাড়া করা রোগী আনা হতো তাদের বেশীরভাগই সাজানো রোগী।যাদেরকে বিভিন্ন প্রলোভন এবং ভয় দেখিয়ে রোগী সাজতে বাধ্য করা হতো।
পুরো কলেজটিই যেন হয়ে গিয়েছে অনিয়ম, প্রতারণার আখড়া।
তারা মাইগ্রেশনের দাবীর কারণ হিসেবে বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীরা বিএমডিসি অনুমোদন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন এবং শিক্ষক-রোগীর অপ্রতুলতা, অবকাঠামোগত অসুবিধা নিয়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে কথা বলতে গেলে তারা আমাদেরকে কখনও ভুয়া কাগজ দেখিয়েছেন, কখনওবা ধরাই দেননি।এবং বর্তমানে হুমকি দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
আমরা একান্ত নিরুপায় শিক্ষার্থী। ডাক্তার হবার মনোবাসনা পূরণ করতে নিজের পরিবারের শেষ সম্বলটুকু বিসর্জন দিয়ে আমরা এই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই।কিন্তু বর্তমানে আমাদের এই আশা শেষ হবার দ্বারপ্রান্তে। আমাদের পরিবার নিঃস্ব,হতাশ।”
নেপালী শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে এসে তারাও চরম বিপাকে পড়েছেন।ভিন্ন দেশে এসে পড়াশোনা করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন, তাদেরকে গভীর রাতে হোস্টেল থেকে বের করেও দেয়া হয়েছিল, পরে তারা তাদের এম্বাসির পরামর্শে কোতয়ালি থানায় জিডি করেন।
তাদের সামগ্রিকভাবে দাবী হলো, “আমরা বর্তমানে আন্দোলনে নেমেছি নিজেদের জীবন রক্ষার তাগিদে,স্বপ্ন পূরণ করবার শেষ আশাকে আকড়ে ধরে। আমরা আমাদের মাইগ্রেশনের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আকুল আবেদন সম্পূর্ণ সরকারী হস্তক্ষেপে বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে অতিদ্রুত মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা করে আমাদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করেন।”
কয়েকদিনের আন্দোলনের ফলস্বরূপ বিএমডিসি সভাপতি মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করেন অতিদ্রুত মাইগ্রেশনের ব্যাপারে গত ১৮ই ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু সেই আশ্বাসের দীর্ঘ ১০ দিন পরেও মাইগ্রেশানের ব্যাপারে কোনো লিখিত নির্দেশ দেয়া হয় নি।