চট্টগ্রামের মেয়ে ফাইরুজ আহমেদ। আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সাইন্সে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে । এই লকডাউনে ছোট ভাইয়ের আবদার, তাকে কেক বানিয়ে খাওয়াতে হবে। কিন্তু তখনও তিনি কেক বানাতে পারেন না ঠিকমতো। কোনোভাবেই আর কেক হচ্ছিল না। তখন তিনি একটার পর একটা বানিয়েই যাচ্ছিল। সবাই হাসাহাসি করতো, এত্ত কেক কেনো বানাচ্ছেন এবং বলেছিল, ‘বাসার কেক গুলো এমনই হয়, কোনো রকম। দোকানের মত সুন্দর হয় না।’
নানা জনের নানান কথা শুনেও, ছোট ভাইকে একটা পারফেক্ট কেক খাওয়ানোর ইচ্ছাটা মন থেকে বাদ দিতে পারছিলেন না। চেষ্টা করতে করতে গিয়ে একটা কেক পারফেক্ট হয়েছে। আর সেই কেক ফাদার্স ডে উপলক্ষে কাটা হয়েছিল, সেদিন সবাই কেক পছন্দ করেছে আর বলেছিল ‘দোকানের থেকেও ভালো হয়েছে।’
পরিবারের ও বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় শুরু করেন কেক তৈরি। তখন একের পর এক চেষ্টার পর নিকটজনদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কেক বানানোর দায়িত্ব নেন। সবাই অবাক হয়ে যায় ফাইরুজের কেকের চমৎকার ডিজাইন দেখে। তিনি বলেন ‘তারপর থেকে পারফেক্ট কেক বানানোর জন্য এক দিনে ৩ থেকে ৪ টা কেক ও বানিয়েছি, বিভিন্ন উপায়ে। বিভিন্নভাবে এক্সপেরিমেন্ট করে করে কেক বানাতাম, নেশার মতো হয়ে গেলো।
সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখে পেইজ খুলে ফেলেন। পেইজের নাম “Fairooz’s Sweet Treat’s“. এই ক’দিনে পেইজে প্রায় ১০০০ জন ফলোয়ার হয়ে গেছে।
উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখেছেন, রসুই খানা গ্রুপে জয়েন হবার পর থেকে।
ফাইরুজ আহমেদ বলেন, আমার প্রথম কাস্টমার ছিলেন রিমা চৌধুরী। তিনি কেক খেয়ে জানালেন, কেক তো মাশাল্লাহ অনেক মজা। সব দিক দিয়ে পারফেক্ট। সেদিন মনে হচ্ছিল, এত্ত কষ্ট স্বার্থক হয়েছে। আপুর সুন্দর একটি রিভিউ দেখেই অনেকে অর্ডার করেন। আর সেই থেকে আমার কাস্টমার সংখ্যা ৫০+ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
ইউটিউব থেকে অনেক কিছু শিখছেন। নিজেও রাত দিন পরিশ্রম করে কেক বানিয়ে যাচ্ছেন।
‘কিন্তু এত্ত অল্পদিনে এত্ত কিছু সম্ভব?’ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা চোখের সামনে ছিল, শুধু তারাই বলতে পারবেন।
এখন আমি কেক নিয়ে অনেক পড়াশোনা করে যাচ্ছি। ইচ্ছা আছে এটা নিয়ে অনেক দূর যাবার। শিখতে গিয়ে ঠিক কতটা কষ্ট হয়েছে, তা তো লিখে বুঝানো সম্ভব না।
সব কাজেই কষ্ট আছে, সবার জীবনে ভিন্ন ভিন্ন গল্প। আমি শুধু এত টুকুই বলতে পারি, অসম্ভব বলে কিছু নেই। চাইলেই সবাই সব কিছু করতে পারে। শুধু একটা কাজের পেছনে অনেক সময় পরিশ্রম ব্যয় করতে হয়।
ফাইরুজ আহমেদ জানান, তার বাসায় এ বিজনেসে মানসিক সাপোর্ট দিয়ে গেছেন এবং তার কাজে অনেক সাহায্য করে যাচ্ছেন ।
ফাইরুজ আহমেদ বলেন, শুরুর দিকটা সবার জন্যই খুব কষ্টের থাকে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যায়। শুধু একটা কাজে লেগে থাকতে হয়। কাজকে ভালবাসলে, কাজও ভালবাসা দিতে বাধ্য।
এখন তার সময় কাজের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই উদ্যোগকে আরো বড় করতে পারব।
ফাইরুজ আহমেদ সাথে কথা বলেছেন, BDTone24.com এর প্রতিনিধি নসরুম রশিদ ,…
★. উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পেছনের গল্পটা বলেন। উদ্যোক্তা জীবনের শুরুটা কিভাবে?
ফাইরুজ আহমেদ : রসুই খানা গ্রুপে জয়েন হবার পর, যখন দেখলাম সবাই ঘরে বসেই নানান ধরনের কাজ করছে, তখন আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম কিছু করার।
★ কেনো মনে হলো, আপনি উদ্যোক্তা হবেন?
ফাইরুজ আহমেদ : আমার কারোর অধীনে কাজ করার থেকে নিজে কিছু করাটা বেশি ভালো লাগে।
★ আপনার ব্যবসা পদ্ধতি কি?
ফাইরুজ আহমেদ : আপাতত অনলাইন বেইস।
★ শুরুর চ্যালেন্জগুলো কি কি ছিল (বিনিয়োগ, সহযোগিতা ইত্যাদি) কিভাবে মোকাবেলা করেছেন?
ফাইরুজ আহমেদ : শুরুর দিকে আমার পরিবার উৎসাহ প্রদান করায় সাহস করতে পেরেছিলাম।
★ আপনার সফলতার পেছনে কোনটার প্রভাব ছিলো?
ফাইরুজ আহমেদ : আল্লাহর অশেষ রহমত এবং রসুই খানা গ্রুপে একটিভ থাকার ফলাফল।
★. উদ্যোক্তা হতে গিয়ে কি কোন ধরনের ট্রেনিং নিয়েছিলেন? এই ট্রেনিংগুলোতে কি কোনোরকম ফি দিতে হয় বা সেই প্রসিডিওরটা কি বা কেমন?
ফাইরুজ আহমেদ : না কোনো ট্রেনিং নেইনি।
★আজকে আপনি যতখানি সফল তার পিছনে উল্লেখযোগ্য কারনগুলো কি?
ফাইরুজ আহমেদ : অদম্য সাহস, আর কঠোর পরিশ্রমের ফলাফল।
★. অনলাইনে ব্যবসা তা-ও আবার ফুড আইটেম, সম্ভাবনা কেমন?
ফাইরুজ আহমেদ : আলহামদুলিল্লাহ অনলাইনে খাবারের অনেক চাহিদা রয়েছে। সবাই হোমমেইড খাবারটা নিঃসন্দেহে তার পরিবারের জন্য নিতে চান। মার্কেটের উপর ভরসা করতে পারেন না অনেকেই।
★. আপনার কাজ নিয়ে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা কি?
ফাইরুজ আহমেদ : আমার ইচ্ছা আছে নিজের একটা বেকারি দেয়ার।
আল্লাহ চাইলে হবে, আমি পরিশ্রম করে যাবো ইনশাআল্লাহ।
★. উদ্যোক্তাদের সফলতার সাথে সাথে যে বিষয়গুলো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, তার মধ্যে উদ্যোক্তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন অন্যতম। আপনার ক্ষেত্রে বিষয়টি কি?
ফাইরুজ আহমেদ : আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়, আমিও নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। আর নিজেকে স্ট্রং রেখেছি সকল কিছুর সামনে, নিজেকে নিজেই স্বান্তনা দিয়েছি অনেক ক্ষেত্রে।
★ উদ্যোক্তা হতে গিয়ে এমন কোন কষ্ট পেয়েছেন, যা আপনাকে এখনও কষ্ট দেয়?
ফাইরুজ আহমেদ : উদ্যোক্তাদের অনেক ক্ষেত্রে ছোট করে দেখা হয়, সেই ব্যাপারটা খারাপ লাগে।
★ যে সাফল্যের কথা আপনি সবাইকে বলতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন…..
ফাইরুজ আহমেদ : উদ্যোক্তা হবার পর সত্যিই নিজেকে স্বাধীন মনে হয়। কেনো মনে হয় জানি না।
কিন্তু নিজের একটা পরিচিতি পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ, এটাই অনেক।
★ নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে কি বলতে চান..?
ফাইরুজ আহমেদ : একটা কথাই বলব, হুটহাট একে ওকে দেখে যেনো উদ্যোক্তা না হতে চান। কারণ উদ্যোক্তা হবার জন্য অনেক পরিশ্রম, ধৈর্যের দরকার। একটা কাজ শুরু করলাম, আবার মন চাইলো বাদ দিলাম- এমন করলে অন্য যারা উদ্যোক্তা হতে চাইছেন, উনারা আগেই নিরাশ হবেন। তাই আমার মতে খুব ভেবে পা বাড়ানোটাই উচিত।
খবরটি শেয়ার করুন। শেয়ার অপশন না পেলে ব্রাউজারের এডব্লকার বন্ধ করুন।