একজন সাংবাদিক হিসেবে যার তুলনা বর্তমানে কারও সাথে হয় না তিনিই আবদুস সালাম। সৎ সাহস, নীতিতে অটল, গঠনমূলক সমালোচনা, সাম্য ও ঐক্যের মাধ্যমে গড়ে তুলেন বাংলার সাংবাদিককে তিনিই সাংবাদিক ও সম্পাদক আবদুস সালাম।
তিনি বাংলাদেশের সাংবাদিক জগৎকে নতুন পথ দেখিয়েছেন। দৈনিক সংবাদের জহুর হোসেন, ইত্তেফাকের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, অবজারভারের আবদুস সালাম। এই তিনজনের হাত ধরেই বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।
আবদুস সালাম ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ ধর্মপুর গ্রামে ১৯১০ সালের ২রা আগষ্ট জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দুলা মিয়া মুন্সী। তার মাতার নাম আজিজেন্নেছা।তার নানার বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদিঘির বিজয় করা গ্রামে।
ছাত্রজীবনে অসাধারণ কৃতিত্বের সাক্ষর রেখে যান।প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন।একইভাবে আই.এস.সি পরীক্ষায় মুসলিম ছাত্রদের মাঝে শীর্ষস্থান অধিকার করেন।পরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্য প্রথম হয়ে টনি মেমরিয়াল স্বর্ণপদক লাভ করেন।
কর্মজীবনে তিনি ফেনী কলেজে কিছুদিন অধ্যাপনা করেন।ব্রিটিশ আমলে তিনি সরকারি আয়কর ও অডিট বিভাগে ছিলেন। পাকিস্তান আমলে তিনি ডেপুটি একাউন্টেট জেনারেল ছিলেন। কিন্তু তিনি বাঙালীদের উপর বৈষম্যের কারণে চাকুরী ছেড়ে দেন।
১৯৫২ সালে ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগে ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে মুসলিমলীগ সরকার তাকে কারারুদ্ধ করেন।ফলে অবজারভার বন্ধ হয়ে যায়।১৯৫৪ সালে সালের নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে বিপুল ভোটে প্রাদেশিক সংসদে সদস্য নির্বাচিত হন।
তার সম্পাদিত অবজারভার পুনরায় চালু হয়।কিছুদিন পর দৈনিক মনিং নিউজ দূর্ঘটনারক্রমে আগুনে পুড়ে গেলে আবদুস সালামকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। আবদুস সালামের গ্রহনযোগ্যতা ঘোটা পাকিস্তান জুড়েই বিদ্যমান ছিল।ফলে পাকিস্তান কাউন্সিল অব নিউজ পেপার এডিটরস এর সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবেরও আজীবন সদস্য পদ লাভ করেন।স্বাধীনতার পরবর্তীতে ও তিনি অবজারভারের সম্পাদক ছিলেন।তার অনুরোধে জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালে প্রেস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন এবং আবদুস সালাম হন তার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
১৯৩৪ সালে আবদুস সালাম ২৪ বছর বয়সে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পশ্চিম গাওয়ের করিমুল হক ও মাহমুদা খাতুনের একমাত্র কন্যা ফাতেমা খাতুনকে বিবাহ করেন।তিনি এক ছেলে ও ৬ মেয়ের জনক।১৯৭৬ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে আবদুস সালাম ও একুশে পদকে ভূষিত হন।
আবদুস সালামের হাত ধরেই বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও সংবাদ মাধ্যম বেগবান হয়।ত্বরান্বিত হয় দেশের সুনাম,অর্জন, যোগাযোগ ও মুক্তি। এই মহান মনীষা ১৯৭৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি এক আকস্মিক হৃদ- আক্রমণে ৬৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।