করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউন শুরুর প্রথম দিনে চট্টগ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শুনসান নিরবতা। সরকারের নির্দেশ মতো ওষুধের দোকান ছাড়া বাজার ও অলিগলির দোকানপাঠ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। নগর এবং আন্তজেলা সড়ক মহাসড়কে নেই কোনো যানবাহন।
বুধবার (১৪ এপ্রিল) সকালে লকডাউনের শুরু থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম বহদ্দার হাট, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে পুরোপুরি জনশূন্য নগরীর চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে।
সরকারের আহ্বানে সকল নগরবাসী এখন ঘরে বন্দি। শহরের রাস্তাঘাটে নেই কোনো যানবাহন, নেই জনমানুষের চলাচল। দীর্ঘ সময় পর পর কখনো আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স কিংবা জরুরি খাদ্যপণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। শহরের সীমিত সংখ্যায় চলাচল রয়েছে গণমাধ্যম কর্মী, স্বাস্থ্য কর্মী, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বহকারী গাড়ি।
দ্বিতীয়দফা কঠোর লকডাউনে জনশূন্য ও যান শূন্য এক অচেনা শহরে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম। বুধবার দুপুর ১১ টার সময় পুলিশ সদস্যদের মোটর সাইকেলে দোকান বন্ধের নির্দেশ দিতে দেখা যায়। এছাড়া গলির মোড়ের সবজি, ফল ও অন্যান্য ভ্যানে করে বিক্রি করা ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোও সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
টহলরত পুলিশ সদস্যরা জানান, গলির মোড়গুলোতেই বেশি আড্ডা হয়। তাই এগুলোই বন্ধে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। নগরীর সানমারের সামনে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান জানান, কঠোর লকডাউন শতভাগ পালন করা হচ্ছে। নির্দেশনামত যানবাহনের পাশাপাশি পথচারিদেরও আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি। সকাল থেকে ৫০ টিরও অধিক মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে।
নগর ট্রাফিক পুলিশের ডিসির কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীকে জরুরি সেবার আওতাভুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করছে না। সাধারণ মানুষজনও রাস্তায় নেই। আন্তঃজেলা সড়ক-মহাসড়কেও কোনো যানবাহন চলছে না। লকডাউন অমান্য করে এখন পর্যন্ত কাউকে বাসার বাইরে বের হতে দেখা যায়নি। এদিকে, শহরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলাতেও কঠোরভাবে লকডাউন মানছে সাধারণ মানুষ।
মাঠে দায়িত্বরত চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) আবু বকর সিদ্দিক জানান, করোনা থেকে সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। সাধারণ মানুষ যাতে লকডাউনে অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের না হয় সে ব্যাপারে কঠোর ভাবে সতর্ক রয়েছে পুলিশ।
সিতাকুন্ড থানার ৬ বাশঁবাড়িয়া ইউপি সদস্য সেলিম উদ্দিন জবাবদিহিকে জানান, ডিটি রোডে অত্যন্ত কঠোরভাবে লকডাউন চলছে। সড়কে কোনো যানবাহন নেই, সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন শ্রমিকনেতা আনোয়ার হোসেন জবাবদিহিকে জানিয়েছেন, করোনা উর্ধগতি ঠেকাতে আমরা সরকারকে সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছি।কিন্তু লকডাউন একসপ্তাহ থেকে দির্ঘস্থায়ি হলে পরিবহন শ্রমিকদের পেট চলবেনা। সরকারকে অবশ্যই শ্রমিকদের পাশে এগিয়ে আসতে হবে।
আগ্রবাদ সিঙ্গাপর-ব্যাংকক মার্কেটের ব্যাবসায়ী মো. রাজিব উর রহমান খুব আক্ষেপ করেই জবাবদিহিকে বলেন, “গত বছরও দোকানে রোজার মাল তোলার পর লকডাউন দেয়া হয়েছিল সেই মাল বিক্রি করতে না পেরে গ্রামে নিয়ে ঘরে ঘরে দিয়েছি। এবারও কর্জ করে দোকানে ঈদের মাল তুলেছি আবারও লকডাউন পড়ল, এটা দির্ঘস্থায়ি হলে আমরা পথে বসে যাব”।
এদিকে শুরুর প্রথম দিনই কিছুটা হলেও ‘সুখবর’ দিল করোনা। এদিন কমেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, একই সাথে কমেছে মৃত্যুর সংখ্যাও।বুধবার (১৪ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪১৭ জনের দেহে।
অন্যদিকে গতবছরের মতো এবারও বাতিল হওয়া বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণ অনুষ্ঠানের কেন্দ্রস্থল ডিসি হিল-সিআরবি সিরিসতলায় বিরাজ করেছে শুনসান নিরবতা। কোথাও নেই বর্ষবরণের কোন আয়োজন ।