করোনা ভাইরাস ভয়াবহ রুপে ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে। যেহেতু আমাদের দেশের মানুষের নিয়মিতই কোন না কোন প্রয়োজনে ভারতে যাতায়াত রয়েছে তাই তা দ্রুত আমাদের প্রিয় বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। এমতাবস্থায় শুধু সতর্ক থাকাই জরুরী নয় বরং প্রয়োজন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার।
যেহেতু আমাদের দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই, এছাড়াও রয়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা রকম অসংঙ্গতি। তাই বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন দেশে ধনী মানুষেরা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। যেখানেই সুযোগ তৈরী করা যায় তারা চিকিৎসা ব্যবস্থার যথাসম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ফলে বিরাজমান পরিস্থিতিতে মানুষের কষ্ট যথেষ্ট লাঘব হচ্ছে।
আমাদের দেশে বহু মানুষ আছে যাদের মাসিক উপার্জন দিয়ে কয়েকটা পরিবার চালানো সম্ভব। এছাড়া রয়েছে অনেক ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও বিভিন্ন পেশার ধনী মানুষ। মানবিকতার খাতিরে তাদের উচিত সর্বাত্মক সহায়তার জন্য এগিয়ে আসা। সব বিষয়ে সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে জনে জনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। গরীব, অসহায়দের খাবারের যোগান দেয়া জরুরী। লকডাউনের কারণে অনেক শ্রেণীপেশার মানুষের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে বাইরে বের হয়েছে।
জনবহুল একটি দেশে সরকারের পক্ষে একসাথে এতকিছু সামলানো সম্ভব নয়। তবে গঠনগত ভাবে সরকার কমপক্ষে খাদ্য ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না করতে পারলে হয়ত জাতির জন্য অপেক্ষা করছে এক ভয়াবহতা। যা হয়ত কেউ কখনো কল্পনা করেনি। করোনা ভাইরাস চলাকালীন সময়ে সরকারীভাবে অনেক বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় খরচ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সরকারের অনুদান সমূহ সাধারণ মানুষ পাইনি। তাদের প্রাপ্য তাদেরকে দেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম তো হয়েছেই, বরং এসব দুর্নীতি কঠোরভাবে দমন করতে না পারাটা অন্যতম একটা ব্যর্থতা। তাই এখন এই জরুরী পরিস্থিতিতে গৃহিত কার্যকরী পদক্ষেপ ই পারবে করোনায় ভুক্তভোগীদের যথাযথ সহায়তা করতে।
শুধু তাই নয় বরং প্রতিটি ধর্মের মানুষের উচিত তাদের সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করা। পৃথিবী যখন পাপাচারে ভরে যায় এবং জুলুম বেড়ে যায় তখন এমন গজব আসাটা স্বাভাবিক। ২০১৯ এর আগের কথা যদি আমরা চিন্তা করি তবে দেখতে পাব এক ভয়াবহ জুলুমের মধ্য দিয়ে চলছে পুরো পৃথিবী। যেদিকেই তাকাবেন দেখবেন শুধু জুলুম আর অবিচার। শক্তিশালীরা সবসময় শোষণ করে আসছে দুর্বলদের। মিয়ানমার, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাকসহ প্রায় সবদেশে জুলুম মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়েছে কত দেশ। কত নিরীহ শিশু, নারীকে হত্যা করা হয়েছে তার হিসাব আমাদের জানা নেই। আর তাই আজ এক অজানা যুদ্ধের সাথে মোকাবিলা করতে হচ্ছে পুরো বিশ্বকে। কিন্তু সব পরাশক্তি আজ ক্ষুদ্র একটি ভাইরাসের কাছে অসহায়।
সবমিলে আমাদের দেশের মানুষগুলো খুব বেশি অসচেতন বলে আমি মনে করি। আমাদের মনে রাখতে হবে জীবনের মূল্য কতটা বেশি। আর অসচেতনতা নয়, অবহেলা নয়। আসুন কিছু বিষয় নিয়মিত পালন করি।
১। নিয়মিত আল্লাহর কাছে দোয়া করা। তিনি যেন দ্রুত এ ভাইরাস পৃথিবী হতে উঠিয়ে নেন। বিনীতভাবে দোয়া করা ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়া মিন ছাইয়্যি ইল আসকম’। অর্থ: হে আল্লাহ অবশ্যই আমি তোমার নিকট ধবল, উন্মাদ, কুষ্ঠরোগ এবং সকল প্রকার মারাত্মক ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
২। একান্ত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া। সবসময় সাথে মাস্ক রাখা।
৩। নিয়মিত এবং সারাদিনে বেশ কয়েকবার হাত ও মুখমন্ডল পরিষ্কার করা। সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর ব্যবস্থা রাখা।
৪। ভাইরাসের লক্ষণ দেয়ার সাথে সাথে ডাক্টারের স্মরণাপন্ন হওয়া। অ্যাম্বুলেন্স সহ সকল প্রয়োজনীয় ফোন নং সংরক্ষন করে রাখা।
৫। সচেতনামূল সকল দিকনির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করা।
মহান আল্লাহ সবাইকে সুস্থ রাখুন এবং মহামারী এই ভাইরাস পৃথিবী হতে তুলে নিন। আমিন।