জীবনে চলার পথে মানুষ মাত্রই তার বন্ধুত্ব প্রয়োজন হয়। মানুষের চিন্তা-ভাবনা কর্ম, দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয় বন্ধুর অবদানে। তবে ইসলাম এর সুনির্ধারিত কিছু নীতিমালা দিয়েছে। কেননা ভাল বন্ধুত্ব যেমন অফুরন্ত কল্যাণ নিয়ে আসে, খারাপ বন্ধুত্ব জীবনকে বিষাক্ত করে দিয়ে চিরস্থায়ী জাহান্নামের কারন হতে পারে। এবিষয়ে মহান আল্লাহ বলেনঃ “জালিম ব্যাক্তি সেদিন নিজের দু‘হাত দংশন করতে করতে বলবে, হায়, আমি যদি অমুককে বন্ধুরুপে গ্রহণ না করতাম!” ( সূরা : ফুরকান, আয়াত :২৮)।
এ বিষয়ে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) আমাদেরকে সতর্ক করে বলেছেন যে, “মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। অতএব তোমাদের প্রত্যেকের বিবেচনা করে দেখা উচিত যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব কায়েম করছে।” (তিরমিযী ২৩৭৮ নং)
তিনি আরও বলেন, “নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হল, আতর-ওয়ালা ও কামারের ন্যায়। আতরওয়ালা হয়ত তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তার নিকট হতে তুমি কিছু খরিদ করবে কিংবা তার নিকট হতে তুমি সুবাস পাবে। আর কামারের হাপর হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে কিংবা তার নিকট হতে পাবে দুর্গন্ধ।” [বুখারী ২১০১; মুসলিম ২৬২৮]
তবে বর্তমান সময়ে আমাদের এমন কিছু সঙ্গী হয়েছে যা সালাফদের যুগে ছিল না। এসবের রয়েছে অনেক মারাত্মক প্রভাব। কি সেই সঙ্গী? সেটা হচ্ছে ইন্টাররেট ও স্যাটেলাইট চ্যানেল। এরকম সহচর পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না। এসব সহচরের আধিক্যে অন্তর, আখলাক এবং দ্বীনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কেমন প্রভাব পড়ছে? কতটা চিন্তাধারার পরিবর্তন হচ্ছে। আচরণে প্রভাব পরছে। কতটা আক্বিদার বিকৃত ঘটছে। মিথ্যা ও ক্ষতিকর আদর্শ কতটা প্রভাব ফেলছে। বর্তমান যুবক ও যুবতীদের পাওয়া যাবে যারা এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে, এক ওয়েব সাইট থেকে আরেক ওয়েবসাইটে যাচ্ছে। এসব চ্যানেল ও স্যাটেলাইট অধিকাংশই প্রবৃত্তি ও অশ্লীলতায় পূর্ণ এবং ঈমানী সংশয় সন্দেহযুক্ত। যুবকরা এসবে নিয়মিত সময় দিচ্ছে। দীর্ঘদিন বাজে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে যাচ্ছে। যার ফলে প্রবৃত্তি ও ঈমানী সন্দেহ সংশয়ে তাদের অন্তর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন সঙ্গ ব্যাপক পরিসরে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
এজন্য এসবকে বন্ধুর সাথে তুলনা করা যায়। ব্যাক্তিগত ভাবে সকল মুসলিমের সচেতন হতে হবে। যদি প্রবৃত্তি ও ঈমানী সন্দেহ সংশয়যুক্ত ওয়েবসাইটকে বন্ধু হিসবে গ্রহন করে। নিশ্চসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্থ হবে৷ এভাবে ফেতনায় যুক্ত থেকে কিভাবে একজন সুস্থ অন্তরের আশা করতে পারে। এতে অন্তর সংশয় ও কু-প্রবৃত্তিতে পরিপূর্ণ হবে। একজন নদীতে ঝাঁপ দেয়ার পর বলছে। আমি সচেতন আছি আমার শরীরে পানি স্পর্শ করবে না। ঠিক একই ভাবে একজন ওসব আধুনিক বন্ধু সাথে যুক্ত থেকে কিভাবে সুস্থ অন্তরের আশা করতে পারে। এসবের সাথে দীর্ঘ দিন যুক্ত থেকে পরে এসে অবশ্যই সে বলতে বাধ্য হবে আমি কু-প্রবৃত্তি ও সন্দেহ রোগে আক্রান্ত হয়েছি। সে নিজেই এসব রোগ নিয়ে এসেছে। সে নিজেই এসব আসার পথ উন্মুক্ত রেখেছে।
এজন্য বর্তমান আধুনিক এই সময়ে ক্ষতিকর ওয়েবসাইট ক্ষতিকর চ্যানেল চিহ্নিত করে এসব সহচর থেকে দূরে থাকতে হবে। তাছাড়া বলতে বাধ্য হবে “হায়, আমি যদি অমুককে বন্ধুরুপে গ্রহণ না করতাম! ( সূরা : ফুরকান, আয়াত :২৮) ।
এজন্য সকল মুসলিমদের ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট চ্যানেল থেকে উপকৃত হবার পাশাপাশি এর ক্ষতিকর দিক সমূহ থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।
লেখক: আবদুল্লাহ সাকিব
শিক্ষার্থী , ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ।