1. abdull[email protected] : Md. Abdullah Al Mamun : Md. Abdullah Al Mamun
  2. [email protected] : admin : admin
  3. [email protected] : Shamsul Akram : Md. Shamsul Akram
  4. [email protected] : Mohammad Anas : Mohammad Anas
  5. [email protected] : Rabiul Azam : Rabiul Azam
  6. [email protected] : Imran Khan : Imran Khan
  7. syedaj[email protected] : Jannatul Ferdous : Jannatul Ferdous
  8. [email protected] : Juwel Rana : Juwel Rana
  9. kshi[email protected] : K M Khalid Shifullah : K M Khalid Shifullah
  10. ma[email protected] : Md. Mahbubur Rahman : Md. Mahbubur Rahman
  11. [email protected] : Abdullah Masud : Masud Abdullah
  12. [email protected] : Shoyaib Forhad : Shoyaib Forhad
  13. [email protected] : Mijanur Rahman : Mijanur Rahman
  14. [email protected] : Mohoshin Reza : Mohoshin Reza
  15. [email protected] : Noman Chowdhury : Noman Chowdhury
  16. [email protected] : Md. Rakibul Islam : Md. Rakibul Islam
  17. [email protected] : Rasel Mia : Rasel Mia
  18. [email protected] : Rayhan Hossain : Rayhan Hossain
  19. [email protected] : Md. Sabbir Ahamed : Md. Sabbir Ahamed
  20. [email protected] : Abdus Salam : Abdus Salam
  21. [email protected] : Md. Shahidul Islam : Md. Shahidul Islam
  22. [email protected] : Shariful Islam : Shariful Islam
  23. [email protected] : BN Support : BN Support
  24. [email protected] : Suraiya Nasrin : Suraiya Nasrin
  25. [email protected] : Aftab Wafy : Aftab Wafy
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে ভাষণ - BDTone24.com
রবিবার, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন, ০৪ জুন ২০২৩ ইং, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে ভাষণ

মোঃ ইমরান খান
  • সময় শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। আজ শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় এবং স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (নিউইয়র্ক সময়) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদে তাঁর পূর্ব নির্ধারিত রেকর্ডকৃত ভাষণ  হুবহু তুলে ধরা হলো-

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

জনাব সভাপতি,
আসালামু আলাইকুম।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
কভিড-১৯ মহামারির কারণে আমরা মানব ইতিহাসের এক অভাবনীয় দুঃসময় অতিক্রম করছি। জাতিসংঘের ইতিহাসেও এই প্রথমবারের মত নিউ ইয়র্কের সদরদপ্তরে সদস্য  দেশসমূহের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণের অনুপস্থিতিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

জাতিসংঘের এই সভাকক্ষটি আমার জন্য অত্যন্ত আবেগের। ১৯৭৪ সালে এই কক্ষে দাঁড়িয়ে আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সদ্য স্বাধীন দেশের সরকার প্রধান হিসেবে মাতৃভাষা বাংলায় প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন। আমিও এই কক্ষে এর আগে ১৬ বার সশরীরে উপস্থিত হয়ে বিশ্বশান্তি ও সৌহার্দের ডাক দিয়েছি। সরকার প্রধান হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এটি আমার ১৭তম বক্তৃতা।

আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি স্বাস্থ্যকর্মীসহ সকল পর্যায়ের জনসেবকদের যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও জনগোষ্ঠিকে সুরক্ষা দিয়ে চলেছেন। সাধুবাদ জানাই জাতিসংঘ মহাসচিবকে এই দুর্যোগকালে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগের জন্য। বাংলাদেশ শুরু  থেকেই যুদ্ধ বিরতিসহ তাঁর অন্যান্য উদ্যোগসমূহকে সমর্থন জানিয়ে আসছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেমন জাতিসংঘ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বের সকল দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের উপর গুরুত্বারোপের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, তেমনি এই মহামারী আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক নেতৃত্ব প্রদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।

আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতিকে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। তাঁরই দেখানো পথে হেঁটে আমরা আজ বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল আসনে নিয়ে আসতে পেরেছি। এই মহান পরিষদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, “জাতিসংঘ সনদে যে মহান আদর্শের কথা বলা হয়েছে তা আমাদের জনগণের আদর্শ এবং এই আদর্শের জন্য তাঁরা চরম ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এমন এক বিশ্ব ব্যবস্থা গঠনে বাঙালি জাতি উৎসর্গকৃত, যে ব্যবস্থায় সকল মানুষের শান্তি ও ন্যায়বিচার লাভের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে।”

তাঁর এই দৃপ্ত ঘোষণা ছিল মূলত বহুপাক্ষিকতাবাদেরই বহিঃপ্রকাশ। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে তাঁর প্রদত্ত দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য বর্তমান সঙ্কট মোকাবেলার জন্য আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

বাঙালি জাতির জন্য এ বছরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ বছর আমরা আমাদের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী  উদযাপন করছি। বঙ্গবন্ধুর জীবন, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং সাফল্য আমাদের কভিড-১৯-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যেমন সাহস যোগায়, তেমনি সঙ্কটের উত্তরণ ঘটিয়ে নুতন দিনের আশার সঞ্চার করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে সকল বঞ্চিত ও উন্নয়নকামী দেশ ও মানুষের পক্ষ হতে তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

আমি গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার আমার পিতা এবং বাঙালি জাতির পিতা, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমার মা, আমার তিন ভাই, দুই ভাতৃবধূসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে। আমরা দুই বোন দেশের বাইরে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম। শরণার্থী হিসেবে আমাদের ৬ বছর দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে। আমি জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করছি এ জন্য যে, পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম জঘন্য, নির্মম ও বেআইনি হত্যাকা- যেন আর না ঘটে।

জনাব সভাপতি,
কভিড-১৯ প্রমাণ করেছে, আমাদের সকলের ভাগ্য একই সূত্রে গাঁথা। আমরা কেউই সুরক্ষিত নই যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি। এই ভাইরাস আমাদের অনেকটাই ঘরবন্দি করে ফেলেছিল। যার ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পাশাপাশি আর্থনীতিক কর্মকাণ্ডও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.২ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ আমাদের এই অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করেছে।

তবে বাংলাদেশে আমরা প্রথম থেকেই “জীবন ও জীবিকা” দুই ক্ষেত্রেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন যাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, তার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছি।

দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমরা প্রতি বছর প্রায় ৩৯ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করি। এ ছাড়া বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলাদের জন্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং সমাজের অনগ্রসর শ্রেণিসহ অন্যদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ও ভাতার প্রচলন করেছি যার মাধ্যমে প্রায় ৯.১ মিলিয়ন পরিবার উপকৃত হচ্ছেন।

কভিড-১৯ বিস্তারের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য আমরা তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার ব্যবস্থা নিয়েছি। এতে ১০ মিলিয়নের বেশি পরিবার উপকৃত হয়েছেন। আমরা ৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছি। করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুরসহ ৫ মিলিয়ন মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গ্রাম পর্যায়ের প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হতে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়।

সরকারি সহায়তার পাশাপাশি আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে তহবিল সংগ্রহ করে এতিম ও গরিব শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, স্কুল শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ যাঁরা সাধারণভাবে সরকারি সহায়তার আওতাভুক্ত নন, তাঁদের মধ্যে ২.৫ বিলিয়নের বেশি টাকা বিতরণ করি। যার ফলে সাধারণ মানুষকে করোনাভাইরাস খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি।

কভিড-১৯ রোগী সনাক্তের সাথে সাথে আমরা ৩১-দফা নির্দেশনা জারি করেছিলাম। করোনাভাইরাস যাতে ব্যাপকহারে সংক্রামিত হতে না পারে, তার জন্য আমরা সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছি। যার সুফল হিসেবে আমরা লক্ষ্য করছি, ঋতু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশে যেসব রোগের প্রাদুর্ভাব হয়, এবার সেসব রোগ তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।

আর্থিক খাতের আশু সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে আমরা ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করি। রপ্তানিমুখী শিল্প, শ্রমিকদের সুরক্ষা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ওয়ার্কিং ক্যাপিট্যাল প্রদান, রপ্তানি বৃদ্ধিতে ঋণ প্রদান, কৃষি ও কৃষকদের সহায়তা, কর্মসৃজনের জন্য ঋণ প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ, পুনঃঅর্থায়ন স্কিম এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বীমা চালুকরণ – ইত্যাদি খাত প্রণোদনার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা মোট ১৩.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি যা আমাদের মোট জিডিপি’র ৪ দশমিক শূণ্য ৩ শতাংশ।

আমরা করোনাকালে খাদ্য উৎপাদনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। সেই সঙ্গে পুষ্টি নিশ্চয়তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের শিল্প কারখানা সচল রাখা এবং কৃষি ও শিল্পপণ্য যথাযথভাবে বাজারজাতকরণের বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। যারফলে বাংলাদেশের স্ব্যাস্থ্য ও অর্থনীতি এখনও তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো আছে।

কভিড-১৯-এর কারণে বিশ্বব্যাপী উৎপাদনে স্থবিরতা সত্বেও আমাদের ৫.২৪ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগামী অর্থবছরে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আমরা আশাবাদী।

জনাব সভাপতি,
আশা করা হচ্ছে বিশ্ব শিগগিরই কভিড-১৯-এর ভ্যাক্সিন পাবে। এই ভ্যাক্সিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। সকল দেশ যাতে এই ভ্যাক্সিন সময় মত এবং একইসঙ্গে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। কারিগরি জ্ঞান ও মেধাসত্ব প্রদান করা হলে, এই ভ্যাক্সিন বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে।

মহামারি নিরসনে আমাদের উদ্যোগ এবং এজেন্ডা-২০৩০ অর্জনে আমাদের প্রচেষ্টা সমানতালে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় Voluntary National Review রিপোর্ট উপস্থাপন প্রমাণ করে যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে আমরা যথাযথভাবে এগিয়ে চলেছি।

বাংলাদেশকে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ব-দ্বীপে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি।

প্রযুক্তিগত বিভাজন নিরসন, সম্পদ আহরণ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য আমাদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন-কে কাজে লাগানো প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বল্পোন্নত হতে উন্নয়নশীল এবং সদ্য উত্তরিত উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য এই আপদকালীন, উত্তরণকাল ও উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বর্ধিত আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং প্রণোদনা প্যাকেজ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রবাসী শ্রমিকগণ স্বাগতিক ও নিজ দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রেখে চলেছেন। এই মহামারীর কারণে অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। অনেককে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা দেশে ফিরে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের প্রণোদনা বাবদ ৩৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছি। তবে কোভিড-পরবর্তী সময়ে তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি অভিবাসী শ্রমিকদের বিষয়টি সহমর্মিতার সঙ্গে ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচনা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও অভিবাসী গ্রহণকারী দেশসমূহের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

জনাব সভাপতি,
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বিদ্যমান সমস্যাসমূহ প্রতিনিয়ত প্রকট হচ্ছে। এই সঙ্কটকালেও আমাদের বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে হচ্ছে। CVF ও V-20 Group of Ministers of Finance-এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু সমস্যা উত্তরণে একটি টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়নে নেতৃত্ব প্রদান করবে। এ ছাড়াও গ্লাসগো Conference of Parties (COP)-এ গঠনমূলক ও কার্যকর ফলাফল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সর্বদা সচেষ্ট থাকবে।
লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণে Beijing Declaration and Platform of Action কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। এই ঘোষণার ২৫ বছর পূর্তি উদযাপনকালে ঘোষণায় উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুসমূহ বাস্তবায়নে আমাদের দৃঢ় সঙ্কল্প ও পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন।

বাংলাদেশে আমরা লিঙ্গ বৈষম্য সামগ্রিকভাবে ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ কমিয়ে এনেছি। আমাদের জাতীয় উন্নয়নের মূলে রয়েছে নারীদের অবদান। মহামারি মোকাবেলাসহ সকল কার্যক্রমে বাংলাদেশের নারীরা সামনে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশে আমরা শিশুদের উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ইউনিসেফ-এর এক্সিকিউটিভ বোর্ডের বর্তমান সভাপতি হিসেবে আমরা শিশুর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া, কোভিড সংক্রান্ত সমস্যা যাতে শিশুদের সামগ্রিক সমস্যায় পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।

জনাব সভাপতি,
‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’, এই নীতিবাক্য আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র। এ মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং শান্তির সংস্কৃতি বিনির্মাণে নিয়মিত অবদান রেখে চলেছে।

মহামারিকালে অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের মত বিষয়গুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে। শান্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা এ বিষয়গুলোর মোকাবেলা করতে পারি।

শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাংলাদেশের অবস্থান এখন শীর্ষে। সংঘাতপ্রবণ দেশসমূহে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি বজায় রাখতে আমাদের শান্তিরক্ষীগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্যতম দায়িত্ব।

এ বছর আমরা Women, Peace and Security এজেন্ডা-এর ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করছি। এই এজেন্ডার অন্যতম প্রবক্তা হিসেবে আমরা শান্তি ও নিরাপত্তায় নারীর ভূমিকার উপর গুরুত্বারোপ করি। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

শান্তির প্রতি অবিচল থেকে আমরা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি। মহামারীর ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতীয় উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও অপরিহার্য।

পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী বিনির্মাণে বৈশ্বিক আকাক্সক্ষার প্রতি আমাদের সমর্থন অবিচল। সে বিবেচনা থেকে পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশসমূহের কার্যক্রমকে আমরা জোর সমর্থন জানাই।

জনাব সভাপতি,
আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে বাঙালি জাতি অবর্ণনীয় দুর্দশা, মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার মত জঘন্য অপরাধের শিকার হয়েছে। সেই কষ্টকর অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা নিপীড়িত ফিলিস্তিনী জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবীর প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছি।

বাংলাদেশ ১১ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত মিয়ানমার নাগরিককে আশ্রয় প্রদান করেছে। তিন বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। এই সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

জনাব সভাপতি,
কভিড-১৯ মহামারির কারণে বিদ্যমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জসমূহ আরও প্রকট হয়েছে। এ মহামারি আমাদের উপলদ্ধি করতে বাধ্য করেছে যে, এ সঙ্কট উত্তরণে বহুপাক্ষিকতাবাদের বিকল্প নেই। জাতিসংঘের ৭৫তম বছর পূর্তিতে জাতিসংঘ সনদে অন্তর্নিহিত বহুপাক্ষিকতাবাদের প্রতি আমাদের অগাধ আস্থা রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও বহুপাক্ষিকতাবাদের আদর্শ সমুন্নত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।

পাশাপাশি আমরা আমাদের জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত সে সোনার বাংলাদেশ হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত – যেখানে সবার মানবাধিকার নিশ্চিত হবে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে জাতি ও বিশ্বের নিকট এটিই আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।
সবাইকে আবারও ধন্যবাদ।

খোদা হাফেজ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

খবরটি শেয়ার করুন। শেয়ার অপশন না পেলে ব্রাউজারের এডব্লকার বন্ধ করুন।

এই ধরনের আরো খবর
sadeaholade
বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর: আবেদনকৃত । © ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । ওয়েবসাইটের কোন কন্টেন্ট অনুমতি ছাড়া ব্যবহার নিষিদ্ধ।
themesbazarbdtone247