রাতভর ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে রংপুর নগরী। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি ঘরবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় আশ্রয় হারিয়ে পরিবার নিয়ে অনেকেই উঠেছেন স্কুল-কলেজের বারান্দায়। পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় জমে থাকা পানিতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিচু এলাকার বাসিন্দারা।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা থেকে রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত একশ বছরেও হয়নি। এমন বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত আরও দু’একদিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে রাতভর অবিরাম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের একমাত্র অবলম্বন শ্যামা সুন্দরী। ভেঙে পড়েছে নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা। নিষ্কাশন সুযোগ না থাকায় পানিতেই চলছে যাতায়াত। নগরবাসী বলছেন ২৫-৩০ বছরেও এমন বৃষ্টিপাত দেখেননি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যাতেও এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি।
এদিকে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে।
নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে সবেচেয়ে বেশি পানি প্রবেশ করেছে। বেশির ভাগ রাস্তা ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর শাপলা চত্বর, হাজীপাড়া, চামড়াপট্টি, করণজাই রেড, সেনপাড়া, নিউ সেনপাড়া, আদর্শপাড়া, বাবুখাঁ, কামার পাড়া, জুম্মাপাড়া, কেরানীপাড়া, আলমনগর, হনুমান তলা, মুন্সিপাড়া, মুলাটোল আমতলা, গণেশপুর, বাবুপাড়া, লালবাগ কেডিসি রোড, বাস টার্মিনাল, শালবন, মিস্ত্রিপাড়া, কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, কলাবাড়ি দর্শনা, মর্ডান মোড়, মেডিকেল পাকার মাথা, জলকর, নিউ জুম্মাপাড়া, খটখটিয়াসহ অন্তত শতাধিক পাড়া-মহল্লার অলিগলিসহ প্রধান সড়কে পানি উঠেছে। নিচু এলাকার বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় হাজার হাজার পরিবার বাড়ি ঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ছন্নছাড়া হয়েছে নগরবাসীর জীবন। নিজ বাড়িতে রান্না করতে না পারায় দুর্ভোগ উঠেছে চরমে। অধিকাংশ হোটেল বন্ধ থাকায় খাবার কিনে খেতেও হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই।
সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর প্রায় সাত বছরেও পরিকল্পিত ড্রেনেজ সিস্টেম গড়ে না ওঠায় জলাবদ্ধতা।
এখনও নগরীর পানি নিষ্কাশনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম দেড়শ বছরের প্রাচীন শ্যামা-সুন্দরী খাল। কিন্তু সংস্কারে দফায় দফায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচের পর এ খালই এখন জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী মানুষের।