ছেলেটা খালি গায়ে চোখ বুঁজে উবু হয়ে শুয়ে কি বিড়বিড় করছিল যেন! জৈষ্ঠ্য মাসের বেলা বারোটার রদ্দুরে রুটি ভাজার তাওয়ার মতন গনগনে হয়ে আছে পুরো ছাদটা। সেখানে এই ছেলে কি করে খালি গায়ে এত স্বাছন্দ্যে শুয়ে আছে তাই এক রহস্য!আমি আচারের বয়ামগুলিতে রোদ লাগাবার উদ্দেশ্যে ছাদে উঠেছিলাম। উঠেই এই দৃশ্য দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।একটা বয়ামের ধাতব ঢাকনা হাত ফসকে পড়ে যাওয়ায় ঝনঝন শব্দ করে উঠল।সেই শব্দে চোখ খুলে তাকাল ছেলেটা। আমাকে দেখেই এক গাল হেসে ফেলল সে।
বলল,
"ভালো আছেন? "
আমিও একটু হেসে ঘাড় নেড়ে বললাম,
"জি, আপনি ভালো আছেন?" সে নিজের বাম হাতের আঙুল মটকাতে মটকাতে বলল,
"এই মুহুর্তে ভালো আছি।অসম্ভব ভালো! "
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, "আপনাকে আগে দেখিনি কখনো।"
"আমার নাম প্রলয়। আপনাদের বিল্ডিং এর তিনতলায় নতুন এসেছি আমরা। " সে উত্তর দেয়।
আমার হঠাৎ মনে পড়ল, তিনতলায় নতুন ভাড়াটে আসার কথাটা দু তিন দিন আগে মা বলছিল আমায়।
"ও হ্যা, মা বলছিল সেদিন তিনতলায় নতুন ভাড়াটিয়া রা এসেছে!আমি চিত্রা সাত তলায় থাকি। ফ্ল্যাট নাম্বার বি সেভেন।"
" "চিত্রা" সুন্দর নাম! " প্রলয় হেসে বলে।
" আমি কৌতুহলের ঢেকুর টা আর পেটে চেপে রাখতে পারলাম না। প্রশ্নটা করেই ফেললাম ফট করে,
"কি করছিলেন আপনি? "
প্রলয় পাশেই উলটে রাখা একটা বই হাতে নিয়ে মলাট টা আমার দিকে তাক করে বলল,
"রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর চারটে কবিতা মুখস্ত করব বলে ঠিক করেছিলাম।কিছুতেই হচ্ছিল না। তাই আর কি!"
আমি অবাক হয়ে বললাম,
"এভাবে খালি গায়ে রোদে শুয়ে থাকলে। মুখস্ত হয়ে যায় বুঝি? "
প্রলয় মাথা নেড়ে বলে,
"হয় তো! আমার তো আড়াইটে মুখস্ত হয়ে গেছে অলরেডি। আর দেড়টা বাকী। আসেন আপনাকে শোনাই একটা। "
.
আমি বললাম,
" না থাক, এখন কবিতা শুনতে ইচ্ছে করছে না! " প্রলয় ঠোঁট বাঁকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল, "ইচ্ছে না করলেও শুনে দেখুন। আবৃত্তিটা খুব একটা খারাপ করি না। এই গনগনে দুপুরে রুদ্রের কবিতা শুনলে মনে হবে শ্রাবণের প্রথম বৃষ্টির ছাট গায়ে এসে লাগল বুঝি!"
আমি কথা বাড়ালাম না আর। ছাদের রেলিঙ এ গা এলিয়ে দাঁড়ালাম। প্রলয় কবিতা পড়তে শুরু করল,
"খুব কাছে এসো না কোনদিন,
যতটা কাছে এলে, কাছে আসা বলে লোকে।
এ চোখ থেকে ঐ চোখের কাছে থাকা,
এ পা বাড়ানো থেকে অন্য পায়ের সাথে চলা
কিংবা ধরো,
রেললাইন এর পাশাপাশি শুয়ে অবিরাম বয়ে চলা…"
.
কি অদ্ভূত একটা মাদকতা ওর কন্ঠে।সত্যিই যেন মনে হল, ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল আকাশ জুড়ে। বৃষ্টির জল শীতল করে দিল জ্বলতে থাকা মধ্যাহ্নের বুক! আমি তন্ময় হয়ে শুনে যাচ্ছিলাম। ঘোর কাটল ওর কথা শুনেই।
"ভালো লাগল? "
আমি মাথা নেড়ে বলি, "ভীষণ ভালো লাগল! "
"আরেকদিন জীবনানন্দ দাশ শোনাব আপনাকে। "ধূসর পাণ্ডুলিপি" পড়েছেন? "
"না, পড়া হয়নি কখনো।"
"আমার পুরোটা মুখস্ত!"
"বাহ! "
"ওখান থেকে কবিতা শোনাব একদিন।"
"আজকেই শুনি! "
"না! আজকে আমার আরও দেড়টা কবিতা মুখস্ত করতে হবে। আপনি আছেন বলে মনোযোগ দিতে পারছি না। আপনি কি দয়া করে ছাদ থেকে যাবেন এখন! " আমার একটু মন খারাপ হলো।বললাম, "আচ্ছা চলে যাচ্ছি!'
ছাদের দরজা অব্দি এসে, আড়াল থেকে উকি দিয়ে দেখলাম। সে আবার উবু হয়ে শুয়ে বিড়বিড় করে কবিতা পড়তে শুরু করে দিয়েছে।
.
এরপর বেশ কিছু দিন প্রলয় এর সাথে আমার আর দেখা হয়নি। অথচ ছাদে গেলেই অবচেতন মনে কেন যেন খুঁজতাম ওকে। প্রায় তিন চার সপ্তাহ পরে, প্রলয়ের সাথে আবার আমার দেখা হলো।রবীন্দ্র সরেবোরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি কম করে হলেও দশ পনেরটা কুকুর প্রলয়কে ঘিরে ধরে বসে আছে।। প্রলয় তাদের রুটির টুকরো ছিড়ে খাওয়াচ্ছে। আর কি যেন বকবক করছে। কুকুরগুলোও অত্যন্ত মনোযোগী শ্রোতার মত মাথা আর লেজ নাড়াচ্ছে সমান তালে। একটু খেয়াল করে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম।প্রলয় এদেরকেও কবিতা শোনাচ্ছে! আমি গলার স্বর উঁচু করে আওয়াজ দেই তাকে,"প্রলয় না! "
আমাকে দেখতে পেয়ে আগেরবারের মতনই স্মীত হাসি দিয়ে বলে,
"দেখে কি মনে হচ্ছে?"
আমি কাছে এসে ওর পাশে বসতে বসতে বললাম,
"দেখে তো প্রলয় ই মনে হচ্ছে। রাস্তায় বসে কুকুরদের আবৃত্তি শোনানোর মতন পাগলামি। প্রলয় ছাড়া বঙ্গদেশের আর কারোর পক্ষে সম্ভব বলে তো মনে হয় না!" প্রলয় শব্দ করে হেসে ফেলল। আমি বললাম, "কি শোনাচ্ছিলেন এদের?
প্রলয় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
" তুমি আমার মধ্যে,
তোমায় জমা রেখ!
যেমন করে গোধূলির আবীর,
সন্ধ্যের কৌটোয় জমা রাখে তার বাদবাকী কথাদের!... "
"জীবনানন্দ দাশ?"
"উহু… প্রলয় কুমার ঘোষ! "
"বাহ! বলার সাথে সাথে কবিতা লেখার হাতটাও তো দারুণ আপনার!" আমি অকৃত্রিম মুগ্ধতা নিয়ে বলি। একটু হেসে প্রশংসার জবাব দিল প্রলয়। তারপর কুকুর গুলোর মাথায় হাত বুলাতে লাগল একমনে। আমি দুষ্টুমি করে বলি,
"আজ এদের ছাড়া অন্য কোন শ্রোতা পেলেন না বুঝি! "
প্রলয় হেসে বলে,
"উহু.. আজ এদের ছাড়া অন্য কাউকে শ্রোতা বানাতে ইচ্ছে করল না। নিজের লেখা তো, অন্য কাউকে বলার সাহস পাই না। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা করে! "
"আচ্ছা! কিন্তু আমাকে তো শোনালেন!"
"আপনার কথা আলাদা।"
"কেন! আমার কথা আলাদা কেন? " আমি সকৌতুহলে প্রশ্নটা করি।
প্রলয় ঠোটের একটা প্রান্ত উপরে তুলে বলে, "আপনাকে দেখলেই কেন যেন খুব আপন মনে হয়।সেদিন ও মনে হয়েছিল। সেইজন্যই বলেছিলাম। আমি সবাই কে জোর করে কবিতা শোনাই না! " কথাটা শেষ করে আর কিছু বলল না সে। আমিও কিছু জিজ্ঞেস করলাম না আর।একটা দীর্ঘ অস্বস্তিহীন নীরবতার পর হঠাৎ উঠে দাঁড়াল প্রলয়।
.
"আচ্ছা আজ আসি!"
আমি ব্যাস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
"কোথায় যাচ্ছেন?" সে ভাবলেশহীন কন্ঠে বলল,
"জানি না তো! দুই পা যেইদিকে নিয়ে যাবে সেদিকে চলে যাব। আপনি চাইলে আসতে পারেন সাথে।"আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললাম,
"না, আমার বন্ধুরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।"
প্রলয় হো হো করে হেসে ফেলল কথাটা শুনে।আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
"কি ব্যাপার, হাসছেন কেন?"প্রলয় অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল,
"আপনাকে দেখে এখন দূর দূর পর্যন্তও মনে হচ্ছে না যে, আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে চাইছেন। আপনি এই মুহুর্তে ভীষণ ভাবে হাঁটতে চাইছেন আমার সাথে!কথা কি ঠিক বলেছি? "
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।প্রলয় আমার কাছে ঘেঁষে বলল,
"আপনার আর আপনার বন্ধুদের মাঝে এই মুহুর্তে যোগাযোগের দড়িটা কি? "
আমি একটু ভেবে উত্তর দিলাম,
"মোবাইলফোন!"
প্রলয় চোখ টিপে বলল,
" তাহলে দড়িটা কেটে দিয়ে হাঁটা শুরু করুন! " আমি ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে সুইচড অফ করে, হাঁটতে শুরু করি ওর সাথে। হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি আমরা। গাছের কথা, গানের কথা, পাখির কথা, কবিতার কথা। শুধু নিজেদের কথাগুলো বলা হয়ে ওঠে না সেইভাবে। বলার প্রয়োজনও বোধ হয় না অবশ্য!
.
প্রলয়ের সাথে এরপরেও যতবার আমার দেখা হয়েছে, এভাবেই হয়েছে। ঝড়ের মতন, বিনা নোটিশে! কখনো ছাদে, কখনো সিঁড়িতে, কোন লিফটে, কখনো রাস্তায়!
প্রলয় কোন মুঠোফোন ব্যাবহার করত না। ওর মতে ওটা নাকি সবচেয়ে "যন্ত্রণাদায়ক প্রযুক্তি"! সেজন্যই কোনদিন আমাদের ফোন নম্বর অদলবদল করা হয়নি। পরস্পরের ফেসবুকে এড হয়ে, রাতদুপুরে ইনবক্সে চ্যাট করা হয়নি। ওর ব্যাক্তিগত তথ্য বলতে আমি কেবলই ওর নাম।কবিতার প্রতি ওর ভালোবাসা। আর থার্ড ইয়ারের পর ওর ভার্সিটি ছেড়ে দেবার তথ্যটা জানতাম। প্রলয় তো আমার ব্যাপারে অতটুকুও জানত না। তবুও আমরা বন্ধু ছিলাম। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ এর মতন গভীরতা ছিল আমাদের বন্ধুত্ত্বে।সেই গভীরতা কেবল আমরাই টের পেতাম।আমার যেদিন ভীষণ আনন্দ হতো।সেদিন প্রলয়ের সাথে দেখা হলে আনন্দটা দ্বিগুণ হয়ে যেত। আর মন খারাপ এর কোন দিনে দেখা হলে। দুঃখটা কেমন কর্পূরের মতন হাওয়ায় উবে যেত যেন! একটা রাতের কথা এখনো মনে আছে আমার। বাসার সবার সাথে ঝগড়া হয়েছিল সেদিন।ছাদে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। প্রলয় এসে উপস্থিত হলো তখনই। আমি ওকে একটা শব্দও বলিনি। অথচ কি করে যেন বুঝে গেল আমার মন টা প্রচন্ড খারাপ। পাশে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। হঠাৎ কি হলো আমার কে জানে! সারাজীবন কারো সামনে কাঁদতে না পারা আমি।প্রলয়ের বুকে মাথা গুঁজে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললাম। প্রলয় সেদিনও কিছু জিজ্ঞেস করেনি আমায়।আমার এলোমেলো চুলের ভেতর বারবার নিজের আঙুলগুলো চালান করে দিচ্ছিল শুধু। আমাদের মধ্য যা কিছু নীরব। যা কিছু অজানা ছিল। সেটুকুই ছিল সবচেয়ে বেশি স্নিগ্ধ! কিছু না জেনেও, কেমন করে যেন আমাকে সবথেকে বেশি জেনে ফেলেছিল ও। মাত্র কয়েকটা মাসের পরিচয় ছিল ওর সাথে আমার।এত অল্পদিনে ও কি করে আমার এতটা কাছে চলে এসেছিল তা ভেবে আজও অবাক হই!
.
আমি রাজশাহী আসার তিন চার মাসের মধ্যেই প্রলয়রা বাসা পালটে কোথায় চলে গেছিল যেন।ওদের ফ্লোরের অন্য কেউ নতুন ঠিকানা সমন্ধে বলতে পারল না কিছু। দারোয়ান শুধু বলল নতুন বাসা নাকি আদাবরে, এটুকই সে জানে। সেই শুনে, ঢাকায় যেকদিন থেকেছি। রোজ আদাবরে গিয়ে এলোমেলো হেঁটেছি রাস্তায়। যদি হুট করে কোথায় দেখা যায় প্রলয়কে! কিন্তু আর কোত্থাও পাই নি ওকে।আমি রাজশাহী ফিরে আসি। রাজশাহী আমার শশুরবাড়ি নয়। তবে স্বামীর চাকরির সুবাদে এখানে থাকতে হচ্ছে। শেষ যেই গোধূলিতে প্রলয়ের সাথে আমার দেখা। সেদিন আমার হাতে সদ্য ছাপা হয়ে আসা বিয়ের কার্ড গুলোর একটা ছিল।কেন যেন মনে হচ্ছিল আজ দেখা হবে ওর সাথে। উঠার পর দেখি মনে হওয়াটা ভুল নয়।ঢলে পড়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে একমনে সিগেরেট ফুঁকছিল প্রলয়। কার্ডটা তখনি তার হাতে তুলে দিয়ে বললাম,
"সামনের মাসের পনের তারিখ আমার বিয়ে। আপনি অবশ্যই আসবেন! "
সাথে সাথেই অমাবস্যার ঘন অন্ধকার জমাট বাঁধে প্রলয়ের সমস্ত চেহারায়!কিছুক্ষণ নীরব থেকে হঠাৎ এক গাল হাসি দিয়ে বলে,
"বিয়ের মেন্যু কি আপনার? "
"পোলাও, রষ্ট, খাসির রেজালা.."আমি উত্তর দেই।
প্রলয় আশাহত হবার ভঙ্গি করে বলে,
"ধূর! কাচ্চি বিরিয়ানি হলে ভালো হতো। ওটা আমার বেশি পছন্দের!..অবশ্য পোলাও ও খারাপ না। আপনি পোড়া পোলাও এর সাথে ডাল দিয়ে খেয়েছেন কখনো? "
আমি মাথা নেড়ে বলি, "না!"
প্রলয় চোখ বন্ধ করে বলল,"কি যে স্বর্গীয় খাবার! আহা!"
"আপনার বিয়ের মেন্যুতে ডাল হবে তো?"
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ি। প্রলয় সবগুলি দাঁত বের করে হেসে বলে,
"ব্যাস!তাহলে আর কি। এই বিয়ে তো মিস করার প্রশ্নই ওঠে না!"
বিয়ের কার্ডটা হালকা নেড়েচেড়ে দেখল প্রলয়।আমার নামের উপরে পরম মমতায় আঙুল বুলিয়ে বলল,
"আপনার নামটা সোনালি রঙে দারুণ দেখায় চিত্রা! "
"ধন্যবাদ!", আমি বললাম।
"আমি আপনাকে মনে মনে একটা নামে ডাকি। সেই নামটারও কিন্তু সোনালী রঙের সাথে একটা সম্পর্ক আছে! নামটা কি, সেটা শুনতে চান? "
আমি চোখ মুখ শক্ত করে বলি,
"না! চাইনা!"
প্রলয়কে আর কিছু না বলে আমি গটগট করে চলে যাই ছাদ থেকে। রিতীমত দৌড়ে নামতে থাকি সিঁড়িগুলো বেয়ে।
.
এ টা হুমায়ূনের উপন্যাস নয়। হলে হয়ত আমি ও রুপার মতন দুঃখবিলাশী প্রেমিকা হতে পারতাম। যেখানে আমি বেঁচে আছি।সেটা জীবন। বড় নিষ্টুর, বড় বাস্তববাদী। এখানে প্রলয়ের মতন ছেলেরা, ভুলেভালে মনের ঘরে ঢুকে পড়লেও। তাদের সসম্মানে দরজা দেখিয়ে দিতে হয়। আমিও তাই করছি! তবুও এত কেন কষ্ট হচ্ছে আমার! তবুও কেন মনে হচ্ছে, এইসব বাস্তবতার নির্দয় জঞ্জাল ছুড়ে ফেলে দেই সমাজের আস্তাকুড়ে। ছুটে গিয়ে ধরে ফেলি প্রলয়ের হাতটাকে। ওর বুকে মাথা পেতে হৎপিন্ডের গান শুনে যাই বাকীটা জীবন। একটা আঁকাবাঁকা রাস্তায় হেটে বেড়াই ওর সাথে। যেখানে কানে বাজবে ওর কবিতা, আর পায়ের নিচে থাকবে অযুত লক্ষ কৃষ্ণচূড়া! জানি এইসব অসম্ভব! জানি এইসব অলীক চিন্তা ছাড়া কিছু নয়। ও একটা ভাঙাচোরা এলোমেলো ছেলে। ওর মায়ায় পড়ার অধিকার আমার নেই। অথচ মায়া কাটাবার এতটুকু সাধ্য ও নেই! কি অদ্ভূত! কি অদ্ভূত!
পুনশ্চ : আমার বিয়েতে, প্রলয় সত্যি সত্যি ডাল দিয়ে পোড়া পোলাও খেতে এসেছিল কিনা জানি না। তবে বিয়ের দামী দামী উপহারের প্রাচুর্যের মধ্যে, অবহেলায় এক কোণায় পরে থাকা খসখসে বাদামী কাগজে মোড়ানো একটা উপহার আমার চোখে পড়েছিল। মোড়ক সরিয়ে দেখি জীবনানন্দ দাশের "ধূসর পাণ্ডুলিপি "। ভেতরে উপহার দাতার কোন নাম লেখা ছিল না। শুধু একটা বাক্য লেখা ছিল,
"হেমনলিনী, আপনাকে দিলাম আমার সমস্ত না বলা কবিতা! "
লেখা: রেহনুমা কাদীর
#মন_মৃদঙ্গ