একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ (বাজেট) অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার।
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে বিকেল ৫টা থেকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। এটি হবে তার তৃতীয় বাজেট ঘোষণা আর স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০তম বাজেট।
ছয় শতাংশেরও বেশি ঘাটতি থাকা এই বাজেটে মোট জিডিপির পরিমাণ ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদের মন্ত্রিসভা কক্ষে বিশেষ মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের পর এটি উপস্থাপন করা হবে।
সংসদীয় সচিবালয়ের সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ের বাজেটের মতো এই অধিবেশন দু সপ্তাহের বেশি হবে না এবং খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে পুরো অধিবেশনটি সম্পন্ন হবে।
গত বছর করোনা মহামারির কারণে বাজেট অধিবেশন ৯ কর্মদিবসের পর স্থগিত করা হয় যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত বাজেট অধিবেশন।
প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্বে শুধুমাত্র বাজেট এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজের বিষয়ে আলোচনা হবে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবারও কোভিড টেস্টের নেগেটিভ সনদ নিয়ে সংসদ সচিবালয়ে প্রবেশ করবেন। এছাড়া বয়োজ্যেষ্ঠ ও অসুস্থ এমপিদের সংসদ অধিবেশেনে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
দূরত্ব বজায় রাখতে প্রতিদিন ১০০ এরও কম সংসদ সদস্যদের নিয়ে এই অধিবেশন পরিচালনা করা হবে। সংবিধান অনুসারে ৩০ জুনের আগে বাজেট পেশ করার ব্যাপারে বিধিনিষেধ রয়েছে এবং বাজেট চলাকালীন অধিবেশনে সাংসদদের অংশগ্রহণের বিধান রয়েছে।
বাজেটে ব্যয় ও আয় : আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটের আকার বা ব্যয় ধরা হচ্ছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে বাজেটের আকার বাড়ছে ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
আগামী বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হচ্ছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে আয় বাড়ছে ১১ হাজার কোটি টাকা। মোট আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরেও এনবিআরকে একই পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া রয়েছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হচ্ছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী বছরে বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হচ্ছে তিন হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ধরা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এডিপি ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) অনুমোদন করেছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ ধরা হচ্ছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৬.২ শতাংশ। আর অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হচ্ছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৬.১ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এ খাতের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে নেয়া হবে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা। নতুন বাজেটে বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।
আসছে বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সর্বাধিক গুরুত্ব স্বাস্থ্য খাতে : আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৭.৪ শতাংশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী বাজেটে নতুন কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এবং বিভাগীয় শহরের বাইরে হাসপাতাল-ক্লিনিক নির্মাণে বিনিয়োগ করা হলে ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হতে পারে। ২০৩১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুযোগ মিলবে। পাশাপাশি সরকারি সব হাসপাতালকে অত্যাধুনিক করা হবে। আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ করোনা মোকাবেলার পর্যাপ্ত সামগ্রী কেনা হবে। এ ছাড়া করোনা মোকাবেলায় নতুন দুই হাজার চিকিৎসক, ছয় হাজার নার্স এবং ৭৩২ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হবে। তাদের জন্য আসছে বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশেষ বরাদ্দ : চলতি অর্থবছরে করোনা মোকাবেলা, বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা কেনা বাবদ সরকার ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। তাই আগামী বাজেটেও পৃথক ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ থাকবে।
করপোরেট করে ছাড় আসছে : করোনার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে করপোরেট করে ছাড় দিতে পারে সরকার। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট কর হার ৩০ শতাংশ করা হতে পারে। এটি এখন সাড়ে ৩২ শতাংশ। সম্প্রতি কোম্পানি আইন সংশোধন করে এক ব্যক্তির নামে কোম্পানি খোলার সুযোগ দিয়েছে সরকার। এ ধরনের কোম্পানির কর হার ২৫ শতাংশ করা হতে পারে। আর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারও কিছুটা কমানো হতে পারে বলে জানা গেছে।