দিনাজপুরের পার্বতীপুরে রাস্তার পাশ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার পরিচয় নিশ্চিত করে জানা যায় তার নাম রুখিয়া রাউৎ (২৩)। নিহত রুখিয়া রাউৎ রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক শেষবর্ষের শিক্ষার্থী। বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মিশনপাড়ায়। তার বাবার নাম দিনেশ রাউৎ।
রুখিয়া রাউৎকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আনিছুর রহমান (৩০) এবং তার সহযোগী অটোচালক রাজ মিয়া (২৮) ও আশিকুজ্জামানকে (২৭) গত বুধবার (০৭ অক্টোবর) ভোরে নিজ নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এরপর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য তাদের দিনাজপুর আদালতে নেওয়া হয়।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (০৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রংপুরে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন রুখিয়া। বান্ধবীদের সঙ্গে একরাত থেকে পরের দিন তার ফিরে আসার কথা ছিল। শেষবার ফোনে মা সুমতিকে তিনি বলেন, ‘মা রংপুর যাচ্ছি। চিন্তা করিস না। সকালে আবার ফিরে আসব।’ এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন তিনি আর বাড়িতে ফিরে না আসায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের লোকজন।
পরের দিন মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) সকালে পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের পাঁচপুকুরিয়ার শালবাগান থেকে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার করেন মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। উদ্ধারের সময় মরদেহের হাত-পা ওড়না দিয়ে গলার সঙ্গে বাঁধা ছিল। পরনে ছিল সালোয়ার-কামিজ। রক্তাক্ত ও ক্ষত-বিক্ষত ছিল মুখ, দাঁতগুলো ছিল ভাঙা। দুর্বৃত্তরা নির্দয়ভাবে হত্যার পর অটোরিকশায় করে সেখানে লাশটি ফেলে যায়। পরে মধ্যপাড়া পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সেখানে পিবিআই এর একটি তদন্তদল তার হাতের আঙ্গুলের ছাপ এর সাহায্যে জাতীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। পরে বদরগঞ্জ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন তারা।
রুখিয়ার বাবা দিনেশ রাউৎ বলেন, ‘ঐ এলাকারই আবদুল গফুরের ছেলে আনিছুল প্রায় সময় রুখিয়াকে বিরক্ত করত। হোস্টেল থেকে বাড়িতে এলে সে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে রুখিয়াকে। একপর্যায়ে সে প্রেমের প্রস্তাব দেয় আমার মেয়েকে।’
গত সোমবার (০৫ অক্টোবর) বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে কোনো এক সময় রুখিয়া তার ডায়েরিতে কিছু কথা লিখে যান। তিনি লিখেছেন, ‘আত্মহত্যা করতে গিয়ে কোনোভাবে বেঁচে গেলাম। আজ ৫/১০/২০২০ আমাকে আনিছুল দূরে কোথাও ডেকেছে। যেখানে ও নিজের হাতে আমাকে হত্যা করবে। এ কথা ও নিজে বলেছে যে, ও আমাকে নিজের হাতে হত্যা করবে। আমার সবকিছুর জন্য আনিছুল দায়ী।’ পড়ার টেবিল থেকে রুখিয়ার ডায়েরি উদ্ধার করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
পার্বতীপুর মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নির্দয়ভাব মেয়েটিকে হত্যার পর লাশ ফেলে যায়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন আনিছুল হকসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এতে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা জানতে তদন্ত চলছে।’ অপরদিকে পার্বতীপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আলামত হিসেবে বেশকিছু জিনিসপত্রও তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।’