প্রতিবন্ধী রিকশাচালক নাজমুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রংপুরে শনিবার অর্ধদিবস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে রংপুর মহানগর ব্যাটারিচালিত রিকশা ভ্যান ও অটোরিকশা জাতীয় মোটর শ্রমিক পার্টি। শনিবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চালকরা অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
নগরীর শাপলা চত্বর, বাস টার্মিনাল লালবাগ মর্ডান মোড়, সাতমাথা, জাহাজ কোম্পানী মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন অটোরিকশা ও ভ্যান শ্রমিক ও চালকরা। তারা অটোরিকশা ভ্যান আসামাত্রই সেগুলো থেকে গ্রাহক যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। অনেক জায়গাতেই চাকার হাওয়া ছেড়ে দিতেও দেখা গেছে। একারণেই সকালে উঠেই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসে যাওয়া ও কাজে যাওয়া যাত্রীরা। অন্যদিকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
আব্দুল কুদ্দুস নামের এক যাত্রী জানান, আমরা ঢাকা থেকে এসে অটো পাচ্ছিনা। বৃদ্ধা মা ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব কষ্ট করে হেঁটে যাচ্ছি। ধর্মঘটের বিষয়টি জানা থাকলে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
সানজিদা লিপি নামের এক যাত্রী জানান, অটোরিকশা, ভ্যান না পাওয়ায় টার্মিনাল থেকে হেঁটে যাচ্ছি স্টেশনে। সেখানে একটি গার্মেন্টস কারখানায় আমি কাজ করি। কারখানায় যেতে আমার আজকে ন্যূনতম এক ঘণ্টা দেরি হবে।
রংপুর রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কান্তি রায় জানিয়েছেন, নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে নাজমুলকে ওই পুলিশ সদস্য ও তার পরিবারের লোকজন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা নিয়েছে। এই মামলা আমরা মানি না। অবিলম্বে হত্যা মামলা রুজু করে হাসান তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম এবং দালাল কাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। ধর্মঘট দুপুর দুইটা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর আশরতপুর কোর্টপাড়া এলাকায় পুলিশ সদস্য হাসান আলীর ভাড়া বাসা থেকে প্রতিবন্ধী রিকশাচালক নাজমুল ইসলামের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে কনস্টেবল হাসান আলী ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী। ঘটনার পরপরই ওই পুলিশ সদস্য ও তার স্ত্রীকে আটক করা হয়।
মঙ্গলবার রাতে ওই রিকশা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসান আলীর সঙ্গে নাজমুলের বিরোধ হয়। এরই জের ধরে প্রতিবন্ধী নাজমুলকে মারধর করেন হাসান আলী। একপর্যায়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে আশরতপুর কোর্টপাড়া এলাকার নিজের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে যান হাসান আলী।
বুধবার সন্ধ্যায় তার ওই বাড়ি থেকে নাজমুলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন রাতে নাজমুলের স্ত্রী শ্যামলী বেগম বাদী হয়ে পুলিশ কনস্টেবল হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগমকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত শুনানি শেষে হাসান আলী ও তার স্ত্রীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রবিবার এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী শ্যামলী বেগম ও স্থানীয়দের অভিযোগ, রংপুর পুলিশ সেন্টারে কর্মরত কনস্টেবল হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগম পিটিয়ে প্রতিবন্ধী অটো রিকশাচালক নাজমুলকে হত্যা করেছেন।