আজ বিশ্ব হিজাব দিবস। বিশ্বের অন্তত ১৫০টি দেশে আজ মঙ্গলবার দিবসটি পালিত হচ্ছে। আজ থেকে নয় বছর আগে ২০১৩ সালে ১লা ফ্রেব্রুয়ারিতে দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা শুরু হয়। হিজাব একটি আরাবী শব্দ এর অর্থ আবৃত রাখা। অর্থাৎ একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী তার শরীরের সৌন্দর্য প্রকাশ করে এমন অংশকে ঢেকে রাখাকে হিজাব বলে। একজন বাংলাদেশী নারীর মাধ্যমে হিজাব দিবসের শুরু। তিনি নাজমা হোসেন খান। তিনি মূলত আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলতে সব ধর্ম ও বর্ণের নারীদের হিজাব পরার আহ্বান জানান। কিন্তু কেন তিনি হিজাবের প্রতি নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন, তার পেছনে রয়েছে একটি বিশেষ কারণ। তা হলো, নাজমা খান তখন নিউ ইয়র্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরইমধ্যে টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর যখন তিনি হিজাব পরে ক্যাম্পাসে গেলেন সবাই তাকে নিয়ে কটুক্তি করল। তিনি বলেন, ‘স্কুলে আগে আমাকে বলা হতো ‘ব্যাটম্যান’ বা ‘নিনজা’। আর ৯/১১-এর পর যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতাম, তখন আমাকে ডাকা হতো ওসামা বিন লাদেন অথবা সন্ত্রাসী। এটি ছিল আমার জন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক।’ নাজমা আরও বলেন, ‘স্কুলে কেবল আমিই হিজাব পরতাম। এ জন্য নানা বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। তাই ভাবলাম, অমুসলিম নারীরা যদি মাত্র এক দিনের জন্য হলেও হিজাব পরেন, তাহলে মুসলিম নারীদের আর এ ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হবে না।’ মূলত এই বৈষম্যের অবসান আর মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে ২০১৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে হিজাব পরার আহ্বান জানান নাজমা। তিনি জানান, তার বিশ্বাস ছিল, দিনটি উদযাপন হলে এই বৈষম্য কিছুটা হলেও দূর হবে। নাজমার সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েই বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ১৫০টি দেশের নারীরা উদযাপন করছেন দিনটি। এ বছরে দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- ‘হিজাব ইজ আওয়ার ক্রাউন, নট অ্যা ক্রাইম’ বা ‘হিজাব আমাদের মুকুট, কোনো অপরাধ নয়’। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নিজেদের সম্মান এবং মর্যাদা রক্ষার মাধ্যম হিসেবে মুসলিম নারীরা হিজাব পরিধান করলেও এটি এখন সব ধর্মের নারীর কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষত করোনার গত দুই বছর হিজাব ও পর্দার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কিছুদিন আগে নিউইয়র্ক টাইমস ইসলামিক ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন কাউন্সিলের প্রধান আলিয়া খানের নারীদের ফ্যাশনসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ছেপেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি শালীন ও নির্মল জীবন গঠনের জন্য সাধারণত শৈশব থেকেই মুসলমানরা একই সাথে শালীনতা ও কমনীয়তায় বেড়ে উঠতে থাকে। করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য মুখমণ্ডল আচ্ছাদিত করার বিষয়টি একটি স্বাভাবিক আচরণে রূপ নিয়েছে। আমি বুঝতে পারছি, ইসলামী ফ্যাশন তো এর কথাই বলে এবং এরূপ পরিচ্ছদের প্রতিই উৎসাহ দেয়, যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আবর্জনা থেকে মুখমণ্ডল মুক্ত রাখে।