ঢাকা   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৫ রজব ১৪৪৬

গাজায় আক্রমণ সবে শুরু: নেতানিয়াহু

আন্তর্জাতিক

বিডিটোন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৫৫, ১০ অক্টোবর ২০২৩

আপডেট: ১৩:৫৬, ১০ অক্টোবর ২০২৩

গাজায় আক্রমণ সবে শুরু: নেতানিয়াহু

গাজায় আক্রমণ

হামাসের হামলার জবাবে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর আক্রমণ ‘কেবল শুরু হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। অন্যদিকে হামাস হুমকি দিয়েছে যে- বেসামরিক নাগরিকদের সতর্ক না করে যতবার বিমান হামলা চালানো হবে, ততবার একজন করে বন্দী হত্যা করবে তারা।

ফিলিস্তিনে স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে শুরু হওয়া এই হামলার জের ধরে এখন পর্যন্ত ইসরাইল ও ফিলিস্তিনে দুই পক্ষ মিলিয়ে দেড় হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।

ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০০ জন। আর ফিলিস্তিনে এখন পর্যন্ত মারা গেছে প্রায় ৭০০ মানুষ।

হামাসের সশস্ত্র অংশ আল কাসাম সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামে এক বার্তার মাধ্যমে ইসরাইলি বন্দীদের হত্যার হুমকি দিয়েছে।

তারা জানিয়েছে, ‘পূর্ব সতর্কতা ছাড়া বেসামরিক আবাসস্থলে নতুন করে বোমা ফেলা হলে আটক থাকা ইসরাইলি নাগরিকদের হত্যা করা শুরু করা হবে।’

আল কাসামের মুখপাত্র আবু ওবাইদা টেলেগ্রাম পোস্টে মন্তব্য করেছেন, ইসরাইলের বিমান হামলায় শিশু, নারী আর বয়স্করা ঘরের ভেতরে থাকা অবস্থায় মারা গেছে।

‘এখন থেকে খেলার নিয়ন্ত্রণ আর ইসরাইলের হাতে নেই।’

তবে সোমবার বিবিসি’র রেডিও ফোর’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান বাসেম নাইম মন্তব্য করেছেন যে- বন্দীদের সাথে ‘মানবিক ও সম্মানজনক ব্যবহার’ করবে তারা।

বন্দীদের সংখ্যা বলতে রাজি না হলেও তিনি জানান যে- হামাস শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ দেইফ ‘বয়স্ক, বেসামরিক ও শিশুদের সম্মান করতে’ ও ‘যুদ্ধের সাথে জড়িত না থাকাদের হত্যা না করতে’ নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসরাইলের হুঁশিয়ারি
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সোমবার রাতে এক বক্তব্যে বলেছেন যে- ‘আমরা তাদের শক্তভাবে দমন করবো। আমরা মধ্যপ্রাচ্য বদলে দেবো।’

ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে ‘কঠিন ও ভয়াবহ’ পাল্টা হামলা করবে বলে দক্ষিণ ইসরাইলের ক্ষতিগ্রস্ত একটি অঞ্চল পরিদর্শন করতে গিয়ে মন্তব্য করেন নেতানিয়াহু।

তার বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘এটি কেবল শুরু হলো। আমরা কঠোরভাবে তাদের দমন করবো।’

ইসরাইল এই সংঘাতের শুরু থেকেই দাবি করে আসছে যে- গাজার হামাস ঘাঁটিতেই তারা আক্রমণ করছে।

ইসরাইলের সেনাবাহিনী মঙ্গলবার ভোরে এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানিয়েছে যে- শুধু সোমবারেই তারা হামাসের দুই হাজারের বেশি ঘাঁটিতে বিমান হামলা করেছে।

এটি এখন পর্যন্ত গাজায় ‘হামাসের বিরুদ্ধে বৃহত্তম বিমান হামলা’ বলে দাবি করছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী।

গাজায় মানবেতর পরিস্থিতি
ইসরাইলের কর্তৃপক্ষ গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাবার, পানিসহ সব ধরনের সেবা বন্ধে ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ দেয়ার পর বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গাজায় বসবাসরত সাধারণ মানুষ।

জাতিসঙ্ঘের শিশু তহবিল, ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে- সংঘাতের অঞ্চলে মানবিক পরিস্থিতির ‘দ্রুত অবনতি’ হচ্ছে। এসব এলাকায় সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করে থাকা শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য নিরাপদে চলাচলের সুযোগ করে দেয়া প্রয়োজন।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, আমি সব পক্ষকে বলতে চাই যে এই যুদ্ধে, অন্য সব যুদ্ধের মতো সবার আগে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় শিশুদের।

‘গাজায় বিদ্যুৎ, খাবার ও পানি সরবরাহ বন্ধের পদক্ষেপ নেয়ায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই পদক্ষেপ শিশুদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে’, বিবৃতিতে মন্তব্য করেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক।

জাতিসঙ্ঘ রোববার এক বিবৃতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে যে- চলমান সংঘাতে গাজার প্রায় এক লাখ ২৩ হাজার মানুষ ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারা জানিয়েছে যে- এর মধ্যে প্রায় ৭৪ হাজার মানুষ জাতিসঙ্ঘের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে।

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরেইলের বিমান হামলায় গাজায় জাতিসঙ্ঘের একটি স্কুল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওই স্কুল ভবনে শিশু ও বয়স্কসহ শত শত বেসামরিক নাগরিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্কুল ভবনে হওয়া এই হামলাকে ‘পাশবিক’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে
বিবিসি’র কূটনৈতিক প্রতিবেদন পল অ্যাডামস আশঙ্কা করছেন যে- গাজাকে ঘিরে ফিলিস্তিনের সাথে ইসরাইলের পূর্ববর্তী ‘যুদ্ধের’ মতো পরিস্থিতি হতে পারে এই যুদ্ধেও।

ইসরাইল জানে যে তারা যদি গাজায় বড় ধরনের সেনা অভিযান চালায়, সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সহানুভূতি থাকায় তাদের বিরুদ্ধে খুব বেশি সমালোচনা হবে না।

ইসরাইলের সাবেক একজন সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পল অ্যাডামস জানাচ্ছেন যে- ইসরাইল গাজায় অভিযান শুরু করলে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে সেই অভিযান থামানোর আহ্বান আসতে ‘অন্তত দুই সপ্তাহ’ লাগবে। আর এরকম পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্য কোনো পক্ষের হুঁশিয়ারি কোনো ভূমিকা পালন করবে না।

ইসরাইল যদি হামাসের বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলা চালাতে চায়, তাহলে তাদের স্থলভাগে আক্রমণ বাড়াতে হবে। আর সেরকম পরিস্থিতিতে বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়বে।

অন্যদিকে হামাসের হাতে বন্দী থাকা ইসরাইলি নাগরিকদের তারা হত্যা করা শুরু করলেও পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলে সাবেক ইসরাইলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলছেন, পল অ্যাডামস।

অন্যদিকে, ইসরাইলের উত্তর দিকে লেবানন থেকেও টানা দ্বিতীয় দিন ছোট আকারের হামলা হয়েছে ইসরাইলের ভেতরে।

ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলছে, লেবাননের ধায়রা শহর থেকে অন্তত ছয় জন সশস্ত্র যোদ্ধা ইসরাইলে প্রবেশ করার চেষ্টা করে এবং ইসরাইলের নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে তাদের কেউ কেউ মারা যায়।

এছাড়া লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরাইলের ভেতরে মর্টারের গোলাও ছোড়া হয়েছে।

যদিও সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ বলছে যে- তারা এই হামলার সাথে জড়িত নয়।

তবে এর আগের দিন রোববারেই ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তু উদ্দেশ্য করে বোমা ও রকেট ছুঁড়েছে হিজবুল্লাহ। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন প্রকাশেই ওই হামলা করেছিল বলে জানিয়েছিল তারা।

মধ্যপ্রাচ্যের মিডিয়া যেভাবে এই হামলা তুলে ধরছে
মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যম সাম্প্রতিক এই সংঘাত যেভাবে তুলে ধরেছে তা বিশ্লেষণ করেছেন বিবিসি সংবাদদাতা ফ্লোরেন্স ডিক্সন।

সৌদি আরবভিত্তিক আশরাক আল-আওসাত হামাসের এই হামলার সময়টিকে ‘সন্দেহজনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব আর ইসরাইলের মধ্যে একটি সমঝোতা প্রক্রিয়া গত কিছুদিন ধরে চলমান ছিল।

পত্রিকাটি বলছে- “ইরান ওই অঞ্চলে সত্যিকারের শান্তি চায় না। বিশেষ করে সৌদি-ইসরাইল শান্তি চায় না, কারণ তা পুরো অঞ্চলের চেহারা পরিবর্তন করে দেবে।

অন্যদিকে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন আল জাজিরা বলছে যে- এই হামলা প্রমাণ করে যে- ইসরাইলের সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার জন্য ‘যোগ্যতা, সামর্থ্য ও রসদ’ রয়েছে হামাসের।

আর ইসরাইলের গণমাধ্যম আগে থেকে এই হামলার বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত না পাওয়ায় তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আর সেনাবাহিনীর প্রস্তুতির সমালোচনা করছে। সূত্র : বিবিসি