ঢাকা   শনিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আসাদের পতনের নায়ক কে এই জোলানি?

আসাদের পতনের নায়ক কে এই জোলানি?

আসাদের পতনের নায়ক কে এই জোলানি?

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে ইসলামপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। এইচটিএসের প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি।

রোববার এইচটিএস এক বিবৃতিতে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের ঘোষণা দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, জালিম শাসক বাশার আল-আসাদ দেশ থেকে পালিয়েছেন। সিরিয়া এখন মুক্ত। এর মধ্য দিয়ে এক অন্ধকার যুগের সমাপ্তি ঘটল। আর সূচনা হলো এক নতুন যুগের।

বাশার আল-আসাদের দেশ থেকে পালানো, তার টানা দুই যুগের সরকারের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে এইচটিএসের প্রধান জোলানিকে নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘সবচেয়ে কার্যকর’ ভূমিকা পালন করেছে এইচটিএস ও এর প্রধান জোলানি।

এইচটিএসের ঘোষিত লক্ষ্যই ছিল বাশার আল-আসাদের স্বৈরাচারী শাসন থেকে সিরিয়াকে মুক্ত করা। এইচটিএস আজ এই লক্ষ্য অর্জনের ঘোষণা দিল।

রোববার বিদ্রোহীরা দামেস্কে প্রবেশ করার সাথে সাথে জোলানি রাজধানীতে সমস্ত সামরিক বাহিনীকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

জোলানি ১৯৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দামেস্কের একটি অভিজাত এলাকা মাজেহে বেড়ে ওঠেন। জোলানি একটি সচ্ছল পরিবার থেকে এসেছেন এবং ভাল ছাত্র ছিলেন।

তার আসল নাম আহমেদ আল-শারা। তিনি ২০২১ সালে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম পিবিএসকে বলেন যে তার গৃহীত নাম আল-জোলানি, গোলান (জোলান) হাইটসে তার পরিবারের শিকড়ের স্মারক। তিনি জানান,  ১৯৬৭ সালে এই অঞ্চলটি ইসরাইল সংযুক্ত করে নেওয়ার তার দাদাকে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।

দামেস্কে থাকাকালে জোলানি ঠিক কী করতেন, তা জানা যায়নি। মিডলইস্ট আই নিউজ ওয়েবসাইট জানায়, ২০০১ সালের নাইন-ইলেভেনের পর জোলানি প্রথম জিহাদি চিন্তাধারার দিকে আকৃষ্ট হন। ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর তিনি যুদ্ধে অংশ নিতে সিরিয়া ত্যাগ করেন। তিনি আবু মুসাব আল-জারকাভির নেতৃত্বে ইরাকে আল-কায়েদায় যোগদান করেন ২০০৬ সালে জোলানি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হন। তাকে পাঁচ বছর আটক রাখা হয়।

গণতন্ত্রের দাবিতে ২০১১ সালে সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমনে বাশার আল-আসাদ সহিংসতার পথ বেছে নেন। এর জেরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।

জোলানি দেশে ফিরে আসেন এবং আল-কায়েদার সিরিয়ার শাখা আল-নুসরা ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সালে তিনি ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর আমির আবু বকর আল-বাগদাদির আনুগত্য অস্বীকার করে আল-কায়েদার আইমান আল-জাওয়াহিরির প্রতি আনুগত্যের শপথ নেন।

এক সময় জোলানির মধ্যে পরিবর্তন আসে। তিনি আল-কায়েদার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয় ‘বিশ্বব্যাপী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার প্রকল্প থেকে সরে আসেন। এমন কিছুর পরিবর্তে সিরিয়া সীমান্তের ভেতরে নিজের গোষ্ঠীর তৎপরতা সীমাবদ্ধ করেন জোলানি।

জোলানি ২০১৫ সালের মে মাসে বলেছিলেন যে আইএসের বিপরীতে তার পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর কোনো ইচ্ছা নেই। তিনি আরো ঘোষণা করেছিলেন যে আসাদ পরাজিত হলে সংখ্যালঘু আলাভিদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক আক্রমণ হবে না।

জোলানির এ পরিবর্তনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তারা মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে জোলানির গোষ্ঠীটি বহুজাতিক বা আন্তদেশীয় গোষ্ঠীর বদলে একটি জাতীয় গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়।

২০১৬ সালের জুলাইয়ে বাশার সরকার আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ইদলিবের দিকে চলে যায়। সিরিয়ার এ অঞ্চল তখনো বিদ্রোহীদের দখলে। এবছর জোলানি প্রকাশ্যে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি আল-নুসরা বিলুপ্ত করেন। গঠন করেন নতুন সংগঠন জাভাত ফাতেহ আল-শাম।

২০১৭ সালের শুরুর দিকে আলেপ্পো থেকে হাজার হাজার যোদ্ধা ইদলিবে পালিয়ে আসেন। এ সময়ে বিদ্রোহীদের ছোট ছোট অনেক গোষ্ঠী ও নিজের জাভাত ফাতেহ আল-শাম নিয়ে এইচটিএস গঠন করেন জোলানি।

তিনি এই সপ্তাহের শুরুর দিকে বলেছিলেন যে তার আক্রমণের উদ্দেশ্য হলো আসাদকে উৎখাত করা।

জোলানি এখন স্পটলাইটে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার বিবৃতি ও দিচ্ছেন। সারা বিশ্বের সিরীয়রা ভবিষ্যতে কী হতে পারে তার ইঙ্গিত পেতে তার বক্তব্য শোনার জন্য সারাক্ষণ মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে আছেন।

জনপ্রিয়