গরমের সময় বড় আতঙ্ক সোডিয়ামের ঘাটতি
প্রচণ্ড গরম এখন। বাড়ির বাইরে বের হলেই ঘামে ভিজছে জামা। কমছে এনার্জিও। আর এতেই লুকিয়ে বিপদ। ঘামের সাথে বের হয়ে যাচ্ছে প্রচুর লবণও। ঘাটতি হচ্ছে সোডিয়ামের। এই ভারসাম্য নষ্ট হলেই বিগড়ে যেতে পারে শরীর। ভুলের বাতিক, আচ্ছন্নভাব, মাথা ঝিমঝিম থেকে খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে।
সোডিয়াম বেশিমাত্রায় রক্তে থাকে। কোষের মধ্যে প্রবেশ করে খুব অল্প। এটি অতি প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট যা কোষের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে। সোডিয়াম কোষের পর্দা তৈরি হতে সাহায্য করে। পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোষের ক্ষতি হয় মারাত্মক। রোজ ৭০-৮০ এম ই কিউ সোডিয়াম প্রয়োজন। সব বয়সীদের জন্য রক্তে সোডিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১৩৫-১৪৫ এমইকিউ/লিটার। এর থেকে কমে গেলেই সমস্যা।
তিন ধরনের হাইপো নেট্রিমিয়া দেখা যায়:
মাইল্ড হাইপো নেট্রিমিয়া ১৩০-১৩৪ এমইকিউ/লিটার।
মডারেট হাইপো নেট্রিমিয়া ১২৫-১২৯ এমইকিউ/লিটার।
সিভিয়ার হাইপো নেট্রিমিয়া ১২৫ এমইকিউ/লিটারের নিচে সোডিয়ামের মাত্রা থাকলে।
কারা আক্রান্ত?
সোডিয়াম কমে যাওয়ার পোশাকি নাম, হাইপোনাট্রেমিয়া। তিন ধনের কারণ আছে যার জন্য কমতে পারে সোডিয়াম।
প্রচুর বমি হলে বা পেটের গোলমাল হলে বা মারাত্মক ঘাম হলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়। সঙ্গে কমতে থাকে লবণ বা সোডিয়ামের পরিমাণও। একে বলা হয় হাইপোভোলেমিক হাইপোনেট্রিমিয়া।
আবার এডিএইচ হরমোন ক্ষরণ সমস্যা হলে শরীরে পানির পরিমাণ বাড়তে থাকে। সেই তুলনায় সোডিয়ামের পরিমাণ বাড়ে না।
ফলে মূত্রে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। এক্ষেত্রেও শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। এধরনের সমস্যাকে বলা হয় ইউ ভোলেমিক হাইপোনেট্রিমিয়া।
সিরোসিস অফ লিভার, কিডনি ফেলিওর বা হার্ট ফেলিওরের মতো সমস্যা দেখা দিলে শরীরে পানি ও সোডিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়। একে বলা হয় হাইপারভোলেমিক হাইপো নেট্রিমিয়া।
তিন ধরনের সমস্যার চিকিৎসা আলাদা আলাদা।
হাইপোভলেমিকের ক্ষেত্রে সাধারণ স্যালাইন চালানো হয়। লবণসহ পানীয় পানের পরামর্শ দেয়া হয়।
ইউভলেমিকের ক্ষেত্রে পানিপান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। খাবারে লবণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়।
হাইপারভলেমিক নেট্রোমিয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে শরীর থেকে পানি বের করে দেয়া হয়। এতে সোডিয়ামের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রিত হয়।
শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখতে কী কী প্রয়োজন?
রোজ অন্তত তিন লিটার পানি পান করুন।
সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
অত্যধিক ঘাম বা বমি হলে বারেবারে লবণ-চিনির পানি পান করুন।
লিকুইড ওআরএসের বদলে ওআরএস কিনে পানিতে গুলে পান করুন।
অত্যধিক রোদ এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত সবজি ও ফল খান।
সোডিয়াম সাধারণ সমস্ত খাবারের মধ্যেই যথেষ্ট থাকে। তবে শুধু লবণ খেয়ে সোডিয়ামের অভাব মেটে এই ধারণা ভুল। এতে কিডনির ক্ষতি হয় মারাত্মক।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন