প্রচুর সংখ্যক গবেষণার ফলাফল বলে যে যদি সুস্থ থাকতে চান, একা নয়, পরিবারের সাথে থাকুন। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন। নিজের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিন। মন সুস্থ থাকবে- শরীর সুস্থ থাকবে।
ডিউক ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল সেন্টারে ১০০০ এর অধিক হৃদরোগে আক্রান্তদের নিয়ে পরিচালিত একটা গবেষণায় উঠে আসে যে হৃদরোগে আক্রান্ত যেসব রোগীরা পরিবারের সঙ্গে থাকেন বা তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে, তাদের থেকে যাদের পরিবারে আর কেউ নেই কিংবা কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধু নেই, তাদের হৃদরোগ ডায়াগনোসিসের ৫ বছরের মধ্যে মৃত্যুহার "৩ গুণ” বেশি।
নেবরেস্ক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিন কর্তৃক কয়েকশত বয়স্ক ব্যক্তিদের উপর পরিচালিত আরেক গবেষণায় দেখা যায় যে যেসব বয়স্ক ব্যক্তিদের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক (intimate relationship) আছে, তাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি এবং কলেস্টেরলের মাত্রা কম।
এমন অনেক গবেষণা হয়েছে এবং সবার গবেষণায় এটিই উঠে এসেছে যে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে আপনার কোন না কোন মানুষের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে যার সাথে আপনি সংশয়হীনভাবে, নি:সংকোচে আপনাকে প্রকাশ করতে পারবেন।
তাই, একা নয় পরিবারের সাথে থাকুন। ভালো মন-মানসিকতাসম্পন্ন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন। জীবন-ঘনিষ্ঠ হোন, প্রাণ-খুলে হাসুন, পরিবারকে সময় দিন, তাদের সাথে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিন। অচিরেই দেখবেন, কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়বে, কাজ ভালো হলে ঘুম ভালো হবে, ঘুম ভালো হলে শরীর তার নিজ নিয়মে সারাদিনের ক্লান্তি, ঘাত-প্রতিঘাত শূন্যে মিলিয়ে দিবে। পরের দিন সকালে আপনি আবার সম্পূর্ণভাবে চনমনে ভাব নিয়ে দৈনন্দিন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন, আর ভালো কাজ করলে, ব্যবসায়/চাকুরিতে আপনার দ্রুত উন্নতি ঘটবে। পেশাজীবনে উন্নতি হলে, আপনার আত্ম-বিশ্বাস এবং কাজের প্রতি আগ্রহ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
ফলাফল- আপনার আরও উন্নতি ঘটবে, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, এতে করে যেসব তথ্যের আদান-প্রদান হবে তা আপনার 'অত্যন্ত প্রয়োজনীয়' জ্ঞান-বৃদ্ধির জন্য ধনাত্মক-প্রভাবক হিসেবে এবং "সামাজিক ক্যাপিটাল" হিসেবে কাজ করবে। এই চক্র বহুমাত্রিক, প্রায় অসীম সম্ভাবনাময় এবং পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত।
দরকার শুধু একটা দরজা খোলার। বাকি কাজ প্রকৃতির আপন নিয়মেই গড়াবে। তবে, সেই চালিকাশক্তির মূলে কাজ করবে আপনার মূল্যবোধ, নীতিবোধ, উদ্ভাবনীশক্তি, আর এগিয়ে যাবার দৃঢ় সংকল্প। সর্বোপরি “বৃহত্তর কল্যাণের উদ্দেশ্যে” আপোষহীনভাবে কাজ করে যাওয়া হতে পারে একটি সুখী-সমৃদ্ধ জীবনের মূলমন্ত্র।
মোঃ তারেক খান
লাইফ কোচ ও পাবলিক স্পীকার
সহকারী পরিচালক,
ছাত্র-কল্যাণ অধিদপ্তর,
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক