অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ’রেমাল’, ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বাংলাদেশে আছড়ে পড়বে রেমাল। এরই মধ্যে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এটি উপকূলের ১৩টিসহ ১৮ জেলায় আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।
শনিবার (২৫ মে) রাতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক শেষে তিনি এমন তথ্য দেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোববার (২৬ মে) ভোর থেকে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানতে শুরু করবে। ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রমের সময় বাতাসের গতিবেগ ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে, কখনো কখনো এটি ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, রিমাল সন্ধ্যার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এ সময় ৮ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে উপকূল। এ অবস্থায় রোববার ভোরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আবাহাওয়ার বিশেষ বার্তা (৮ নম্বর) অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
এদিকে রেমালের প্রভাবে দেশের চারটি সমুদ্র বন্দরের ওপর সতর্ক সংকেত বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত ৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মি.মি) থেকে অতিভারী (২৮৯ মি.মি) বর্ষণ হতে পারে। এক নির্দেশনায় উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতেও বলা হয়েছে।আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে বর্তমানে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এ পরিণত হয়েছে।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
শনিবার ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর সন্ধ্যা থেকেই বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুরসহ উপকূলীয় বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রেমালের প্রভাবে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় বৃষ্টি ঝরছে। শনিবার রাত ৮টার পর থেকে বাড্ডা, ভাটারা, বারিধারা, গুলশান-২, বনানী ও শ্যামলী এলাকায় বৃষ্টি এবং আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ঝোড়ো হাওয়াসহ বাতাস বইছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি সন্ধ্যায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হয়েছে। যা সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি-১ শক্তিমাত্রার ঝড় হিসেবে ২৬ মে দিবাগত রাত থেকে ২৭ মে সকালের মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।