গত বিশ বছরের মধ্যে ব্যাক টু ব্যাক ফাইনালিস্ট। শুরুটা এতো সহজ ছিল না ফ্রান্সের জন্য। বিশ্বকাপ শুরুর পূর্বেই বড় ধরনের হোচট খায় ফ্রান্স জাতীয় দল। মূল একাদশের ৬ জন ইঞ্জুরি।স্কোয়াড ঘোষণা করার পরে সময়ের অন্যতম স্ট্রাইকার করিম বেঞ্জেমা ছিটকে পড়েন ইঞ্জুরিতে। ফুটবল ফিটনেসের খেলা। ফিটনেস খেলোয়াড় নিয়ে দল ঘোষণা করে কোচ দিদিয়ারের দেশম। ফ্রান্সের বিশেষ করে পল পগবা, এনগোলো কান্তে, করিম বেঞ্জেমা ছিটকে পড়া ফ্রান্স দলকে দূর্বল করে দেয়। ফিফা ট্রাডিশন অনুযায়ী পূর্বের বছরের চ্যাম্পিয়ন পরের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়।এই হিসাব নিকাশ কষে সামনে এগিয়ে যাওয়া ছিল দেশমের বড় চ্যালেঞ্জ। মাস্টারমাইন্ড কোচ দিদিয়ারের দেশম বড় স্বপ্ন নিয়ে কাতার বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় ফরাসি ফুটবল দল। নয় মিনিটের মাথায় পেনাল্টি পেয়ে এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ শেষে ফ্রান্সের দ্রুত গতির খেলায় ৪-১ গোলে পরাজয়বরণ করে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ম্যাচে শক্তিশালী ডেনমার্কের সাথে ২-১ গোলে জয়লাভ করে। ম্যাচে এমবাপ্পের জোড়া গোলে সহজ জয় পায় ফ্রান্স। ডেনমার্কের হয়ে এক গোল শোধ করেন ক্রিস্টেনসেন।প্রথম দুই ম্যাচ জয়লাভের পরে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হয়ে যাওয়াতে তৃতীয় ম্যাচে তিউনিসিয়ার সাথে দেশম সম্পূর্ণ নতুন একাদশ নামায় ফ্রান্স। ম্যাচের ৫৮ মিনিটের সময় তিউনিসিয়া ১-০ গোলে এগিয়ে যায়। ম্যাচের শেষ ২০ মিনিটে এমবাপ্পে, গ্রীজম্যান, ডেম্বেলে মাঠে নামলে মাচের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যায়। এমনকি শেষ মিনিটে গ্রীজম্যান অসাধারণ গোল করেন। কিন্তু ভার প্রযুক্তিতে অফসাইড হয়ে গোল বাদ হয়ে যায়। ফলে তিউনিসিয়ার সাথে ০-১ গোলে পরাজয়বরন করে ফ্রান্স। দ্বিতীয় রাউন্ডে পোল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামে ফ্রান্স। ডিফেন্সিভ পোল্যান্ডের সাথে ফুটবল ছন্দে ছিল ফ্রান্স। দল ৩-০ গোলে এগিয়ে যায়। ম্যাচের একদম শেষের দিকে পেনাল্টি পায় পোল্যান্ড। লেভেন্ডেস্কি শুটে একমাত্র গোল পায় পোল্যান্ড। ফ্রান্স ৩-১ গোলের সহজ জয় পায়। কোয়ার্টার ফাইনাল ছিল ফ্রান্সের জন্য কঠিন পরীক্ষা। ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী ফুটবল দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামে।ম্যাচের ১৭ মিনিটে চুয়েমেনির বুলেট শটে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে হ্যারিকেন পেনাল্টি পেয়ে গোল দিয়ে ১-১গোলে সমতায় ফিরে ইংল্যান্ড। ম্যাচের ৭৮ মিনিটে জিরুদের অসাধারণ হেডের গোলে ২-১ এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে আবারও পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। কিন্তু হ্যারিকেন গোলবারের উপরে মেরে দেয়। ফলে ২-১ গোলে জয় পেয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফরাসি ফুটবল দল। সেমিফাইনালে মুখামুখি হয় আফ্রিকার উদীয়মান দল মরক্কো। অসাধারণ ফুটবল খেলা উপহার দিয়ে বিশ্বের মন জয় করে নেয় মরক্কো। ম্যাচের প্রথম ৫ মিনিটে হার্ন্দানেজের গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। গত ৫০ বছরে সেমিফাইনালে এতো দ্রুততম সময়ে গোল আর হয় নাই। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে কালো মাউনি গোলে ২-০ গোলের শক্তিশালী লিড নেয় ফ্রান্স। ফুটবল গোলের খেলা। তাইতো মরক্কো ৬২% বল দখল রেখেও স্কোরার ও টেকনিকের অভাবে ম্যাচ পরাজয় হয় মরক্কো। এই সুবাদে ব্যাক টু ব্যাক ফাইনাল নিশ্চিত করে ফ্রান্স ফুটবল টিম। ফাইনাল প্রতিটি দলের জন্য স্বপ্নের মতো। তেমনি ফ্রান্সের জন্য ছিল স্বপ্ন। ব্যাক টু ব্যাক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু প্রতিপক্ষ হিসাবে মাঠে পেয়েছে আর্জেন্টিনা। ফুরফুরে মেজাজে মাঠে নামে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। ম্যাচের ২৩ মিনিটে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। লিও মেসির গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে ডিমারিয়া অসাধারণ গোল দিয়ে ২-০ গোলের বড় ব্যবধানের লিড নিয়ে প্রথম অর্ধেক শেষ করে মেসি বাহিনী। প্রথম অর্ধেকে ফ্রান্স একাদশ কোন ধরনের সুবিধাই করতে পারে নাই। ম্যাচের ৬০ মিনিট পরবর্তী ছন্দে ফিরে ফ্রান্স। মূলত গ্রীজম্যানকে তুলা নেওয়ার পরে কোনঠাসায় পড়ে ফ্রান্স। পরবর্তীতে কোম্যানকে মাঠে নামানোর পরে ফ্রান্সের মোড় ঘুরে যায়। ম্যাচের ৮০ মিনিটের সময় প্রথম পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। এমবাপ্পে শুটে গোল দিয়ে ২-১ গোলে পিছিয়ে থাকে ফ্রান্স। কিন্তু মিনিটের মাথায় আরেকটি অসাধারণ গোল দিয়ে আর্জেন্টিনা শিবিরে আতংক তৈরি করে কলিয়ান এমবাপ্পে। ফলে ০২-০২ গোলে সমতায় ৯০ মিনিট শেষ করে ফরাসিরা। অতিরিক্ত মিনিটে প্রথম দিকে ১০৮ মিনিটে লিওনেল মেসি অসাধারণ গোল দিয়ে আর্জেন্টিনা দলকে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত মিনিটের শেষের দিকে ১১৮ মিনিটের সময় আবার পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। কলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি শুটে ৩-৩ গোলের সমতা পায় ফ্রান্স। এক্সট্রা টাইম ১২২ মিনিটের সময় কোটা মিয়ানি অসাধারণ চেষ্টা ব্যর্থ করে আর্জেন্টিনা গোলকিপার এলমি মার্টিনেজ। মূলত ফ্রান্স সেখানেই পরাজিত হয়ে যায়। সেই সাথে বিশ্বকাপ চলে যায় আর্জেন্টিনার কাছে। ম্যাচে কিলিয়ান এমবাপ্পে ফাইনাল ম্যাচে হ্যাট্টিক করে অন্যমাত্রার রেকর্ড অর্জন করে। যার ফলাফল পাওয়া যায় ট্রাইবেকারে। যেখানে আর্জেন্টিনা (০৪) গোল দিয়ে এগিয়ে যায় বিপরীতে ফ্রান্স একটা শুট ঠেকিয়ে দেয় মার্টিনেজ অন্যটা বাহিরে শুট করে। ফ্রান্স (০২) ট্রাইবেকারে ব্যবধানে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে বঞ্চিত হয়। সত্যি বলতে ফ্রান্স হারানোর কিছু নাই ২০১৮ তে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০২২ তে রানার্সআপ হয়েছে।ফ্রান্স কাতার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হলে আর্জেন্টিনা ও লিওনেল মেসি অপূর্ণতা থেকেই যেতো।