১৯৭১ সাল। বাংলাদেশের বছর। এই স্বাধীনতা অর্জন করতে বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ৯ মাস যুদ্ধে দেশের জনতার তাজা রক্ত ও মা- বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয় এই স্বাধীনতা।
দেখতে দেখতে আমরা ২০২১ সালে পৌছাইছি।স্বাধীনতার ৫০ বছর। এই সুদীর্ঘ সময় অনেককিছু পেয়েছি, অনেককিছু হারিয়েছি।৭১ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত প্রাংগন থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলছে এই দেশবাসী।
একই সাথে দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা,অর্থনৈতিক সংকট,করোনা মহামারি মাথায় রেখে সুবর্ণ জয়ন্তীতে পদার্পণ করা বাংলাদেশের জন্য বড় সাফল্যের ব্যাপার।
দেশের সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত দেশের জন্য তরুণ -তরুণীদের অবদান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। যুগ যুগ ধরে তাদের হাত ধরেই এগিয়ে চলছে দেশ ও জাতি।আজকের তরুণ তরুণীর হাতেই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের দিক-নির্দেশনার উপর নির্ভর করে আগামীর উন্নয়ন ও অগ্রগতি।
তারুণ্যের চাওয়া পাওয়ায় কেমন হবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী-
তরুণ দেশের নিকট অতীতে, বর্তমানে ও ভবিষ্যতে কী ধরনের সমস্যা বিদ্যমান এবং কিভাবে সমাধান করা যায়!; তা আলোচনা করবে। সমস্যা- সমাধান। চাওয়া -পাওয়া।
শিক্ষা ব্যবস্থা-
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সনাতন পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা একটা পদ্ধতি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। বিশ্বব্যাপী এই শিক্ষা ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা খুবই কম।বাস্তবতার সাথে সমন্বয় নেই বললেই চলে।
বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সাথে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা পাওয়া দুস্কর ব্যাপার।
সমন্বয় ও আন্তরিকতার অভাবে দেশের মেধাবীরা একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করার পরও আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারুণ্যের চাওয়া পাওয়া হল- যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরী করে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
কৃষি-
প্রাচীন কাল থেকেই বাংলা কৃষি প্রধান অঞ্চল। এই অঞ্চলে বঙ্গোপসাগর, নদী,নালা,খাল-বিল,জলাশয়ের জমে থাকা পলির কারণে আবাদি ভূমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।ফলে প্রায় সকল মৌসুমে ফসল উৎপন্ন হওয়া সম্ভব।
এতোস্বাধীনতারকিছু সত্বেও কৃষক সমাজ নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।ফলে দিন দিন কৃষকের সংখ্যা ও ফসল উৎপন্ন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে এবং চাউল,ডাউল,তৈল,মশলা ও অন্যান্য কাচামালের দৈনন্দিন মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।স্বভাবতই জনগণের নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায়, আমাদের চাওয়া পাওয়া হল কৃষিতে উন্নয়ন সাধন করে কৃষকদের নায্যমূল্য প্রদান করা।বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ হিসাবে কৃষকদের সর্বাত্মক সাহায্য -সহযোগিতা করে অর্থনৈতিকভাবে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করা।
বেকারত্ব -
দেশের বেকারত্ব মহামারী আকার ধারণ করছে। প্রতিদিন বেকারের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে। এই বেকারত্ব দেশের স্বাভাবিক গতিমাত্রা ও অগ্রগতিকে চরমভাবে আঘাত করছে।স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতেও আমরা লক্ষ লক্ষ বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চরমভাবে ব্যর্থ।
এই ব্যর্থতা নিরাশনে প্রয়োজন সরকারের আন্তরিক আগ্রহ ও জনগণের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা। তারুণ্যের চাওয়া পাওয়া হবে যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেক যুবককে কাজের সুযোগ করে দেওয়া।
মানবসম্পদ-
আমরা সবাই জানি যে,বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম একটি জনবহুল দেশ।জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম।জনসংখ্যার পরিমান প্রায় ১৬১ মিলিয়ন। এই বিশাল জনসংখ্যার দেশের অর্থনৈতিক বিচারে বড় কোন অবদান রাখতে সক্ষম হয়নি।
অথচ যোগ্য,দক্ষ মানবসম্পদ তৈরী করে তাদেরকে সুযোগ দিলে বিশ্বের অর্থনীতির সেরা বিশের মধ্যে অবস্থান করা সম্ভব ছিল মনে করে তরুণ প্রজন্ম।
আআত্মনির্ভরশীলতা-
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ পরনির্ভরশীলতা নির্ভর করেই চলছে।দেখতে দেখতে তা ৫০তম বর্ষে পৌছাইছে।এই সুদীর্ঘ সময় ধরে আমরা উল্লেখযোগ্যভাবে কোনদিক থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে পারি নাই।ফলে সুযোগে যেকোন পণ্যের অভাব শুরু হলেই দূর্বলতার অজুহাতে বিশাল অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়।
তরুণদের চাওয়া পাওয়া হল একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ দেখা।প্রয়োজন আমাদের আন্তরিকতাপূর্ণ আচারণের।দেশকে ভালবেসে দৃঢ় প্রত্যয়ের স্বনির্ভর দেশ গড়ে তোলাই হোক এই সূবর্ণ জয়ন্তীর অঙ্গীকার।
দেশের তরুণ সমাজ একটি সমৃদ্ধ সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চায়,শিক্ষা -গবেষণা, তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন, কৃষির সম্প্রসারণ, বিশাল বেকারত্বকে কাজে লাগিয়ে মানবসম্পদে রূপান্তর করাই হলো আমাদের চাওয়া পাওয়া। শোষণ, বৈশম্য,নির্যাতন, অত্যাচারমুক্ত হবে এই মাতৃভূমি।এমনটাই আশা করি আমাদের দেশবাসী।
লেখক
মো. আবদুল হাছিব চৌধুরী
শিক্ষার্থী,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়