হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা আমাদের সমাজে আজকাল সবচেয়ে বড় চাঁদাবাজ হিসেবে খ্যাত। প্রতিনিয়ত শহর ও গ্রামের মানুষদের সাথে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করেই চলছে তারা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নানান রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর গোপন ছত্রছায়ায় এরা সাহসী হয়ে উঠছে।
এদের হয়রানির শিকার হয় নি এমন কোন শ্রেণী-পেশার মানুষ নেই বললেই চলে। এরা হুট করেই আমাদের সামনে এসে হাজির হয় আর অনেক ঝামেলা করে, টাকা না দিতে চাইলে উলঙ্গ হতে চায়, বিশ্রী ভাষায় গালাগালি করে। এরা বলে সরকার আমাদের পারমিশন দিয়েছে। পুলিশ এর কথা বললে বলে পুলিশ আমাদের কিছুই করবে না। এদেরকে কি আসলেই পুলিশ বা সরকার অনুমতি দিয়েছে? না। অনুমোদন নেই। তবে এদের বিষয়ে প্রশাসনের নিরব ভূমিকা সত্যিই দুঃখজনক।
ব্যক্তিগতভাবে আমি তাদের হয়রানির শিকার হয়েছি কয়েক দফায়। তবে আমি তাদের কোন ঝামেলায় পরার আগেই কিছু টাকাদেই। কারন আমি জানি তাদের এই চাঁদাবাজি কিংবা হয়রানি করার জন্য আমরাই উস্কে দিয়েছি। আমাদের সমাজ এর পিছনেদায়ী। গত ২ এপ্রিল, পাসপোর্ট অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম। গ্রীণরোডে দেখলাম একদল হিজড়া দোকানগুলো থেকে চাঁদাবাজি করতেছে। আমি দাড়িয়ে পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করলাম। সিপি ফাইভ স্টারের বিপরীতে এক সিঙ্গারা বিক্রেতার কাছে তারা যেটাকা দাবি করে সেটা দিতে অস্বীকার করলে হিজড়াদের অত্যাচারে এক পর্যায়ে দোকানী কাঁদতে শুরু করলেন।
দোকানী এটা বুঝাতে চেয়েও ব্যর্থ হলেন যে এখন করোনাকালীন সময়ে বিক্রি একদমই নাই। তোমরা অল্প টাকা নিয়ে যাও। এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? আমাদের নীতি নির্ধারকরাই তো তাই না? কেন জানেন? কারণ হিজড়াদেরকে সঠিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে না এবং তাদের কাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। তাদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে না। ফলে তারা হরেক রকমের হয়রানিমূলক কাজ-কর্মে যুক্ত হচ্ছে। আমাদের সরকারের কিছু কর্মসূচীতে হিজড়া তথা তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি সহযোগীতার চিত্র দেখা যায়। তবে তা শুধু একটা দিবসপালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এখন সময় এসেছে এদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
তাদেরকে স্বাভাবিক মানুষের মত জীবন-যাপনের সুযোগ করে দেওয়া। সরকারের একার পক্ষে এটা সম্ভব না। আমরা সবাই যদি সহযোগীতা করি তাহলেই কেবল সম্ভব। আমরা যে যে ধর্মই চর্চা করি না কেন সবার আগে মানুষ হিসেবে আমাদের কিছু কর্তব্য আছে যা আমরা এড়াতে পারবো না। ওরা নিজের ইচ্ছায় হিজরা হয়ে জন্ম নেয় নি। সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই ওদেরকেও কোন না কোন কল্যাণ হিসেবেই আমাদের জন্য সৃষ্টিকরেছেন।
তারাও সমাজেরই একটি অংশ, এটা ভূলে যাওয়ার অবকাশ নেই। ওরা আমাদেরই কারো না কারো ভাই-বোন।এদেরকে হিজরা বলে হিংসা না করে ভাই-বোন হিসেবে একটু ভালবাসুন, মানুষের মত সম্মান করতে শিখুন, দেখবেন ওরা হাসি খুশিতে জীবন যাপন করতে পারবে। বিশ্বাস করেন এরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজটা সুন্দর হবে। আর আমরা বেঁচে যাবো সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে। তাই আসুনআমরা সবাই মানুষ পরিচয়ে পরিচিত হই, ওদেরকেও মানুষের মর্যাদা দেই।
লেখক:
মোঃ শামসুল আকরাম
সম্পাদক ও প্রকাশক, BDTone24.com