উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলেন বেগম খালেদা জিয়া
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বিশেষ সহায়তা হিসেবে রাজ পরিবারের পাঠানো অত্যাধুনিক চিকিৎসা-ব্যবস্থা সম্বলিত একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের হিথরো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হন বিএনপি’র চেয়ারপার্সন।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কাছে ‘আপোষহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলেন। তাঁর লন্ডন যাত্রা উপলক্ষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এর আগে রাজধানীর গুলশান -২ নম্বরের ৭৯ নম্বর রোডস্থ বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টায় তাঁর গাড়িবহর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হলেও ৯টা পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড়ে বেগম জিয়ার গাড়ি বহর গুলশান ২ নম্বর গোল চত্বর অতিক্রম করতে পারেনি। রাস্তায় দুই ধারে হাজার-হাজার সাধারণ মানুষ দু’হাত তুলে তাদের প্রিয় নেত্রীকে সুচিকিৎসায় বিদেশ-যাত্রাকালে বিদায় জানায়।
বার্তা সংস্থা বাসস’র ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি জানান, রাত ১১টার দিকে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি-বহর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার আ্যাম্বুলেন্সটি রাত পৌনে ১২টায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশে উড্ডয়ন করে। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর ব্যাক্তিগত চিকিৎসক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন মোট ১৬ জন।
বিএনপি’র মহাসচিবসহ দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ বিমানবন্দরে দলীয় নেত্রীকে বিদায় জানান।
উল্লেখ্য, বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নং রোডস্থ বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজার’ সামনে বিএনপি’র নেতাকমীরা ভীড় জমাতে থাকে। সন্ধ্যার আগেই ‘ফিরোজার’ সামনের রোডসহ গুলশান-২ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায়। দলীয় নেতা-কর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালাবাসায় সিক্ত হন বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় তারা বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে, সন্ধ্যা সোয়া ৬টা ১০ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় প্রবেশ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি গেটের সামনে থাকা নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা সুশৃঙ্খলভাবে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকুন। রাস্তা ফাঁকা রেখে দাঁড়ান। ফিরোজায় ঢুকে ২০ মিনিট অবস্থান করার পর মির্জা ফখরুল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সেখান থেকে বের হয়ে প্রথমে তার বাসায় যান এবং একটু পর সেখান থেকে তিনি এয়ারপোর্টে যান। এ সময় ‘ফিরোজায়’ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপার্সনের ব্যাক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য এ বিদেশযাত্রার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত বছর পর লন্ডনে বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হবে বেগম খালেদা জিয়ার। হিথরো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে এবং তাঁর স্ত্রী জোবায়দা রহমান বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবেন বলে জানা গেছে। লন্ডন বিএনপি’র দুই নেতা এ সময় তাদের সঙ্গে থাকবেন।
বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের লন্ডন যাত্রাপথে কাতারে এক ঘণ্টার বিরতি থাকবে বলে বার্তা সংস্থা বাসস’কে জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী।
তিনি জানান, ঢাকা থেকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন যাত্রায় চেয়ারপার্সনের মেডিকেল বোর্ডের ৬ জন সদস্য রয়েছেন। তারা হচ্ছেন অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফএম সিদ্দিক, অধ্যাপক নুরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।
এ ছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকো’র স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার এবং ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি রয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লিভার প্রতিস্থাপনের পর পুরো চিকিৎসায় কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।
সোমবার বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘বুধবার লন্ডনে পৌঁছেই উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি হবেন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, লন্ডনের হিথরো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে তাঁকে (বেগম খালেদা জিয়া) সরাসরি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হবে। এই হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন থাকবেন। ইতিমধ্যে তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় কাগজপত্র ও বিভিন্ন প্যাথলজিকেল পরীক্ষার রিপোর্টগুলো সেখানে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে রাজনীতিতে চলার পথের দীর্ঘদিনের সারথি- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সকল সদস্যদের বাসায় ডেকে বেগম খালেদা জিয়া তাদেরকে শুধু এটাই বলেছেন, ‘গণতন্ত্রই শেষ কথা’।
এ সময় দলের নীতিনির্ধারকদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঐক্যবদ্ধ থেকে জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।
লন্ডন যাত্রার সব প্রস্তুতি শেষ হওয়ার মধ্যে গত রোববার রাতে রাজধানীর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন খালেদা জিয়া।