রোমানিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত ৯২,০৪৫.৬ বর্গমাইলের একটি দেশ। ২০১৮ সালের জনগণনা অনুযায়ী দুই কোটির মতো মানুষ বসবাস করে দেশটিতে। আয়তনের দিক থেকে রোমানিয়া ইউরোপের ১২তম বৃহত্তম রাষ্ট্র এবং জনসংখ্যার বিবেচনায় রোমানিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ষষ্ঠ দেশ।
বুখারেস্ট রাজধানী এবং বৃহত্তম নগরী। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সঙ্গে গঠনশৈলীর বিবেচনায় সামঞ্জস্য থাকায় বুখারেস্টকে অনেকে পূর্ব ইউরোপের প্যারিস হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন। দেশটির উল্লেখযোগ্য নগরীর মধ্যে রয়েছে ব্রাসোভ, ইয়াশ, তিমিশোআরা, ক্লুজ নাপোকা, কন্সটান্টা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
প্রতিবছর ১৫ জুলাই রোমানিয়ার বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করা হয়। মেডিসিন ও ফার্মেসি ছাড়া সব বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য এ বৃত্তি দেওয়া হয়। বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার কোনো খরচ বহন করতে হয় না। থাকার খরচ সরকার বহন করে। হাতখরচ হিসেবে আনুষঙ্গিকভাবে প্রতি মাসে একজন ব্যাচেলর শিক্ষার্থীকে ৬৫ ইউরো, মাস্টার্স শিক্ষার্থীকে ৭৫ ইউরো এবং পিএইচডি শিক্ষার্থীকে ৮৫ ইউরো করে দেয় রোমানিয়া সরকার।
রোমানিয়া দক্ষিণে বুলগেরিয়া, পশ্চিমে সার্বিয়া ও হাঙ্গেরি এবং পূর্বে ইউক্রেন ও রিপাবলিক অব মলদোভার সঙ্গে সংযুক্ত। এ ছাড়া দেশটির দক্ষিণ–পূর্বের প্রায় ২৪৫ কিলোমিটার রেখা বরাবর কৃষ্ণসাগর বা ব্ল্যাক সির উপকূল রয়েছে। রোমানিয়ার অধিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ভাষার নাম রোমানিয়ান। দেশটির শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। তবে দেশটিতে ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি ভাষার প্রচলন রয়েছে। পূর্ব ইউরোপে প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে রোমানিয়ান একমাত্র ভাষা, যেটি ল্যাটিন ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলির অন্তর্ভুক্ত।
২০০৭ সালে রোমানিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করে। রোমানিয়ার জাতীয় মুদ্রার নাম রোমানিয়ান লিউ। রোমানিয়া বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক দেশগুলোর মধ্যে একটি। আঙুর, আপেল, শর্ষে এবং বিভিন্ন সবজি থেকে প্রস্তুতকৃত তেল থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন ধরনের ফার্মাসিউটিক্যাল, কেমিক্যাল, লৌহ এবং ইস্পাতশিল্প, মেশিনারিশিল্প, বস্ত্রশিল্প এবং মোটর গাড়ি তৈরির কারখানার মতো ভারী ভারী শিল্প রোমানিয়ার অর্থনীতিকে করেছে অত্যন্ত বেগবান।
রোমানিয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব বুখারেস্ট, বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক স্টাডিজ, বাবেস-বলিয়াই ইউনিভার্সিটি, আলেকজান্দ্রু আইওয়ান কুজা ইউনিভার্সিটি, ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব তিমিশোআরা, ইউনিভার্সিটি পলিটেকনিক অব বুখারেস্ট, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ঘিওরঘি আসাচি ইয়াস ইত্যাদি। একজন শিক্ষার্থী রোমানিয়াতে ব্যাচেলর, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি—যেকোনো লেভেলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন।
প্রতিবছর রোমানিয়ার সরকার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নয়—এমন দেশগুলোর নাগরিকদের উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি দিয়ে থাকে। প্রতিবছর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এ বৃত্তির আবেদন করা যায়।
স্কলারশিপের আবেদন করতে যা প্রয়োজন:
* স্কলারশিপের অ্যাপ্লিকেশন ফরম;
* যে ইউনিভার্সিটি পড়তে আগ্রহী, সে ইউনিভার্সিটির আবেদন ফরম;
* যাবতীয় শিক্ষা সনদ এবং ট্রান্সক্রিপ্টের কপি;
* জন্ম নিবন্ধন বা বার্থ সার্টিফিকেটের কপি;
* পাসপোর্টের বায়োগ্র্যাফিকাল পেজ এবং সেই সঙ্গে প্রথম তিন পৃষ্ঠা;
* মেডিকেল সার্টিফিকেট;
* ইউরো পাস ফরম্যাটের সিভি;
* দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি;
বাংলাদেশে রোমানিয়ার কোনো দূতাবাস নেই। এ কারণে স্কলারশিপের আবেদন থেকে শুরু করে ভিসা পর্যন্ত যাবতীয় কাজ দিল্লিতে অবস্থিত রোমানিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। যাবতীয় একাডেমিক ডকুমেন্ট দিল্লিতে রোমানিয়ার দূতাবাস থেকে লিগালাইজ করাতে হয়। দিল্লি দূতাবাস থেকে কোনো একাডেমিক ডকুমেন্ট লিগালাইজ করতে হলে প্রথমে সেগুলোকে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে।
অনেক সময় নোটারির প্রয়োজন হতে পারে। দিল্লিতে রোমানিয়ার দূতাবাসে কোনো ডকুমেন্ট লিগালাইজ করার জন্য পৃষ্ঠা প্রতি ২ হাজার ৮৫০ রুপি রাখে এবং ডকুমেন্ট লিগালাইজ করার সময় অরিজিনাল ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়।
দিল্লিতে রোমানিয়া দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা:
Address: D6/6, Vasant Vihar, New Delhi
Phone: 0091 11 26140447; 26140700
Fax: 0091 11 26140611
Website: http://newdelhi.mae.ro/
E-mail: [email protected]
[email protected]
https://newdelhi.mae.ro/en/node/397
বৃত্তির জন্য বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে নিচের ওয়েবসাইটে
http://www.mae.ro/en/node/10251
কী কী করতে হবে:
সমস্ত ডকুমেন্ট ইংরেজি কিংবা ফ্রেঞ্চ অথবা রোমানিয়ান ভাষায় হতে হবে। ডকুমেন্ট রেডি হয়ে গেলে কুরিয়ার সহযোগে দিল্লিতে অবস্থিত রোমানিয়ার দূতাবাসের কাছে পাঠাতে হবে। দিল্লির রোমানিয়ার দূতাবাস এসব ডকুমেন্ট ভেরিফাই করে রোমানিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের কাছে পাঠাবে। প্রতিবছরের ১৫ জুলাই বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করা হয়। মেডিসিন ও ফার্মেসি ছাড়া সব বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য এ বৃত্তি দেওয়া হয়। বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার সব খরচ বহন করবে সে দেশের সরকার। থাকার জন্য স্টুডেন্ট হোস্টেলে আবাসন বরাদ্দ করা হবে। থাকার খরচও সরকার বহন করবে।
হাতখরচ হিসেবে আনুষঙ্গিকভাবে প্রতি মাসে একজন ব্যাচেলর শিক্ষার্থীকে ৬৫ ইউরো, মাস্টার্স শিক্ষার্থীকে ৭৫ ইউরো এবং পিএইচডি শিক্ষার্থীকে ৮৫ ইউরো করে দেওয়া হবে। অতীতে এ বৃত্তির অধীনে রোমানিয়াতে উচ্চশিক্ষার জন্য আগত শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে পড়াশোনার সুযোগ থাকলেও গত বছর থেকে রোমানিয়ার সরকার নিয়ম করে দিয়েছে যে ব্যাচেলর কিংবা মাস্টার্স লেভেলে যাঁরা উচ্চশিক্ষার জন্য আসবেন, সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে রোমানিয়ান ভাষায় পড়াশোনা করতে হবে।
তাই চূড়ান্তভাবে ইউনিভার্সিটিতে ইনরোলমেন্টের আগে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এক বছর বাধ্যতামূলকভাবে রোমানিয়ার ভাষার ওপর কোর্স করতে হবে। পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্য এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি।
লেখক : রাকিব হাসান রাফি
শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গরিছা, স্লোভেনিয়া।