ঢাকা   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ রজব ১৪৪৬

বিদেশে উচ্চ শিক্ষাঃ মাস্টার্স নাকি পিএইচডি?

বৃত্তি ও উচ্চ শিক্ষা

প্রকাশিত: ১৯:৪২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৯:৪০, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিদেশে উচ্চ শিক্ষাঃ মাস্টার্স নাকি পিএইচডি?

আমার আমেরিকায় মাস্টার্স প্রায় শেষের দিকে। এই দেড় বছর সময়ে অনেকেই আমার কাছে উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিলো। এমনকি এই ধরনের প্রশ্ন এখনো করে যাচ্ছেন অনেকেই। এই কেন্দ্রিক প্রথম যে প্রশ্নটা সবার আগে চলে আসে, তা হলো, • “আমি কি মাস্টার্স এ এপ্লাই করবো? না কি পিএইচডি?” অনেকের প্রশ্নের ধরণগুলো এমন, • “আমার তো মাস্টার্স করা আছে। আর একবার মাস্টার্স করা/মাস্টার্স এ এপ্লাই করা কি ঠিক হবে?” একইসাথে আর একটা প্রশ্ন করে বসে, • “আমার জব করার ইচ্ছা, পিএইচডি করার খুব একটা ইচ্ছা নেই, সেই ক্ষেত্রে কি করবো?” অনেকের প্রশ্ন থাকে, • “একই সাথে চার বছরে মাস্টার্স ও পিএইচডি কি নেওয়া যায়?” অনেকের শুরু থেকেই প্ল্যান থাকে, • “আমি কিন্তু একাডেমিক লাইনে থাকতে চাই। সেক্ষেত্রে কি মাস্টার্স ও পিএইচডি দুটোই করবো?” এখানে দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে আসা প্রশ্ন গুলোর ধরন ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হলেও, মোটামুটি এগুলোর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। দেড় বছরে এর কিছু উত্তর নিজে পেয়েছি, এবং কিছু অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকেও সংগ্রহ করেছি। তাই এখানে একান্তই ব্যক্তিগত কিছু মতামত তুলে ধরছি। প্রথমতঃ আপনার যদি জব করার ইচ্ছা থাকে, তবে আপনার জন্য আমেরিকায় একটা মাস্টার্স ই যথেষ্ট। এই কেন্দ্রিক আমার বর্তমান সুপারভাইজর এর সাথে আমার করা প্রথম দিনের কথপোকথন টা একটু তুলে ধরি। আমেরিকায় এসে আমি প্রথমবারের মতো সুপারভাইজর এর সাথে দেখা করতে তার অফিস এ গেলাম। রিসার্চের কথা শুরুর আগেই প্রথম প্রশ্ন করল: “ কিম তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?” “তুমি কি মাস্টার্স এর পরে চাকরি তে ঢুকতে চাও নাকি পিএইচডি করবে?” আমি কিছুটা অবাক হয়েছি, প্রথম দিনেই এই প্রশ্নটা শুনে। তবে তার পরক্ষনেই এর উত্তর টা পেয়ে গেছি। যদি চাকরিতে যেতে চাও তবে প্রথমে একটা মাস্টার্স ডিগ্রী নিয়ে নাও। যেটা হবে নন থিসিস, তোমার চাকরি পেতে থিসিস করার প্রয়োজন ই হবে না। আমেরিকায় চাকরি পাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। কাজেই যাদের জব করার ইচ্ছা, তাদের জন্য একটা আমেরিকায় একটা মাস্টার্স ই যথেষ্ট। এটা আপনি আমেরিকার এর যে কোন র‌্যাঙ্কিং এর ভার্সিটি থেকে নিলেই হবে (অবশ্যই তা এন সি ই ই এস কতৃক স্বীকৃত হতে হবে)। আপনার দেশে মাস্টার্স করা থাকলেও, জবের জন্য আপনাকে আবার একটা মাস্টার্স ডিগ্রী নিতেই হবে। এক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ সাধারণত মাস্টার্স এর জন্য নিজ টাকা খরচ করে পড়তে হয়/হবে। আর মাস্টার্স ডিগ্রী এর জন্য অনেক সময় ফান্ডিং/স্কলারশীপ পাওয়া যায়। তবে এই ফান্ডিং সংগহ করা খুবই কঠিন (যদিও কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়, কারণ আমি আমার মাস্টার্স ফান্ডিং এর মাধ্যমে করতেছি)। এর চেয়ে, পিএইচডি এর ফান্ডিং/স্কলারশীপ ম্যানেজ করা তুলনামুলক সহজ। দ্বিতীয়তঃ আপনার যদি একাডেমিশিয়ান হওয়ার ইচ্ছা থাকে, তবে আপনার জন্য উত্তরটা দুই ধরনের হতে পারে। • আপনি আমেরিকা এর যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় হতে পিএইচডি করে, তারপর এখানের কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসিসটেন্ট বা এডজুটেন্ট প্রফেসর হিসেবে যোগদান করতে পারবেন। এবং এই ডিগ্রী আপনি আমেরিকার যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিলেও হবে। সর্বোচ্চ, সর্বোচ্চ মধ্যম, মধ্যম, নিম্ন মধ্যম, নিম্ন অথবা আর ওয়ান আর টু পর্যায়ের ভার্সিটি হলেও হবে। আমেরিকায় প্রায় ৪০০০ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুল রয়েছে। আপনি একটু লেগে থাকলে টিচিং জবটা পেয়ে যাবেন। • যারা সাধারণত একাডেমিশিয়ান ট্যাক এ থাকতে চায়, তারা একটু ভালো র‌্যাংকিং এর বিশ্ববিদ্যালং হতে পিএইচডি টা করতে চায়। এক্ষেত্রে আপনার জন্য দুই ধরনের সমাধান ( আসলেই উত্তরটা একটু ভিন্ন ভাবে দিতে হয়। ) (ক) আপনার যদি সিজিপিএ, কিউ ওয়ান জার্নাল পাবলিকেশন, জিআরই স্কোর, টোফেল স্কোর এগুলো ভালো থাকে, তবে আপনি দেশ থেকেই সরাসরি আমেরিকার ১-৫০ এর মধ্যে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে স্কলারশীপ/ফান্ডিং নিয়ে পড়তে আসতে পারবেন। (খ) যদি আপনার প্রোফাইর মাঝামাঝি লেভেলের হয়, তবে আপনি দেশ থেকে সরাসরি মধ্যম বা নিম্ন মধ্যম মানের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পিএইচডি করতে আসতে পারবেন। কিন্তু, এরপরেও যদি আপনার মনে হয় যে, আপনার সর্বোচ্চ বা মধ্যম সর্বোচ্চ পর্যায়ের ভার্সিটি তে পিএইচডি করতে হবে (অবশ্যই করতে পারলে আপনার স্কোপ অন্যদের চেয়ে বেড়ে যাবে), সেক্ষেত্রে আপনি আমেরিকা এর একটা মাস্টার্স ডিগ্রী করে নিতে পারলে আপনার সেই সুযোগটা বেড়ে যাবে। আমার পরিচিত অনেকজন কেই দেখেছি, নিম্ন র‌্যাংকিং এর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করে এখন টপ টেন র‌্যাংকিং এর বিশ্ববিদ্যালয়ে তে পিএইচডি করছে। ইউ-টি ইআই পাসো থেকে মাস্টার্স পড়ে এখন কার্নেগী মিলন বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট্রাল মিশিগান থেকে ভার্জিনিয়া টেক, টাস্কেজি থেকে পুরডে, ইউটিআরজিভি থেকে পুরডে ছাড়াও অনেক ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয় এ পিএইচডি করছে। এখানে একটা বিষয় বলে রাখা ভালো, আপনার দেশে মাস্টার্স করা থাকলেও, ভালো র‌্যাংকিং এর ভার্সিটি তে পিএইচডি করতে চাইলে, আপনাকে এই দুই বছর সময় গ্যাপ দিতেই হবে করতে হবে। তৃতীয়তঃ ধরুন, আপনি দেশ থেকে সরাসরি পিএইচডি করতে আসলেন, কিন্তু কোন কারণে আপনার আর তা শেষ করতে ইচ্ছে হয় নি। আপনি জবে চলে যেতে চান। তবে আপনি চাইলেই, পিএইচডি তে যে কোর্স ওয়ার্ক গুলো করেছেন, সেগুলোর সাথে মাস্টার্স ডিগ্রী পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোর্স করলে, আপনি মাস্টার্স ডিগ্রী নিয়ে বের হয়ে জবে ঢুকতে পারবেন। মনে রাখবেন যে, আমেরিকায় জবে ঢুকার জন্য ন্যুনতম একটা আমেরিকান ডিগ্রী লাগবেই। চতুর্থতঃ অনেকেই, আন্ডারগ্রাজুয়েট শেষ করেই আমেরিকায় পিএইচডি করার জন্য আসতে চায়/চলে আসে। মনে একটা প্রশ্ন রয়েই যায়, ইশ! যদি মাস্টার্স টা শেষ করে আসতে আসতে পারতাম! বিশেষ করে যারা একাডেমিশিয়ান ট্যাক এ থাকতে চায়, মাস্টার্স ডিগ্রী থাকলে তাদের সম্ভাবনা বেশী থাকে। এইক্ষেত্রে একটা তথ্য দিয়ে রাখিঃ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তেই চার বছরে একই সাথে মাস্টার্স-পিএইচডি নেওয়ার সুযোগ থাকে। আপনি আসার আগে একটু খোঁজ নিয়েন, আপনার ইনকামিং বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সুযোগ আছে কি না! পিএইচডি এর কোর্স ওয়ার্ক গুলোর পাশাপাশি আপনি কিছু এডিশনাল কোর্স করেও আপনার মাস্টার্স ডিগ্রী নিতে পারবেন। আপনার অতিরিক্ত আরো দুই বছর সময় ব্যয় করা লাগলো না। আশা করি, এই তথ্য গুলো আপনার আমেরিকা তে উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ করে দিবে। লেখক: কে আই এম ইকবাল , যুক্তরাষ্ট্র