রিসার্চ পেপার পড়া ও লিখে পাবলিশ করা: ১
কেন রিসার্চ পেপার পড়া বা লেখা অধিকাংশের কাছে এতো আতংকের?
রিসার্চ আর্টিকেল পড়া, সামারি করা, নিজের রিসার্চে তা ফলো করা, তার পর আবার নিজের রিসার্চ গুছিয়ে লিখে পাবলিশ করা- উচ্চশিক্ষায় আসা স্টুডেন্টদের জন্য এই কাজগুলো রীতিমতো ফরজ। উচ্চশিক্ষা আবেদনেও রিসার্চ পেপার পড়া ও লেখার অভিজ্ঞতা থাকা ফান্ডিং পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করে।
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিছু স্ট্রেটেজি ফলো না করাতে অনেক ভালো রিসার্চ করেও তা গুছিয়ে লিখে পাবলিশ করা অনেকের কাছেই আতংকের মতো মনে হয়।
আবার যে কোন রিসার্চ প্রোজেক্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ওই ফিল্ডে অন্যদের পাবলিশ করা পেপার পড়ে ধারনা নেওয়াটা বাধ্যতামূলক। যে কয়েকটি কমন কারনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রিসার্চ পেপারের এত জ্ঞানগর্ভ লেখা পড়ে সামারি করাটা ক্লান্তিকর মনে হয় তার কয়েকটি হলো:
১. কোন বিষয়ে পর্যাপ্ত বেসিক ধারনা না নিয়েই সে বিষয়ের পেপার পড়তে শুরু করা।
২. কি কেন কিভাবে-এমন কোন প্ল্যনিং ছাড়াই পেপারের জ্ঞানের সমুদ্রে জাপ দেওয়া।
৩. কোন পেপারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক নাগাদে লাইন বাই লাইন পড়ে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া।
৪. পুরো পেপারের সব তথ্য আয়ত্ত করার বৃথা চেষ্টা করে কনফিডেন্ট হারিয়ে ফেলা।
৫. অনেক অনেক পেপার পড়ে সব তালগোল পাকিয়ে ফেলা।
৬. অনেক সময় ব্যয় করেও নিজের প্রোজ্ক্টের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য না পেয়ে হতাশ হওয়া। আর এসবের পরিনাম হলো রিসার্চে আগ্রহ হারিয়ে কোন মতে পার পাওয়ার চিন্তা করে দিন গোনা।
কয়েকটি ধারাবাহিক পর্বে রিচার্স পেপার পড়া ও লেখার ক্লান্তি কমিয়ে আনতে কার্যকর কিছু গাইডলাইন নিয়ে বিস্তারিত লিখবো ইনশাআল্লাহ।
রিসার্চ পেপার পড়া ও লিখে পাবলিশ করা: ২
পেপার পড়ার ক্লান্তি কমিয়ে ফেলুন
১. আগে জানুন
*যে টপিকের পেপার পড়তে চাচ্ছেন আপনি কি সেই টপিকের সাথে পরিচিত?
রিসার্চ পেপারের উদ্দেশ্য আপনাকে কোন টপিকের সাধারণ জ্ঞানের সাথে পরিচিত করানো নয়। বরং ওই টপিকের চেলেন্জ গুলোর গভীর এনালাইসিস করে তার সমাধান করা। তাই আপনি যদি কোন টপিকে নতুন হন, তাহলে পেপারে যাওয়ার আগে প্রথম কাজ হবে টপিকটির সাথে পরিচিত হওয়া।
উদাহরণস্বরূপ, আমি মেটাল থ্রি ডি-প্রিন্টিং নিয়ে রিসার্চ করছি। মেটাল থ্রি ডি-প্রিন্টিং এর বেশ কয়েকটি মেজর প্রসেস আছে। এই টপিকে কোন পেপার পড়ার আগে আমার থ্রি ডি-প্রিন্টিং এর মেজর প্রসেস গুলো, তাদের রিলেটিভ সুবিধা-অসুবিধা এবং প্যরামিটার এফেক্ট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকা জরুরী।
আর তার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো গুগল। গুগলে ওই টপিক রিলেটেড ইচ্ছেমতো কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করুন। অনেক সহজ সহজ আর্টিকেল পাবেন প্রাথমিক পরিচিতি বা ধারনা নেওয়ার জন্য। তার চেয়েও সহজ উপায় হলো যদি টপিক রিলেটেড ভিডিও দেখতে পারেন। ইউটিউব এ মেটাল থ্রি ডি-প্রিন্টিং রিলেটেড খুব কম ভিডিওই আছে যেগুলো আমি দেখিনি। অসাধারন কাজে দিয়েছে। আপনার টপিকেও সহজ ভাষায় লেখা এমন শত শত আর্টিকেল আর ভিডিও পাবেন।
২. হতাশ হবেন না
প্রিলিমিনারি ধারনা নেওয়ার পরও পেপার পড়ার সময় অনেক কিছুই অপরিচিত মনে হতে পারে। কোন টার্মিনোলজি আপনার কাছে নতুন মনে হলে তাৎক্ষণিক গুগল করে ধারনা নিয়ে নিন। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। নিজ় হাতে প্রোজেক্টের কাজ করতে করতে সময়ের সাথে সব পানিভাত মনে হবে।
৩. প্রশ্ন ঠিক করুন
কোন পেপার পড়ার আগে ঠিক করে নিন আপনি পেপারটি থেকে কোন কোন প্রশ্নের উত্তর চাচ্ছেন।
একটি রিসার্চ আর্টিকেল হয়ত কারো কয়েক বছরের গবেষনার ফসল। আপনি সেই গবেষনা থেকে নিজের প্রোজেক্টের জন্য কি ধরনের তথ্য খুজছেন সেই টারগেট ঠিক করে না নিলে পেপারের জ্ঞানের সাগরে হারিয়ে যেতে পারেন। আপনার প্রশ্ন ঠিক করা থাকলে পুরো পেপারে ঘুরোঘুরি না করে শুধু ওই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাতে ফোকাস করতে পারবেন। সময়, শ্রম, রাগ- সবই কম খরচ করতে হবে।
৩. থামুন!!
পেপার পড়া শুরু করার আগে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, নিজের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই মনে হলে আপনি যে কোন পর্যায়ে পেপারটি পড়া থামিয়ে দিবেন।
এই কাজটি না করতে পারলে শুধু ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করে অযথা ক্লান্ত হবেন।
৪. কোন ধারবাহিকতায় পড়বেন?
কোন পেপার যেই ধারাবাহিকতায় লেখা থাকে সেই ধারাবাহিকতায় পড়তে যাবেন না।
সাধারণত: এবসট্রাক্ট, ইন্ট্রোডাকশন, মেথড, ফলাফল,..., উপসংহার এই ধারাবাহিকতায় পেপার গুলো লেখা থাকে। আপনি এই ধারায় পড়তে গেলে নিজের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে অনেকখানি পড়তে হবে।
শুরুতে টাইটেল আর এবসট্রাক্ট পড়ার পর আপনি পেপারটির মূল ফোকাস সম্পর্কে মোটামোটি ধারনা পেয়ে যাবেন। এরপর যদি মনে হয় পেপারটির ফোকাস আপনার সাথে মেলে, সরাসরি চলে যান উপসংহার এ। আর না হয় পড়া বন্ধ করে পরবর্তি পেপারে চলে যান।
এবসট্রাক্ট এবং উপসংহার পড়লেই আপনি পেপারটির অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো পেয়ে যাবেন। এরপরও যদি মনে হয় যে আপনি যে টাইপের তথ্য খুঁজছেন তা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, তখনই পেপারটা পড়া থামিয়ে দিন, এই পেপারে আর সময় ব্যায় করার প্রয়োজন নেই।
আর যদি পেপারের কোন বিশেষ তথ্য আপনার সাথে মিলে যায়, তাহলে আর একটু সামনে আগান। রিজাল্ট ও ডিসকাশন সেকশনে গিয়ে প্লট আর ছবি গুলোতে চোখ বুলান। আরো ইন্টারেস্টিং মনে হলে শুধু ওই প্লট রিলেটেড ডিসকাশনের লাইন গুলো দেখে নিন। এভাবে প্রয়োজন মনে করলে ডাটা কালেকশন মেথড ও অন্যান্য বিস্তারিত পড়ে ফেলতে পারেন। মূল কথা হচ্ছে আপনার প্রয়োজন মতো সামনে আগাবেন, সময় ব্যয় করবেন। পেপারে লেখা সকল জ্ঞান আপনার গলধ:করনের প্রয়োজন নাও হতে পারে। এটলিস্ট আমার কখনো প্রয়োজন হয়নি।
এভাবে প্ল্যান করে পড়লে আপনি কম সময়ই আপনার রিলেটেড অনেকগুলো পেপার পড়ে ফেলতে পারেন। একটি পেপার নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে তালগোল পাকিয়ে হতাশ হওয়ার চেয়ে টু দ্য পয়েন্ট হিট করে মাথা কুল রাখুন। তাহলে আর পেপার পড়তে আতংক কাজ করবে না, ক্লান্তি আসবে না।
৫. লিটেরেচার মেট্রিক্স: খুব ই গুরুত্বপূর্ণ
- ধরুন আপনি দশ দিনে মোট বিশটা পেপার পড়লেন। এগারতম দিনে গিয়ে কোন পেপারের কোথায় কি পড়েছেন কিছুই মনে থাকবে না।
- কোন এক পেপারের কোথায় যেনো খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা পড়েছিলেন। কিন্তু কোন পেপারে পড়েছেন তা মনে নেই।
এই সমস্যা গুলো খুবই কমন। তাই কোন পেপার পড়ার পর পরই সেই পেপারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো নোট করে ফেলা জরুরী।
আর তা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো লিটেরেচার মেট্রিক্স। পেপারের টাইটেল, অথর, পাবলিকেশন সাল, অতি সংক্ষেপে মেথড, রেজাল্ট সহ কেন পেপারটি আপনার প্রোজেক্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা এক্সেলে ছক আকারে লিখে ফেলুন। আর একেই বলে লিটেরেচার মেট্রিক্স। যদি একটি পেপার পড়তে ২০ মিনিট ব্যায় করেন, তাহলে লিটেরেচার মেট্রিক্সের পেছনে কমপক্ষে ৫ মিনিট ব্যায় করা উচিত।
এভাবে অনেকগুলো পেপার পড়ার পর যখন সবগুলোর সামারি আপনার সামনে ছক আকারে থাকবে, মনে হবে পেপারের পিছনে ব্যায় করা আপনার প্রতিটা মিনিট সফল। প্রফেসর আপনার কাছে পেপার পড়ার সামারি চাইলে যাস্ট ছক করা এই তথ্য গুলোই লিখে দিয়ে দিন। লাইফ সহজ মনে হবে।
আপনি পেপার লেখার সময় এই তথ্য গুলোই রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এমনকি রিভিউ পেপার লিখতে চাইলেও লিটেরেচার মেট্রিক্স মেথড অসাধারন কাজে দিবে।
একটি সেম্পল লিটেরেচার মেট্রিক্সের লিঙ্ক কমেন্টে দিয়ে দিলাম। ধারনা নেওয়ার জন্য দেখে নিতে পারেন।
লেখক: তারিক সারোয়ার