আফগানদের বড় ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজে ফিরলো বাংলাদেশ
বদলা নিতে বেশি সময় নিলো না বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে এসেই ঘুরে দাঁড়ালো টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে হারের ধাক্কা সামলে সিরিজে ফেরাল সমতা। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে শারজাহর মাঠে তুলে নিলো বহুল আকাঙ্খিত জয়।
হারলেই হাতছাড়া সিরিজ, জিতলে বেঁচে থাকবে সম্ভাবনা; এমন সমীকরণ জেনেই শনিবার তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। যেখানে শেষ পর্যন্ত ৬৮ রানের জয় পেয়েছে টাইগারা।
শারজায় এদিন আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে তুলে ২৫২ রান করে বাংলাদেশ। অধিনায়ক নাজমুল ৭৬, জাকের আলি ৩৭* ও সৌম্য করেন ৩৫ রান। জবাবে নাসুম-মোস্তাফিজদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৪৩.৩ ওভারে ১৮৪ রানেই গুটিয়ে যায় আফগানরা।
এই জয়ে ‘অপয়া’ শারজার দোষ ঘোচালো টাইগাররা, ভাঙলো হারের বৃত্ত। টানা ৯ হারের পর যখন এক মাঠে টানা সবচেয়ে বেশি হারের লজ্জার রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে দল, তখনই মিললো মুক্তি। প্রথমবারের মতো জয়ের মুখ দেখলো শারজার এই মাঠে।
এই জয়ে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন নাসুম আহমেদ। ব্যাট হাতে ২৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসের পর বল হাতেও বাজিমাত করেছেন এক বছর পর দলে ফেরা এই স্পিনার। নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ৩ উইকেট।
প্রথম ম্যাচে আত্মসমর্পণের পর এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে হতো বাংলাদেশকে। সেই লক্ষ্যেই ইতিবাচক শুরু করেন তানজিদ তামিম। ইনিংস বড় করতে না পারলেও বড় কিছুর আশা দেখান তিনি। আফগান বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে ফেরার আগে ১৭ বলে করেন ২২ রান।
তাতে ৩.২ ওভারে ভাঙে সৌম্য সরকারের সাথে তার ২৮ রানের উদ্বোধনী জুটি। তবে এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে হাল ধরেন দলের। প্রথমে বুঝেশুনে খেললেও এরপর রান তুলছেন দলের চাওয়া অনুযায়ীই।
দু'জনের যুগলবন্দীতে যোগ হয় ৯২ বলে ৭১ রান। এরপর দল যখন তিন অঙ্কের ঘরে প্রবেশের অপেক্ষায়, তখনই ফিরেন সৌম্য। রশিদ খানের বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন তিনি, ১৮.৫ ওভারে আউট হন ৪৯ বলে ৩৫ রানে।
৯৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী মিরাজ মিলে কাঁধে নেন দলের দায়িত্ব। তবে এই সময়ে কমে আসে রানের গতি। এর মাঝেই ৩২.৪ ওভারে মিরাজের উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
৫৩ রানের জুটি ভেঙে ফেরেন মিরাজ৷ ৩৩ বলে ২২ রান করে রশিদ খানের শিকার হন তিনি। ততক্ষণে অবশ্য দেড় শ' পেরিয়েছে দলের সংগ্রহ। এরপর তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে শান্ত যোগ করেন ২২ রান।
এরপর হঠাৎ ব্যাটিং ধসে পড়ে বাংলাদেশ। নাঙ্গোলিয়া খারোতের তোপের মুখে পড়ে পরপর দুই ওভারে ৩ উইকেট হারায় টাইগাররা। তাতে ৩ উইকেটে ১৭৪ থেকে মুহূর্তেই ১৮৪ রানে ৬ উইকেটে পরিণত হয় দল।
৩৮ ওভার পর্যন্ত অবশ্য সব ঠিকই ছিল। থিতু হয়ে যাওয়া নাজমুল হোসেন শান্তর সাথে তাওহীদ হৃদয় ছিলেন মাঠে। তবে তখনই প্রথম আঘাত আনেন খারোতে, ফেরান হৃদয়কে। ১৬ বলে ১১ রানে আউট হন তিনি।
পরের ওভারে এসে বিপদজনক হয়ে উঠা বাংলাদেশ অধিনায়ককে ফেরান খারোতে। ১১৯ বলে ৭৬ রান করে মোহাম্মদ নাবিকে আউট করেন শান্ত। দুই বল পর অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে (২) ফেরান খারোতে। বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ।
১৮৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর অভিষিক্ত জাকের আলি অনিক ও নাসুম আহমেদের ব্যাটে লড়াই করার পুঁজি পায় বাংলাদেশ। নাসুম আহমেদ ২৪ বলে ২৫ রানে আউট হলেও জাকের শেষ বল পর্যন্ত খেলে আসেন।
শেষ বলে ছক্কা হাঁকানো জাকের অপরাজিত ছিলেন ২৭ বলে ৩৭ রানে। তাতে আড়াই শ' রানের মাইলফলক পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। খারোতে ৩, রশিদ খান ও গাজাফার নেন জোড়া উইকেট।
২৫৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৩.৩ ওভারে মাত্র ১৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। রাহমানুল্লাহ গুরবাজকে (২) ফেরান তাসকিন আহমেদ। তবে গলার কাঁটা হয়ে উঠেন সাদিকুল্লাহ আতাল ও রহমত শাহ।
দু'জনে গড়ে তোলেন পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি। ৫১ বলে ৩৯ রান করা আতালকে ফেরান নাসুম আহমেদ। ১৬.১ ওভারে ৭০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় আফগানরা। এরপর রহমত শাহের সাথে যোগ দেন হাশতুল্লাহ শাহিদি।
এই জুটি জমে উঠলেও রান আসছিলো খানিকটা ধীরে। তবে থিতু হয়ে উঠেছিলেম দু'জনেই। তবে ভয়ের কিছু হওয়ার আগেই এই জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজ। ২৯তম ওভারের শেষ বলে ফেরান শাহিদিকে। ৪০ বলে ১৭ করে আউট হন তিনি।
পরের ওভারে জোড়া আঘাত আসে আফগান শিবিরে। প্রথমে নাসুম আহমেদ আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে ফেরান রানের খাতা খোলার আগেই। এরপর ২৯.৫ ওভারে রান আউট হন থিতু হয়ে যাওয়া রহমত। ফেরার আগে করেন ৭৬ বলে ৫২ রান।
২৯.৫ ওভারে ১১৯ রানে ৫ উইকেট হারায় আফগানরা। যদিও তখনো গুলবাদিন নাইব ও মোহাম্মদ নাবি মিলে অবিস্মরণীয় কিছু করার চেষ্টা করছিলেন। তবে দু'জনে মিলে ৪১ বলে ৪৪ তুলতেই বাধ সাধেন শরিফুল। ২৬ রান করা নাইবকে ফেরান তিনি।
পরের ওভারেই নাবিকে (১৭) ফেরান মিরাজ। এরপর খারোতিকেও ফেরান তিনি। ৪১.১ ওভারে ১৮১ রানে ১ উইকেট হারায় আফগানরা। এরপর মোস্তাফিজ রাশিদ খানকে (১২) ফেরান ও নাসুম গাজাফারকে (১) ফিরিয়ে ইনিংসের ইতি টানেন।
নাসুম আহমেদ ৩, জোড়া উইকেট নেন মেহেদী মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান। একটা করে উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ।
এই জয়ে সিরিজে তাই এখন ১-১ সমতা। আগামী সোমবার সিরিজের শেষ ও তৃতীয় ম্যাচে একই মাঠে মুখোমুখি হবে দুই দল।।যেখানেই হবে সিরিজের নিষ্পত্তি।