মারায়ন তং বান্দরবান জেলার আলিকদম উপজেলার আবাসিক বাজার সংলগ্ন সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৬৬০ ফুট উচুতে অবস্থিত আদিবাসীদের প্রার্থনার স্থান। এর চুড়া থেকে সুর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত খুব সুন্দর ভাবে অবলোকন করা যায় তাই এটি সমসাময়িক কালে প্রকৃতি প্রেমী অভিযাত্রীদের এক অনন্য আকর্ষণ।
আমরা তিন অভিযাত্রী আমি নোমান আর তুষার। সবেমাত্র তাজিংডং থেকে ফিরে আসলাম আলিকদম। শরীরের ধকল কাটেনি পুরোপুরি। দুপুরের খাওয়ার পর হটাৎ সিদ্ধান্ত হলো আমরা আজ রাত মারায়ন তং এ কাটাচ্ছি। যেইভাবা সেই কাজ আমরা আসলাম আবাসিক বাজার।
তখন বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছিলো। যদিও সুর্যাস্ত দেখার জন্য সন্ধার আগেই পৌঁছাতে হয় সেখানে আমাদের থানচি থেকে আলিকদম পৌঁছাতে দেরি হয়ে গিয়েছিলো। আর দেরি না করে আবাসিক বাজার থেকে একটি তাবু নিয়ে নিলাম।
আনুমানিক বিকেল ৫ টায় আমারা মারায়ং তং এর উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করলাম এরই মধ্যে সন্ধ্যা নেমে এলো, পাহাড় বেয়ে উঠতে লাগলাম আমরা। সেখানে একদল ফিরতি অভিযাত্রীর দেখা পেলাম তারা সূর্যাস্ত দেখেই নেমে যাচ্ছে।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমরা হাটছিলাম। একটা আদিবাসী পাড়া অতিক্রম করলাম। আমি আর নোমান ভাবছিলাম কিছুটা জিরিয়ে নিবো কিন্তু তুষার নাছোড়বান্দা সে থামবে না কিছুতেই। এরই মধ্যে আমরা দুজন পিছিয়ে গেলাম কিন্তু আমাদের সাথে এসে জুটলো এক নতুন সঙ্গী সে আর কেউ নয় এক কালো পাহাড়ি কুকুর।
যাইহোক প্রায় ঘন্টা খানেক হাটার পর আমরা পৌঁছালাম মারায়ন তং এর চূড়ায়। সেখানে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছিলো কারণ সেরাতে আমরা ছাড়া আর কেউ সেখানে তাবু গাড়েনি। এরপর আমরা তাবু গাড়লাম। কিছুক্ষন জিড়িয়ে গল্পগুজব সেরে রাতের খাবার সেরে নিলাম যেটা আমরা এনেছিলাম।
কুকুরটা আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলো তখনও। দূরের পাহাড়ে জুম চাষের জন্যে আগুন লাগানো হয়েছিলো। আমরা পাহাড় থেকে সমতলের বাড়িঘরের দৃশ্য অবলোকন করছিলাম সেই মুহূর্তে একদল লোক আসে তারা আমাদের দেখে কৌতুহলী হয়ে পরে। কথাবার্তার মাধ্যমে জানতে পারলাম তারাও রাত কাটাতে এসেছে তবে খানেকটা নিচে।
তারা চলে যাওয়ার পর নোমান ঘুমিয়ে পড়লো আর আমি আর তুষার আগুন ধরালাম আর দেখতে পেলাম দূর পাহাড় থেকে কেউ চিৎকার করছে।কিছুক্ষণ পর আগুন নিভিয়ে শুয়ে পরলাম। ভোরে উঠে ফজরের নামাজ সেরে অপেক্ষা করতে লাগলাম সূর্যোদয় দেখার জন্য।
অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সূর্যোদয় উপভোগ করার পরে আমরা নামা শুরু করলাম আর পথেই আদিবাসী ছেলেদের থেকে গাছপাড়া তেতুল খেলাম আর ধীরেধীরে নেমে আসলাম। আর এভাবেই কেটে গেলো পাহাড়ে আরেকটি রাত।