ঢাকা   বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছুঁয়ে এলাম গ্রেট ওয়াল অব চায়না: পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি

ভ্রমণ

প্রকাশিত: ১২:৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ১২:৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ছুঁয়ে এলাম গ্রেট ওয়াল অব চায়না: পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি

চীনের মহাপ্রাচীর বা গ্রেট ওয়াল অব চায়না। মানুষের সৃষ্ট এই বিস্ময়কর ও সবচেয়ে বড় স্থাপত্যের কথা শুনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। চায়নায় যাকে ডাকা হয় ছাং ছং বা দীর্ঘ প্রাচীর নামে। এই দেয়াল নির্মাণ করার প্রকল্পটি পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল প্রকল্প হিসাবে ধরা হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামরিক অবকাঠামোও এটি। জনশ্রুতি আছে যে, চীনের এই প্রাচীরকে চাঁদ এমনকি মঙ্গলগ্রহ থেকেও দেখা যায়। গ্রেট ওয়াল অব চায়না বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি অংশ হওয়ার পাশাপাশি এটিকে চীনের জাতীয় প্রতীক হিসাবেও ধরা হয়। [caption id="attachment_9759" align="aligncenter" width="700"] ছবিঃ শুভ ও তার বন্ধুরা[/caption] ঋতুভেদে নিজেকে ভিন্নরূপে সাজায় গ্রেট ওয়াল। শীতকালে গ্রেট ওয়ালের কিছু অংশে তুষার পড়ে। গ্রেট ওয়ালের খাঁড়া সিঁড়ি পথ ভীষণ পিচ্ছিল ও বিপদজনক। তাই অনেক সাবধানে ও সময় নিয়ে নামতে হয় গ্রেট ওয়াল থেকে। পৃথিবীর এই আশ্চর্য ও দীর্ঘতম প্রাচীরের দৈর্ঘ্য ২১,১৯৬ কিমি। উচ্চতা প্রায় ১৫ থেকে ৩০ ফুট। চওড়া প্রায় ৩২ ফুট। কথিত আছে চীনের প্রাচীরের উপর দিয়ে একসাথে ১২টি ঘোড়া পাশাপাশি দৌঁড়ে যেতে পারতো। চীনের এই গ্রেট ওয়াল তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবেশী দেশ মঙ্গোলিয়ার যাযাবর দস্যুদের আক্রমণ থেকে চীনকে রক্ষা করা। লুটতরাজ করা ছিল তাদের জীবিকার প্রধান উংস। কেবল মঙ্গোলীয় শত্রুর হাত থেকে বাচাঁর জন্যই নয়, সীমান্ত এলাকা সুরক্ষা ও নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখাও এই প্রাচীর নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য। যিশুখ্রিষ্টের জন্মের আগে থেকেই শুরু হয় এই প্রাচীর নির্মাণের কাজ। খ্রীস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ২৮০০ বছর আগে এই মহাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চীনের প্রথম সম্রাট কিং সি হুয়াং প্রথমে এই প্রাচীর নির্মাণ শুরু করেন। পরবর্তীতে মিং সাম্রাজ্যের সময় ১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। পাহাড়ের চূড়ায় বা অনেক উচুঁতে দেয়ালটিতে নিয়মিত বিরতি দিয়ে পর্যবেক্ষণ চৌকি বা ঘর আছে যা অস্ত্র সংরক্ষণ, সেনাবাহিনীর আবাসন এবং বিপদসংকেত প্রদানে কাজে লাগতো। এসব ঘরে সৈনিকরা লুকিয়ে পাহাড়ায় থাকতো। সেই সাথে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। দেয়ালের উপরে প্রায় ২৫০০০ ওয়াচ টাওয়ার আছে। এই সকল ওয়াচ টাওয়ার থেকে সৈনিকরা শত্রুদের চলাফেরার উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতো। চুন,পাথর ও কাঠের ফ্রেমে কাদামাটি ভরে এবং পোড়ামাটির ইট দ্বারা গড়া হয়েছিল চীনের এই প্রাচীর। সেইযুগের হাতিয়ার বলতে তো ছিল শাবল, কোদাল, হাতুড়ি, বাটাল ও ছেনি এসব। সেসব হাতুড়ি দিয়ে পাহাড়ের উপর ইট-পাথর দিয়ে এই অসাধ্য সাধন করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক প্রাণ হারায়। ইতিহাসের কোথাও তাদের নাম লেখা নাই। চীনের এই মহাপ্রাচীরকে কল্পনা করা হয় এক বিশাল ড্রাগনের সাথে। শুরুর দিকে এই প্রাচীরকে দেয়া হয়েছে ড্রাগনের মাথার আকৃতি আর শেষের দিকে লেজের আকৃতি। শুধু পাহাড়ের উপর দিয়েই নয়, এই প্রাচীর গিয়েছে মরুভূমি ও নদীর উপর দিয়ে। নদীর উপর দিয়ে সেতুঁর মতো গিয়েছে এই প্রাচীর। আর এই প্রাচীরের ড্রাগনের লেজ নেমেছে সমুদ্রের পানিতে। নিজের দেশকে বাচাঁনোর জন্য কঠোর পরিশ্রম, মেধা আর মননে গড়ে উঠেছে এই ঐতিহাসিক গ্রেট ওয়াল যা দেশের প্রতি চীনাদের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।