নতুন নতুন জায়গা বা দেশ ভ্রমণ আমার অন্যতম একটি শখ। জার্মানিতে আসার পরে অল্প সময়েই ইউরোপের বেশ কিছু দেশের মাটি ছুঁয়ে দেখা হয়েছে। গ্রীসে ঘুরতে যাবো বলে আগে-ভাগেই এয়ার টিকেট, হোটেল বুকিং সহ সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখছিলাম। সেমিস্টার ফাইনাল শেষ আর ট্যুর শুরু!
চার দিনের ট্যুরে অনেক মজা করেছি আমরা। আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম গ্রীসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর থেসালোনিকি। গ্রীসের ওয়েদার, পরিবেশ, হোটেলের সার্ভিস, খানাপিনা সবই ভাল ছিল। বাজে অভিজ্ঞতা শুরু হল লাস্ট মোমেন্টে এয়ারপোর্টে! জানি না অতীতে কারো এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে কি না।
আমরা ফ্লাইটের বেশ কিছু সময় আগেই এয়ারপোর্টে চলে আসি এবং চেক ইন করে ভিতরে বসে থাকি। ফ্লাইটের ঠিক ৩০ মিনিট পূর্বে পুলিশের একটা টিম এলো। অনেককে চেক করলো, জেরা করলো। তেমন প্যাচায় নি।
আমাদের কাছে এসে পাসপোর্ট চাইলে আমরা পাসপোর্ট আর রেসিডেন্স কার্ড দিলাম। তারা একটা যন্ত্র দিয়ে নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করতেছে! সামথিং ইজ রং! একে একে সব পুলিশই আমাদের দুজনের পাসপোর্ট আর রেসিডেন্স কার্ড চেক করতেছে তো করতেছেই! কত কিছু করলো, কত জায়গায় কল দিল তার শেষ নেই!
প্রায় ১৫/২০ মিনিট পরে তারা আমাদেরকে জানালো যে আমাদের পাসপোর্টে সমস্যা আছে, তবে জার্মান রেসিডেন্স কার্ড ঠিক আছে! কি এক বিপদ!!
আমি সবিনয়ে জানতে চাইলাম যে পাসপোর্টে কি রকম সমস্যা আছে বলা যাবে? যদি সমস্যা থাকে তাইলে জার্মান সরকার রেসিডেন্স কার্ড দিলো ক্যাম্নে? তারা জানালো যে এরকম অনেক কেস আছে! আর এটা চেক করা যাদের ডিউটি!
যাইহোক ভাবলাম এখন ছেড়ে দিলেই বাঁচি! কিন্তু না! তারা বললো ব্যাগ নিয়ে আমাদের সাথে আসো। এইদিকে ফ্লাইটও ছাড়ার সময় হয়ে আসতেছে। মহা বিপদ! পরে পুলিশ বললো তোমরা এখানেই থাকো আমরা পাসপোর্ট নিয়ে যাচ্ছি, চেক করে আসতেছি। পাসপোর্ট নিয়ে চলে গেল! আমরা ভয়ে ভয়ে বসে আছি।
একটু পরে পাসপোর্ট নিয়ে এলো। জার্মানিতে থাকি আর জার্মান ভাষা জানি না কেন, কি করি, কই পড়ি, কই থাকি, বাপের নাম কি, এখানে কেন হ্যান ত্যান জেরা করতে করতে শেষে পাসপোর্ট দিল! হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। ধন্যবাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আসলে কি সমস্যা ছিল? বলতেছে পাসপোর্টের চিপে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে যা তোমাদের পাসপোর্টে নেই! আমি বললাম আমরা তো পাসপোর্টের এক্সপার্ট না, অথোরিটি যেভাবে দিছে আমরা সেভাবেই পেয়েছি।
যাহোক আমরা বোর্ডিং এর জন্য লাইনে দাঁড়াবো ঠিক এমন সময় আবারো পুলিশ এসে বলতেছে আবার পাসপোর্ট দাও। আর বিমান কর্তৃপক্ষকে বলে দিলো ডিলে করতে।
দীর্ঘ অনুসন্ধান করেও শেষ পর্যন্ত তারা কাঙ্খিত ডাটা পায় নি বলে জানালো। তবে আমাদের স্টুডেন্ট ডকুমেন্ট ও অন্যান্য সব পেপার্স কনসিডার করে ফ্লাইটে তুলে দিলো!
এতক্ষণে ৩৫ মিনিট ফ্লাইট ডিলে হয়ে গেছে! আমরা বিমানে উঠলাম। কিন্তু, আফসোস! বাংলাদেশি পাসপোর্টের জন্য এমন ভোগান্তি হবে জানতাম না! আর কষ্ট পেলাম যে, গ্রীসের পুলিশ দীর্ঘ সময় হয়রানি করেও একটা সরি পর্যন্ত বললো না!
জার্মানিতেও অনেক সময় পুলিশ চেক করেছে বাট তাদের ব্যবহার ছিল অমায়িক!
সুমন আকরাম
মাস্টার্স অধ্যায়নরত ছাত্র, বিএইচটি
বার্লিন, জার্মানি 🇩🇪